নবায়নযোগ্য শক্তির সম্ভাবনা কতটা

জীবাশ্ম জ্বালানির পৃষ্ঠপোষক, ধারক ও বাহকদের রাহুমুক্ত হয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। আমাদের জাতীয় অস্তিত্বের স্বার্থেই তা করতে হবে।

বাসাবাড়িতে বিদ্যুৎ ব্যবহারের জন্য গ্রামাঞ্চলে এখন দেখা যায় বাড়ির ছাদে ছাদে সোলার প্যানেল
ছবি: প্রথম আলো

আগের লেখায় নবায়নযোগ্য শক্তির বৈশ্বিক পরিপ্রেক্ষিত নিয়ে লিখেছিলাম (১৮ অক্টোবর, প্রথম আলো)। এবার বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে নবায়নযোগ্য শক্তি বিষয়ে আলোচনা করব। নবায়নযোগ্য শক্তির সম্ভাবনার বিচারে বাংলাদেশের স্থান ৪১তম, এর প্রধান কারণ হলো অনভিজ্ঞতা ও জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সীমিত সম্ভাবনা। তবে বাংলাদেশে সৌরবিদ্যুতের উজ্জ্বল সম্ভাবনা আছে। এ ছাড়া বায়োগ্যাস, বায়োমাস, বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ ও বায়ুবিদ্যুতের সম্ভাবনাও কম নয়।

সৌরবিদ্যুতের সম্ভাবনা

বিষুবরেখার সন্নিকটে হওয়ায় বাংলাদেশ প্রতিদিন ৪.০-৬.৫ কিলোওয়াট আওয়ার/বর্গমিটার সৌর বিকিরণ লাভ করে। অনুমান করা হয় যে ছাদের ওপর, নদী, হাওর, পুকুরের মতো জলাশয়ে, চা–বাগানের অনাবাদি জমি ও ভূমিতে স্থাপিত সৌরবিদ্যুৎ সিস্টেম থেকে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ ২৪০ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা অর্জন করতে পারে। বাংলাদেশের খসড়া জাতীয় সৌরশক্তি রোডম্যাপে ২০৪১ সাল নাগাদ নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে ৪০ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার লক্ষ্যমাত্রার কথা বলা হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের এসম্যাপ প্রস্তুতকৃত বাংলাদেশের সৌরসম্পদের ম্যাপ থেকে দেখা যায় যে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে, উপকূলীয় দ্বীপসমূহ ও পার্বত্য এলাকায় সৌর বিকিরণ অধিক বিধায়, সেসব এলাকা সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য অধিকতর উপযোগী।

বায়ুবিদ্যুতের সম্ভাবনা

আগে ধারণা করা হতো, বাংলাদেশে বায়ুবিদ্যুতের তেমন সম্ভাবনা নেই। সম্প্রতি মার্কিন জাতীয় নবায়নযোগ্য শক্তি পরীক্ষাগার পরিচালিত মূল্যায়ন থেকে বাংলাদেশের বায়ুবিদ্যুৎ সম্ভাবনা অতীতের অনুমিত পরিমাণ থেকে বেশি বলে জানা যায়। দেশের উপকূলীয় অঞ্চলসমূহ এ জন্য বিশেষ উপযোগী। বাংলাদেশে বায়ুর সর্বোচ্চ গতিবেগ ৭.৭৫ মিলি/সেকেন্ড, যা দিয়ে ৩০ গিগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা অর্জন করা সম্ভব হতে পারে। সমীক্ষা থেকে দেখা যায়, দেশের মোট জমির ৪ শতাংশ ব্যবহার করে নবায়নযোগ্য শক্তির মাধ্যমে সম্পূর্ণ জ্বালানি চাহিদা মেটানো সম্ভব।

অন্যান্য নবায়নযোগ্য শক্তি

নদীর অবিচ্ছিন্ন ধারা ও জলপ্রপাত (রান অব দ্য রিভার) বা জলাধার সৃষ্টি—এই দুই প্রক্রিয়ায় জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। আমাদের দেশে রান অব দ্য রিভার ও জলপ্রপাত ব্যবহার করে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা সীমিত। আবার পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব, জটিল ও ব্যয়বহুল পুনর্বাসনপ্রক্রিয়ার কারণে নদীতে বাঁধ দিয়ে কাপ্তাইর মতো জলবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা সম্ভব নয়। তবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঝরনা (ক্ষুদ্র জলপ্রপাত) ব্যবহার করে ক্ষুদ্র জলবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের সুযোগ আছে। দেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলোতে সীমিত পরিমাণে ভূ-তাপীয় (জিও থার্মাল) জ্বালানি সম্ভাবনা আছে। ধারণা করা হয়, বায়োমাস থেকে বাংলাদেশের জ্বালানি চাহিদার প্রায় ৭০ শতাংশ মেটানো হয়ে থাকে। বায়োমাস ও বর্জ্য ব্যবহার করে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ জ্বালানি গ্যাস ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা আছে।

