দিনে অন্তত দুজন শিক্ষার্থীর মৃত্যু হচ্ছে সড়কে

জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ—এই তিন মাসে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ২২৫ শিক্ষার্থী নিহত।

সড়ক দুর্ঘটনায় দুই সহপাঠীর মৃত্যুতে বিক্ষুব্ধ চুয়েটের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের সামনে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক গতকাল সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অবরোধ করে রাখেন। গতকাল বেলা একটায়ছবি: সৌরভ দাশ

দেশে গত তিন মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় যত মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তার ১৩ শতাংশই শিক্ষার্থী। সংখ্যার হিসাবে যা ২২৫ জন। অর্থাৎ গত তিন মাসে দিনে গড়ে দুজন শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে সড়কে।

সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা সংগঠন রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, গত জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ—এই তিন মাসে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১ হাজার ৬৯৯ জন। নিহত ব্যক্তিদের ১৩ দশমিক ২৪ শতাংশই শিক্ষার্থী।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে সাড়ে পাঁচ বছর আগে ২০১৮ সালে দেশকাঁপানো আন্দোলন করেছিলেন শিক্ষার্থীরা। তখন সরকারের দিক থেকে দুর্ঘটনা কমানো নিয়ে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর শিক্ষার্থীরা ঘরে ফিরেছিলেন। কিন্তু সড়ক নিরাপদ হয়নি।

আরও পড়ুন

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে সড়কে মৃত্যু হয় ৬ হাজার ৫২৪ জনের। এর মধ্যে শিক্ষার্থী ১ হাজার ৫৩ জন। অর্থাৎ গত বছর সড়কে যত মৃত্যু, তার ১৬ শতাংশই শিক্ষার্থী। এর আগের বছর ২০২২ সালে সড়কে ১ হাজার ২৩৭ জন শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়।

গত ৩১ মার্চ ময়মনসিংহের তারাকান্দায় মাইক্রোবাস ও বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত হয় এসএসসি পরীক্ষার্থী মাশুরা মোকাদ্দেস ও ছোট ভাই আনাছ আহনাফ। সেদিনের দুর্ঘটনার বিষয়ে মাশুরার বাবা মোকাদ্দেসুর রহমান গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা মাইক্রোবাসে ঢাকায় যাচ্ছিলেন। তাঁর ধারণা, মাইক্রোবাসের চালকের চোখে ঘুম ছিল। আর বাসের গতি অনেক বেশি ছিল।

সড়ক দুর্ঘটনায় সন্তানহারা বাবা মোকাদ্দেসুর রহমান বলেন, ‘সরকারের কাছে আমার আবেদন, কাদের হাতে গাড়ি দেওয়া হয়, এগুলো যেন দেখা হয়।’

আরও পড়ুন

পরিবহনবিশেষজ্ঞরা বলছেন, সড়ক নিরাপদ করার ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে নানা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও বাস্তবতা ভিন্ন। এমনকি অনেক ক্ষেত্রেই সরকারের উদ্যোগে উদাসীনতা দেখা যায়। সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে ও নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে কী করণীয়, তা সরকারের অজানা নয়। কিন্তু ব্যক্তি ও গোষ্ঠী স্বার্থের কারণে প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা বাস্তবায়নে সরকার যথেষ্ট উদ্যোগী নয়।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মো. হাদীউজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, কর্মক্ষম ব্যক্তি ও শিক্ষার্থীদের চলাচল বেশি, তাই সড়ক অব্যবস্থাপনার শিকারও তারা বেশি হচ্ছে। অন্যদিকে সঠিক প্রশিক্ষণ ছাড়াই যার-তার হাতে ভারী যানবাহন চলাচলের লাইসেন্স চলে যাচ্ছে। এর পেছনে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা কাজ করে।

অধ্যাপক মো. হাদীউজ্জামান বলেন, নতুন সড়ক বা পুরোনো সড়ক চওড়া করলেই সড়ক নিরাপদ হয় না। নিরাপদ সড়কের জন্য প্রয়োজন সঠিক নীতি গ্রহণ। আর এই নীতি বাস্তবায়নে দরকার রাজনৈতিক সদিচ্ছা।

আরও পড়ুন