বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী ফারদিন নূর (পরশ) হত্যা মামলায় পুলিশের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি আবেদন জমা দেওয়ার জন্য সময় চেয়েছেন ফারদিনের বাবা কাজী নূর উদ্দিন। আগামী ১৬ এপ্রিল পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন আদালত।

ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট শান্ত ইসলাম আজ বৃহস্পতিবার মামলাটির শুনানির পরবর্তী এই তারিখ নির্ধারণ করেন। প্রথম আলোকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন ফারদিনের বাবার আইনজীবী হেমায়েত উদ্দিন খান।

আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বুয়েট ছাত্র ফারদিন হত্যা মামলায় গত ৬ ফেব্রুয়ারি আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয় ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ফারদিন আত্মহত্যা করেছেন। ঘটনার সঙ্গে কোনো সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ায় চূড়ান্ত প্রতিবেদনে ফারদিনের বন্ধু আয়াতুল্লাহ বুশরাকে মামলা থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়।

ফারদিনের বাবার আইনজীবী হেমায়েত উদ্দিন খান আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফারদিন নূর আত্মহত্যা করেননি। পুলিশ যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে, তাতে বাদী (ফারদিনের বাবা) নারাজি দেবেন। নারাজি আবেদন দেওয়ার জন্য আজ আমরা সময় চেয়ে আদালতে লিখিত আবেদন করি। আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করেছেন।’

বুয়েট ক্যাম্পাসে নিজের আবাসিক হলে যাওয়ার কথা বলে গত বছরের ৪ নভেম্বর রাজধানীর ডেমরার কোনাপাড়ার বাসা থেকে বের হন ফারদিন। পরের দিন শনিবার সকালে তাঁর পরীক্ষা ছিল। তবে তিনি পরীক্ষায় অংশ নেননি। তাঁর মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

পরদিন ৫ নভেম্বর রামপুরা থানায় জিডি করেন ফারদিনের বাবা কাজী নূর উদ্দিন। ৭ নভেম্বর বিকেলে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ফারদিনের মরদেহ উদ্ধার করে নৌ পুলিশ। মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় ফারদিনের বাবা হত্যা মামলা করেন। মামলায় ছেলের বন্ধু আয়াতুল্লাহ বুশরাকে আসামি করেন তিনি। গ্রেপ্তার করে বুশরাকে পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়। গ্রেপ্তারের প্রায় তিন মাস পর গত ৮ জানুয়ারি বুশরা জামিনে মুক্তি পান।

ফারদিনের লাশ উদ্ধারের পর ঘটনার ছায়া তদন্ত করা র‍্যাবের পক্ষ থেকে প্রথমে বলা হয়েছিল, ফারদিনকে হত্যা করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে চনপাড়ার অপরাধী চক্র এই হত্যার সঙ্গে জড়িত।

অন্যদিকে গত ১৪ ডিসেম্বর মামলার তদন্তকারী সংস্থা ডিবি জানায়, ফারদিন আত্মহত্যা করেছেন। আর্থিক, পারিবারিক ও পড়াশোনা নিয়ে হতাশা থেকে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। একই দিন সংবাদ সম্মেলন করে র‍্যাব জানায়, ফারদিন ‘স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণ’ করেছেন।

উল্লেখ্য, ফারদিনের বাবা কাজী নূর উদ্দিন বিজনেস পত্রিকা ‘দ্য রিভারাইন’-এর সম্পাদক ও প্রকাশক। ফারদিনের মা ফারহানা ইয়াসমিন গৃহিণী। তাঁদের গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা উপজেলায়। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় ছিলেন ফারদিন। তাঁর মেজ ভাই আবদুল্লাহ নূর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন। আর ছোট ভাই তামিম নূর এসএসসি পাস করেছে।