আরও পড়ুন

অন্য কোনো বিকল্প নেই

বাংলাদেশের জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে নবায়নযোগ্য শক্তিতে উত্তরণের তিনটি অনিবার্য কারণ আছে; এক. আমাদের প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুত ফুরিয়ে আসছে। জ্বালানি বিভাগের তথ্যের ভিত্তিতে ধারণা করা হচ্ছে যে বড় কোনো নতুন প্রাকৃতিক গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত না হলে (ক্ষীণ সম্ভাবনা) ও বর্তমান হারে ব্যবহার অব্যাহত থাকলে ২০২৫-২০৩১–এর মধ্যেই আমাদের প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুত ফুরিয়ে যাবে। দুই. জীবাশ্ম জ্বালানি আমদানির অর্থনৈতিক, আর্থিক ও রাজস্বের ওপর বিরূপ প্রভাব। জীবাশ্ম জ্বালানির মূল্যের অস্থিরতা, ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস, ভর্তুকি বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি করেছে। তা মোকাবিলা করতে গিয়ে সরকার বারবার এবং বিপুলভাবে জ্বালানি গ্যাস, তেল ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করেছে। এ ধরনের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ব্যবসা ও জীবনযাত্রার ব্যয়, মূল্যস্ফীতি ঘটিয়ে অর্থনৈতিক সংকট আরও ঘনীভূত করেছে। তিন. জলবায়ুর ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া।

এমনিতেই ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতির সম্মুখীন দেশগুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে অবস্থান করছে। ক্রমবর্ধমান হারে জীবাশ্ম জ্বালানি, তেল, গ্যাস, কয়লা পোড়ানোর ফলে এ সংকট আরও জটিল আকার ধারণ করেছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ তার মোট দেশজ উৎপাদনের ৭ শতাংশ হারাতে পারে।

আরও পড়ুন

বাংলাদেশের বর্তমান জ্বালানি পরিস্থিতি

এনার্জি ট্র্যাকার, এশিয়ার তথ্য অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল—প্রাকৃতিক গ্যাস ও কয়লার ওপর নির্ভরতা যথাক্রমে ৫৯ ও ১৫ শতাংশ। যৎসামান্য নবায়নযোগ্য শক্তি, সৌর, বায়ু ও জলবিদ্যুৎ উৎপাদন হলেও ২০১৫-২০২২ সালের মধ্যে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যতীত বিদ্যুৎ উৎপাদন ৩ থেকে ২ শতাংশে নেমে এসেছে। একই সময়ে এশিয়ায় এ গড় ২৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ফলে বাংলাদেশে সবুজ জ্বালানি উৎপাদনের হার (২ শতাংশ) দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বনিম্ন এবং তা প্রতিবেশী ভারত (২৩ শতাংশ) ও পাকিস্তান (৪৩ শতাংশ) থেকে অনেক পিছিয়ে আছে।

বর্তমান জ্বালানি খাতের সংকটের ব্যবচ্ছেদ

একের পর এক ভুল নীতি ও সিদ্ধান্ত আমাদের জ্বালানি খাতকে খাদের সামনে নিয়ে গেছে ও আমাদের জ্বালানি নিরাপত্তা অনিশ্চিত করেছে। এক. বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো ও শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনার জন্য চাহিদা, জ্বালানি ও অর্থের সংস্থানের কথা বিবেচনা না করেই বিপুলসংখ্যক বিদ্যুৎ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

