সুরমার ঘাটে ঘাটে ভাগাড়

পচা সবজি ও গৃহস্থালির ময়লা-আবর্জনা স্তূপ হয়ে আছে নদীর পাড়ে। স্তূপে প্লাস্টিকের খালি বোতল থেকে শুরু করে পলিথিন, কলার কাঁদিসহ পরিত্যক্ত নানা সামগ্রী পড়ে আছে। ময়লার স্তূপের পাশেই ঘাট। সেখানে আবর্জনার দুর্গন্ধের মধ্যেই গোসল করছেন স্থানীয় লোকজন।

সিলেট নগরের বুকে প্রবহমান সুরমা নদীর মেন্দিবাগ এলাকার মাছিমপুর ঘাটে গিয়ে দেখা গেছে এমন দৃশ্য। শুধু মাছিমপুরই নয়, নগরের ৯টি ঘাট ঘুরে একই রকম চিত্র পাওয়া গেছে। সুরমার ঘাটে ঘাটে ময়লা-আবর্জনা সয়লাব হয়ে রয়েছে।

মানবসৃষ্ট এসব ময়লা–আবর্জনা গিয়ে মিশছে সুরমার পানিতে। এতে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে চারপাশে, দূষিত হচ্ছে নদী। এতে ঘাট দিয়ে চলাচল করা মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সিলেট নগরে সুরমার ঘাটগুলো হচ্ছে নগরের মেন্দিবাগ এলাকার মাছিমপুর ঘাট, কালীঘাট, ঝালোপাড়া, কদমতলী, চাঁদনীঘাট, তোপখানাঘাট, কাজীরবাজার, শেখঘাট ও কানিশাইল ঘাট।

স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, মাছিমপুর, কালীঘাট, শেখঘাট ও কদমতলী এলাকার ঘাটগুলোতে ব্যবসায়ীরা পচা ফল, সবজি, মাছ ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের উচ্ছিষ্ট এবং পরিত্যক্ত ময়লা–আবর্জনা নদীতীরে ফেলে দূষণ করছেন। এসব এলাকায় দিনরাত সমানতালে প্রকাশ্যেই ময়লা–আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। কালীঘাট এলাকায় ব্যবসায়ীরা একটি শৌচাগার তৈরি করে সেটি নদীর সঙ্গে যুক্ত করে রেখেছেন, যাতে শৌচাগার থেকে সরাসরি মানববর্জ্য নদীতে গিয়ে মিশছে। সিটি করপোরেশন থেকে নজরদারি এবং ডাস্টবিন না থাকায় এমন দূষণ চলছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় লোকজন।

স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের ফেলা ময়লা-আবর্জনার স্তূপ জমেছে সুরমা নদীর পাড়ে। গতকাল সিলেটের কালীঘাট এলাকায়।  ছবি: প্রথম আলো
স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের ফেলা ময়লা-আবর্জনার স্তূপ জমেছে সুরমা নদীর পাড়ে। গতকাল সিলেটের কালীঘাট এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

ঘাটগুলো সরেজমিনে দেখা গেছে, কালীঘাটে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পণ্যের মোড়ক, পচা পেঁয়াজ, আলু, প্লাস্টিকের নানা সামগ্রী, হোটেল-রেস্তোরাঁরা উচ্ছিষ্ট ময়লা–আবর্জনার স্তূপ। পাশেই একটি শৌচাগার থেকে ময়লা পানি গড়িয়ে নাদীতে গিয়ে মিশছে। এতে ঘাটে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হচ্ছে। সুরমা নদী পার হয়ে কালীঘাটে ভিড়ছে নৌকা। এসব ময়লা–আবর্জনা পেরিয়ে নাক চেপে যাতায়াত করতে দেখা গেছে লোকজনকে।

কদমতলী ঘাটে পচা ফল, প্লাস্টিকের সামগ্রী ও ঝুড়ি ফেলে রাখতে দেখা গেছে। চাঁদনী ঘাট ও তোপখানা ঘাটে বিভিন্ন দোকানপাটের ময়লা–আবর্জনা, হোটেল-রেস্তোরাঁর আবর্জনা, খাবারের উচ্ছিষ্ট, সুপারির খোসা, কলার কাঁদি, প্লাস্টিকের সামগ্রীর ময়লার স্তূপ তৈরি হয়েছে। কাজীরবাজার এবং শেখ ঘাটে পচা সবজি এবং মাছের উচ্ছিষ্ট ফেলে দেওয়ায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এ ছাড়া শেখঘাটে বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে প্লাস্টিকের মোড়ক, পচা উচ্ছিষ্ট ঘাটের পাশে ফেলা হচ্ছে। এ ছাড়া ঘাটসংলগ্ন খোলা স্থানে প্রস্রাব-পায়খানা করায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। নগরের কানিশাইল ঘাটও বাজারের বিভিন্ন সামগ্রী উচ্ছিষ্ট পচা সবজিতে স্তূপ আকারে পরিণত হয়েছে। 

কালীঘাট এলাকার ব্যবসায়ী রতন রায় বলেন, বাজারে কোনো ডাস্টবিন নেই। সে জন্য ব্যবসায়ীরা ঘাটেই ময়লা ফেলছেন। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট ডাস্টবিন সরবরাহ কিংবা স্থান নির্ধারণ করে দিলে ব্যবসায়ীরা যত্রতত্র কেউ ময়লা ফেলতেন না। 

দক্ষিণ সুরমা এলাকার বাসিন্দা আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘প্রায় প্রতিদিনই দুই দফা কালীঘাটে নৌকায় করে যাতায়াত করি। ময়লা–আবর্জনার কারণে এ পথ দিয়ে যেতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কালীঘাট এলাকাটি ব্যবসায়ীদের প্রসিদ্ধ এলাকা। এ ঘাটের এমন অবস্থা দেখে মনে হয় দেখার মতো কেউ নেই। এটি যেমন সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের নজরদারি প্রয়োজন, তেমনি ব্যবসায়ীদেরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন।’

মাছিমপুর এলাকার বাসিন্দা সোহাগ আহমদ বলেন, মাছিমপুর ঘাটে এসব ময়লা–আবর্জনার স্তূপের পেছনে সবজি ব্যবসায়ীদের দায় রয়েছে। তাঁরা বাজারের উচ্ছিষ্ট পচা সবজিগুলো ঘাটের পাশেই ফেলে রাখেন। এগুলো ঘাটের পাশেই পচে দুর্গন্ধ ছড়ায়।

শেখঘাট এলাকার বাসিন্দা ইনজামামুল হক বলেন, কাজীরবাজারের মাছ ও সবজির ব্যবসায়ীরা নিজেদের উচ্ছিষ্ট নদীতে ফেলে দেন। সেই সঙ্গে শেখঘাটের বিভিন্ন ব্যবসায়ীও তাঁদের উচ্ছিষ্ট বিভিন্ন সামগ্রী নদীতে ফেলে এসব ময়লা–আবর্জনা সৃষ্টি করছেন।

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা হানিফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, যত্রতত্র ময়লা–আবর্জনা ফেলায় সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তারপরও ময়লা–আবর্জনা ফেলে ঘাটগুলো দূষিত করা হচ্ছে। ঘাট এলাকাগুলো পরিদর্শন করে চিহ্নিত করা হবে। পরে সেগুলো অপসারণের পাশাপাশি সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।