পরীক্ষার হলে ছাত্রলীগের হুমকির ভিডিও করায় শিক্ষকেরও শাস্তির সুপারিশ

চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট
ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে পরীক্ষার হলে গিয়ে দায়িত্বরত শিক্ষককে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের হুমকির প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। এ ছাড়া কমিটি হুমকি পাওয়া শিক্ষকেরও ‘দোষ’ খুঁজে পেয়েছে। কমিটি বাদী-বিবাদী উভয় পক্ষের শাস্তির সুপারিশ করেছে।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে তদন্ত কমিটি ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ বরাবর প্রতিবেদন জমা দেয়। কমিটির প্রধান ইনস্টিটিউটের উপাধ্যক্ষ স্বপন নাথ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাদী-বিবাদী উভয় পক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছি। আমাদের কাছে কিছু কিছু বিষয় শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে মনে হয়েছে। আমরা সেভাবেই সুপারিশ করেছি। সাক্ষ্যপ্রমাণের ওপর নির্ভর করে এই সুপারিশ করা হয়েছে।’

আরও পড়ুন

গত ৮ ফেব্রুয়ারি ইনস্টিটিউটের চতুর্থ পর্বের পরীক্ষা চলাকালে নকল করতে না দেওয়ায় তিন পরীক্ষার্থী এক ঘণ্টার মধ্যে উত্তরপত্র জমা দিয়ে বের হয়ে যান। তাঁরা হলেন মুহিতুল আজিম, মিফজাহুল আশরাফ ও মোশাররফ হোসেন। তাঁরা তিনজনই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তবে তাঁদের কোনো পদ-পদবি নেই।

কিছুক্ষণ পর তিন পরীক্ষার্থী ইনস্টিটিউটের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) শাহদাত হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে পরীক্ষার হলে এসে উত্তরপত্র ফেরত চান। এ সময় শাহদাতের সঙ্গে ছিলেন দুই ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী সাদমান সাকিব ও মো. কাউছার। উত্তরপত্র ফেরত দিতে তাঁরা শিক্ষক প্রকাশ সিকদারকে চাপ দেন। এ সময় প্রকাশ সিকদারকে গালাগাল করেন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা। তাঁকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন তাঁরা। কৌশলে এ ঘটনার ভিডিও চিত্র মুঠোফোনে ধারণ করেন প্রকাশ সিকদার। পরে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শহিদুল ইসলাম হলে উপস্থিত হয়ে তিন পরীক্ষার্থীকে উত্তরপত্র ফেরত দেন।

ঘটনার পরদিন উপাধ্যক্ষ স্বপন নাথকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন মাইনুল হুদা সিরাজী ও জাবেদ ইকবাল। কমিটি ২৬ জনের সাক্ষ্য নিয়ে ৫ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তদন্ত-সংশ্লিষ্ট একজন প্রথম আলোকে বলেন, ইনস্টিটিউটে ছাত্রলীগের একটি পক্ষ সক্রিয় রয়েছে। তারা বিভিন্ন সময় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে থাকে। ৮ ফেব্রুয়ারির ঘটনার ভিডিও চিত্র, সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ ও সাক্ষীদের সাক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট ছাত্রনেতার জড়িত থাকার বিষয়টি উঠে এসেছে।

শাস্তির সুপারিশ
সূত্র জানায়, শাহদাত, কাউছার ও সাদমানের বিরুদ্ধে ইনস্টিটিউটের ছাত্রসংসদ পরিচালনা নীতিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। এই নীতিমালায় সর্বোচ্চ শাস্তি ছাত্রসংসদ থেকে বহিষ্কার।

শাহদাত ছাত্রলীগ মনোনীত প্যানেল থেকে জিএস হন। তাঁর বিরুদ্ধে ২০২১ সালে আরেক শিক্ষক এম সি আরিফের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগ রয়েছে। কাউছার ও সাদমান ছাত্রসংসদের সদস্য নন। ফলে তাঁদের বিরুদ্ধে কীভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তা পরিষ্কার নয়।

উত্তরপত্র ফেরত নিয়ে পুনরায় পরীক্ষায় বসা তিন পরীক্ষার্থীর বিরুদ্ধে পরীক্ষা নীতিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে তাঁদের সংশ্লিষ্ট বিষয়ের পরীক্ষা বাতিল বা বহিষ্কারের শাস্তি হতে পারে বলে সূত্র জানিয়েছে।

পরীক্ষার হলে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের হুমকির ভিডিও মুঠোফোনে ধারণ করে শিক্ষক প্রকাশ সিকদার পরীক্ষা গ্রহণ নীতিমালার পরিপন্থী কাজ করেছেন বলে তদন্ত কমিটির কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। এ জন্য তাঁর বিরুদ্ধেও শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছে। সূত্র বলছে, পরীক্ষা নীতিমালা অনুযায়ী, পরীক্ষার দায়িত্ব থেকে সাময়িক অব্যাহতির শাস্তি হতে পারে তাঁর।

এ বিষয়ে শিক্ষক প্রকাশ সিকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘যদি মুঠোফোন না থাকত, তাহলে নেতাদের হুমকির ভিডিও চিত্র ধারণ করা যেত না। আর শিক্ষকেরা পরীক্ষার হলে ফোন নিয়ে গেলে তাঁর অপব্যবহার করেন না। বিভিন্ন সময় জরুরি প্রয়োজনে পরীক্ষা কমিটির সঙ্গে ফোনে কথা বলার দরকার পড়ে।’

জানতে চাইলে ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ মো. লুৎফর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদন পেয়েছি। প্রতিবেদন এখনো সিলগালা অবস্থায় আছে। পরে প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’