সাবেক সংসদ সদস্য এইচ বি এম ইকবাল ও তাঁর এক ছেলের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা অনুমোদন

এইচ বি এম ইকবাল ও ইমরান ইকবালছবি: সংগৃহীত

কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ও প্রিমিয়ার ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান হেফজুল বারী মোহাম্মদ ইকবাল (এইচ বি এম ইকবাল) ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অনুসন্ধান শেষ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অনুসন্ধানের ভিত্তিতে সাবেক এই আওয়ামী লীগ নেতা ও তাঁর বড় ছেলে ইমরান ইকবালের বিরুদ্ধে মামলা করার অনুমোদন দিয়েছে কমিশন।

একই সঙ্গে ইকবালের স্ত্রী আঞ্জুমান আরা শিল্পী ও ছোট ছেলে মঈন ইকবাল অবৈধ সম্পদ অর্জন করে থাকতে পারেন—এমন সন্দেহে তাঁদের সম্পদ বিবরণী দাখিলের আদেশ জারির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, দুদক আইন অনুযায়ী তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা ও সম্পদ বিবরণী দাখিলের বিষয়ে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

দুদক জানায়, অনুসন্ধানে ইকবালের ৬২ কোটি টাকার এবং তাঁর বড় ছেলে ইমরান ইকবালের ৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের প্রমাণ পাওয়া গেছে। দুদকের সহকারী পরিচালক মো. ফেরদৌস রহমানের নেতৃত্বে একটি দল এ অনুসন্ধান পরিচালনা করে। এইচ বি এম ইকবাল সপ্তম জাতীয় নির্বাচনে ঢাকা-১০ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ২০২৪ সালের ১১ নভেম্বর বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ইকবাল, তাঁর স্ত্রী, তিন সন্তান ও জামাতার সব ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ওই সব হিসাব থেকে ২৮৭ কোটি টাকা উত্তোলনের চেষ্টা ব্যর্থ করে দেয় সংস্থাটি।

অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর আর্থিক খাতে সংস্কারের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন শুরু করে। সে সময় ইকবাল স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে ২০২৫ সালের ১২ জানুয়ারি প্রিমিয়ার ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেন। দুই দিন পর তাঁর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়। তাঁর ছেলে মঈন ইকবালও ভাইস চেয়ারম্যান পদ ছাড়েন। পরে ইকবালের আরেক ছেলে ইমরান ইকবাল চেয়ারম্যান হন। তবে একই বছরের ১৯ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংক ‘সুশাসনের ঘাটতি’ দেখিয়ে প্রিমিয়ার ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বিলুপ্ত করে। এতে ইকবাল পরিবারের নিয়ন্ত্রণও শেষ হয়।

আরও পড়ুন

দুদকের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ইকবালের নামে মোট ২৯৮ কোটি ৭০ লাখ টাকার সম্পদ রয়েছে। এর বিপরীতে দায় ১৩৯ কোটি টাকা। দায় বাদে নিট সম্পদ দাঁড়ায় প্রায় ১৬০ কোটি টাকা। ঘোষিত আয়ের তুলনায় তাঁর ৬২ কোটি টাকার সম্পদ জ্ঞাত আয়ের উৎসের বাইরে পাওয়া গেছে। এ কারণে দুদক আইন, ২০০৪-এর ২৭(১) ধারা অনুযায়ী ইকবালের বিরুদ্ধে মামলা করার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

ইমরান ইকবালের নামে ৪৫ কোটি টাকার সম্পদ পাওয়া গেছে। ঘোষিত আয়–ব্যয় বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৫ কোটি টাকার সম্পদের বৈধ উৎস নেই। এ কারণে তাঁর বিরুদ্ধেও পৃথক মামলার অনুমোদন দিয়েছে দুদক। এ ছাড়া অনুসন্ধানে ইকবালের স্ত্রী আঞ্জুমান আরা শিল্পীর নামে ১০ কোটি ৮২ লাখ টাকার সম্পদ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৩৭ লাখ টাকার সম্পদের উৎস অস্পষ্ট। তাই তাঁর সম্পদ বিবরণী চাওয়ার অনুমোদন দিয়েছে দুদক।

ইকবালের ছোট ছেলে মঈন ইকবালের নামেও ৪৭ কোটি টাকার সম্পদ পাওয়া গেছে। আয় ও ব্যয়ের হিসাবে ৩১ লাখ টাকার অসংগতি থাকায় তাঁর বিরুদ্ধেও সম্পদ বিবরণী দাখিলের আদেশ অনুমোদন দিয়েছে কমিশন।

আরও পড়ুন