২. বিদ্যুৎ প্রকল্প দরপত্রের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতাকে নির্বাসন দেওয়া হয়েছে দ্রুত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ ধারা), ২০১০ প্রবর্তনের মাধ্যমে। আইনবেত্তারা দাবি করেছেন, এই আইন একদিকে অসাংবিধানিক ও বেআইনি। এই আইনের অধীনে গৃহীত সিদ্ধান্ত আদালতে চ্যালেঞ্জ না করা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের ইনডেমনিটি প্রদানের মাধ্যমে উচ্চ আদালতের সাংবিধানিক ক্ষমতাকে সংকুচিত করা হয়েছে। আবার ইংলিশ ল, ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন আদালতের সিদ্ধান্ত থেকে দেখা যায় যে সরকারি অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা বাধ্যতামূলক। অপ্রয়োজনীয়, ক্ষতিকর ও ‘অসাংবিধানিক ও অবৈধ’—এ আইনের মেয়াদ কায়েমি স্বার্থে বারবার বাড়ানো হয়েছে।

প্রতিযোগিতা নির্বাসন দেওয়ার ফলে অতি উচ্চমূল্যে অদক্ষ ও প্রয়োজনের অতিরিক্ত বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এর ফলে দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে এবং বর্তমানে স্থাপিত বিদ্যুৎ ক্ষমতার প্রায় ৪০ শতাংশ অব্যবহৃত থাকছে। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রকে বসিয়ে রেখে ক্যাপাসিটি পেমেন্ট দিতে হচ্ছে। ফলে জ্বালানি খাতের সংকট সমাধান করতে গিয়ে অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি করা হয়েছে। আবার বিদ্যুৎ–সংকটেরও সমাধান হয়নি। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে জ্বালানির অভাবে ব্যাপক হারে লোডশেডিং অব্যাহত আছে।

৩. স্থানীয় জ্বালানি গ্যাসের মজুত ফুরানোর পরিপ্রেক্ষিতে ঘাটতি মেটানোর জন্য কয়লা ও এলএনজি আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফলে জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভরতা বেড়েছে। বিশ্ববাজারে কয়লা ও এলএনজির মূল্যের অস্থিরতা ও ক্রমাগত বৃদ্ধির ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস পেয়েছে।

৪. পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য বারবার ও উচ্চ হারে প্রাকৃতিক গ্যাস (১৪ থেকে ১৮০ শতাংশ) ও বিদ্যুতের মূল্য (১২ বার, ৫ থেকে ১৫ শতাংশ) বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে বিদ্যুতের চাহিদা ধ্বংস হয়েছে। শিল্পে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, ব্যবসার ব্যয় বেড়েছে ও মূল্যস্ফীতির কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়েছে।

. জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভরতার কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাড়ছে এবং ৯ কোটি মানুষ (জনসংখ্যার প্রায় ৫৬ শতাংশ) জলবায়ু উদ্বাস্তু হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।

আরও পড়ুন

নবায়নযোগ্য শক্তিতে উত্তরণের লাভ

জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে নবায়নযোগ্য শক্তিতে উত্তরণের ফলে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, আর্থিক সাশ্রয়, জনস্বাস্থ্যের ওপর অনুকূল প্রভাব, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, ভর্তুকি হ্রাস প্রভৃতি সুবিধা রয়েছে। কেবল দুই গিগাওয়াট নবায়নযোগ্য শক্তি স্থাপন করা হলে বছরে জ্বালানি আমদানি বাবদ ১.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সাশ্রয় হবে। হিসাব করে দেখা গেছে, মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা অনুযায়ী সৌরশক্তির প্রসার ঘটলে ২০২২-২৪ সালের মধ্যে এলএনজির চাহিদা ২৫ শতাংশ কমবে এবং এতে ২.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পর্যন্ত সাশ্রয় হতে পারে।

একমাত্র সাফল্য ইডকলের নবায়নযোগ্য শক্তি কর্মসূচি

নবায়নযোগ্য শক্তি বাস্তবায়নে হতাশার মাঝে আশার ক্ষীণ আলো হচ্ছে ইডকলের নবায়নযোগ্য শক্তি কর্মসূচি। ইডকল নির্ধারিত সময়ের আড়াই বছর আগে বরাদ্দ অপেক্ষা ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার কমে ৫০ হাজার সোলার হোম সিস্টেম অর্থায়ন ও স্থাপন করে সবাইকে চমকে দেয়। বিশ্বের সবচেয়ে সফল এ সোলার হোম সিস্টেম প্রকল্পের অধীনে বিদ্যুৎ–সুবিধা নেই এমন বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ৪.১৩ মিলিয়ন হোম সিস্টেম স্থাপন করা হয়। এর মাধ্যমে প্রায় দুই কোটি মানুষ মৌলিক বিদ্যুৎ–সুবিধা লাভ করে। সৌরবিদ্যুৎ ছাড়াও ইডকল ৬৭ হাজার বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট, ৯টি বায়োগ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প ও ৪.১৫ মিলিয়ন উন্নত চুলা ইডকলের অর্থায়নের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করেছে। নবায়নযোগ্য শক্তি প্রকল্প ও জ্বালানি ব্যবহারে দক্ষতা বৃদ্ধির প্রকল্পসমূহে ইডকলের মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ২.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, কে এফ ডব্লিউ, জাইকা প্রভৃতি সংস্থা সরকারের মাধ্যমে ইডকলকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে।

ইডকলের সাফল্যের কারণ

ইডকলের সাফল্যের পেছনের উল্লেখযোগ্য কারণগুলোর মধ্যে সযত্ন পরিকল্পনা, প্রাতিষ্ঠানিক স্বচ্ছতা, অংশীজনদের সহযোগিতা, সহযোগিতার আইনি কাঠামো, আর্থিক প্রকৌশল, ব্যাপক প্রচার, সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ, সরকারি সহায়তা ও অনুকূল পরিবেশ অন্যতম। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল দূর পল্লি অঞ্চলে ন্যূনতম বিদ্যুতের বুভুক্ষাকে ইডকল মেটাতে সক্ষম হয়েছিল।

কথাকে কাজে রূপান্তর করতে কী করতে হবে

বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য শক্তির সম্ভাবনা ও এর অনিবার্যতা সম্পর্কে ওপরে বলা হয়েছে। কিন্তু কীভাবে এটা বাস্তবায়ন করতে হবে?

১. মনে রাখতে হবে নবায়নযোগ্য শক্তিই আদিকাল থেকে ব্যবহৃত জ্বালানি এবং মূল জ্বালানি; বরং জীবাশ্ম জ্বালানিকে ক্ষণিকের ও বিকল্প জ্বালানি ভাবতে হবে। ২. বিশ্বব্যাপী ও দেশে জীবাশ্ম জ্বালানি ফুরিয়ে যাচ্ছে, এর মূল্যের অস্থিরতা ও ঊর্ধ্বগামিতা বিষয়ে জনগণকে সচেতন করতে হবে। ৩. সবুজ ও জলবায়ু সহিষ্ণুতাকে আমাদের উন্নয়ন পরিকল্পনার কেন্দ্রে স্থান দিতে হবে। ৪. সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। দ্রুত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ ধারা), ২০১০–এর মতো প্রতিযোগিতাবিরোধী, ‘অসাংবিধানিক ও বেআইনি’ আইন বাতিল করতে হবে, এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের আইন প্রণয়নে বিরত থাকতে হবে। সব সরকারি ব্যয়ের ক্ষেত্রে অবাধ ও উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে। ৫. কয়লা ও এলএনজি আমদানি হ্রাস করতে হবে এবং এসব জ্বালানিভিত্তিক প্রকল্প থেকে সরে আসতে হবে। ৬. বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণের সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানসমূহকে পুনর্বিন্যাস করে নবায়নযোগ্য শক্তিমুখী করতে হবে। ৭. নবায়নযোগ্য শক্তি প্রসারে ইডকল, বিভিন্ন দেশের, বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশগুলোর অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে হবে। ৮. জনগণকে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করার জন্য নেট মিটারিং, ফিড-ইন-ট্যারিফ ও কার্বন ক্রেডিটের মতো প্রণোদনা দিতে হবে। ৯. সর্বোপরি জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে উত্তরণের একটি সময়সূচি নির্ধারণ করতে হবে এবং বছরওয়ারি জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভরতা হ্রাসের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে। এ জন্য বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য শক্তির সম্ভাবনাগুলোর একটি বাস্তবভিত্তিক প্রাক্কলন দাঁড় করাতে হবে এবং তার ভিত্তিতে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে।

জীবাশ্ম জ্বালানির পৃষ্ঠপোষক, ধারক ও বাহকদের রাহুমুক্ত হয়ে ওপরের কাজগুলো করা কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। আমাদের জাতীয় অস্তিত্বের স্বার্থেই তা করতে হবে।

  • মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান অর্থনীতিবিদ ও সাবেক সচিব