চট্টগ্রামে পদচারী সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়নি উদ্বোধনের তিন মাস পরও

চট্টগ্রাম নগরের জিইসি মোড়ে পদচারী-সেতুর নির্মাণকাজ উদ্বোধনের পর টিনের বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। এরপর আর কাজ এগোয়নি। গত বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায়ছবি: জুয়েল শীল

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী নগরের জিইসি মোড়ে পদচারী-সেতুর নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেছিলেন গত ১৩ ফেব্রুয়ারি। ঘটা করে উদ্বোধনের পর পার হয়েছে তিন মাস। কিন্তু এখনো পর্যন্ত নির্মাণকাজই শুরু হয়নি। এতে ব্যস্ততম মোড়টিতে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার করতে হচ্ছে পথচারীদের। সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, পদচারী-সেতু নির্মাণে নকশাসহ কিছু জটিলতা ছিল, তা দূর হয়েছে।

সেতুর নির্মাণকাজের জটিলতা দূর করতে গত বৃহস্পতিবার সকালে সিটি করপোরেশন, নগর পুলিশ ও জিইসি মোড়ের সেন্ট্রাল প্লাজার ব্যবসায়ীদের মধ্যে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে পদচারী-সেতুর নির্মাণকাজ নিয়ে জটিলতা নিরসন হয়।

সিটি করপোরেশনের স্থানীয় শুলকবহর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. মোরশেদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, পদচারী-সেতুর নকশা নিয়ে স্থানীয় লোকজনের আপত্তি ছিল। তাঁদের সঙ্গে বসে নকশা সংশোধন করা হয়েছে। এখন আর কোনো জটিলতা নেই। কাজ শুরু হয়ে যাবে।

এর আগে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষও (সিডিএ) এই স্থানে পদচারী-সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিয়ে ব্যর্থ হয়েছিল। নগরের মুরাদপুর থেকে লালখানবাজার পর্যন্ত নির্মিত আখতারুজ্জামান চৌধুরী উড়ালসড়ক প্রকল্পের আওতায় ২০১৯ সালে জিইসি মোড়ে পদচারী-সেতু নির্মাণ করতে চেয়েছিল সিডিএ। তবে পরে তা করা হয়নি।

এরপর সিটি করপোরেশন ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আওতায় বিমানবন্দর সড়কসহ বিভিন্ন সড়ক উন্নয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় নগরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোয় পদচারী-সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। এর একটি হচ্ছে জিইসি মোড়ের পদচারী-সেতু।

সিটি করপোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি জিইসি মোড়ের পদচারী-সেতুর নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। এই পদচারী-সেতুর চারটি ওঠা-নামার পথ থাকবে। এতে ব্যয় হবে ৫ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।

সরেজমিনে দেখা যায়, পদচারী–সেতুর জন্য টিনের ঘেরাও দেওয়া হয়েছে আখতারুজ্জামান চৌধুরী উড়ালসড়কের নিচে। তবে সেখানে কোনো যন্ত্রপাতি বা নির্মাণসামগ্রী নেই। প্রকল্প এলাকায়ও কোনো শ্রমিক বা দায়িত্বশীল কাউকে দেখা যায়নি।

চট্টগ্রাম নগরের জিইসি ব্যস্ততম মোড়গুলোর একটি। এটি চার রাস্তার মোড়। সিডিএ অ্যাভিনিউয়ের একটি অংশ গেছে ওয়াসা মোড় থেকে ২ নম্বর গেট হয়ে মুরাদপুরে। আরেকটি মুরাদপুর থেকে এসে লালখানবাজারের দিকে গেছে। এ ছাড়া জাকির হোসেন সড়ক এবং ও আর নিজাম সড়ক যুক্ত হয়েছে জিইসি মোড়ে এসে। এই কারণে এই মোড়ে সারাক্ষণ গাড়ির চাপ থাকে। বাস, ট্রাক, কারসহ বিভিন্ন ধরনের শত শত গাড়ি চলাচল করে এই মোড় দিয়ে।

জিইসি মোড়ে প্রতিদিন হাজারো মানুষ চলাচল করে। এই মোড়ের আশপাশে রয়েছে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়, ওমরগণি এমইএস কলেজ, ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজ। আছে বেসরকারি হাসপাতাল, কমিউনিটি সেন্টার, বিপণিবিতান। জিইসি এলাকায় রয়েছে আখতারুজ্জামান চৌধুরী উড়ালসড়কে ওঠা-নামার জন্য দুটি র‍্যাম্পও। এসব কারণে মোড়টিতে গাড়ির চাপ থাকে। গাড়ির চাপের কারণে যাত্রীদের সড়ক পারাপারে বেগ পেতে হয়। রাস্তা পারাপারের জন্য গাড়ি থামার অপেক্ষায় থাকতে হয়। আবার অনেকেই চলন্ত গাড়ি উপেক্ষা করে রাস্তা পার হন।

সরেজমিনে গেলে কথা হয় সড়ক পার হওয়ার অপেক্ষায় থাকা বিলকিস আক্তার নামের এক গৃহিণীর সঙ্গে। পারিবারিক কাজে তিনি চকবাজার যাবেন। কিন্তু সাত-আট মিনিট অপেক্ষা করার পর রাস্তা পার হন। তিনি বলেন, এই মোড়ে রাস্তা পার হতে অনেক বেশি ভয় লাগে। অনেক দ্রুতগতিতে গাড়ি চলে। কখন এর নিচে চাপা পড়েন, তা নিয়ে চিন্তায় থাকেন। যদি পদচারী–সেতু থাকত তাহলে সহজে রাস্তা পার হতে পারতেন।

সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আশিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, জিইসি মোড়ের পদচারী–সেতু নিয়ে সব জটিলতা দূর হয়েছে। আগামী সপ্তাহে পাইলিংয়ের কাজ শুরু হবে। পাঁচ থেকে ছয় মাসের মধ্যে পদচারী–সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে।