কালাজ্বর শনাক্তে নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবনের দাবি ঢাবির অধ্যাপকদের

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান
ছবি: প্রথম আলো

প্রাণঘাতী রোগ কালাজ্বর শনাক্তের দ্রুত ও কার্যকর নতুন একটি পদ্ধতি উদ্ভাবনের দাবি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক।

গবেষক দলের প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ মনজুরুল করিম বলেছেন, গতানুগতিক পদ্ধতিতে নমুনা সংগ্রহ থেকে কালাজ্বর শনাক্তের ফলাফল পেতে সাত দিন লেগে যায়। তবে তাঁদের উদ্ভাবিত নতুন পদ্ধতিতে নমুনা সংগ্রহের পর মাত্র তিন ঘণ্টার মধ্যে রিপোর্ট (ফলাফল) পাওয়া যাবে। এ পদ্ধতিতে প্রস্রাবের নমুনা পরীক্ষা করা হয়।

আজ সোমবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবদুল মতিন চৌধুরী ভার্চ্যুয়াল শ্রেণিকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ উদ্ভাবনের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন অধ্যাপক মুহাম্মদ মনজুরুল করিম। উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান আনোয়ারা বেগম, প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে গবেষক দলের প্রধান বলেন, কালাজ্বর গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের একটি উপেক্ষিত রোগ। বিশ্বের ৬০টির বেশি দেশে কালাজ্বরের প্রকোপ আছে। এ রোগের সংক্রমণ এতটাই গুরুতর হয়ে থাকে যে চিকিৎসা করানো না হলে এতে মৃত্যু ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।

গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ মনজুরুল করিম
ছবি সংগৃহীত

গবেষক দলের প্রধান বলেন, আগে এ রোগ নির্ণয়ে রক্তের ইমিউনোক্রোমাটোগ্রাফিক পরীক্ষা এবং অস্থিমজ্জা, যকৃৎ, প্লীহা ও লিম্ফ নোডের টিস্যু অণুবীক্ষণ যন্ত্রের মাধ্যমে পরীক্ষা করা হতো। প্রথমটিতে রোগনির্ণয়ে নির্দিষ্টতা কম, অন্যটিতে টিস্যু সংগ্রহের সময় মারাত্মক রক্তক্ষরণের ঝুঁকি আছে। উদ্ভাবিত নতুন পদ্ধতিটিতে উল্লেখযোগ্য সংবেদনশীলতা ও নির্দিষ্টতা পাওয়া গেছে। কালাজ্বর শনাক্তে প্রস্রাবের নমুনা ব্যবহার ভারতীয় উপমহাদেশে এই প্রথম করা হলো। গবেষণার ফলাফল বিশ্বখ্যাত পিএলওএস গ্লোবাল পাবলিক হেলথ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। দেশ ও দেশের বাইরে কালাজ্বর নির্মূলে এ গবেষণা উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

অধ্যাপক মুহাম্মদ মনজুরুল করিম বলেন, তাঁদের উদ্ভাবিত রিয়েল টাইম পিসিআরভিত্তিক এই মলিকুলার ডায়াগনস্টিক পদ্ধতিটি সম্পূর্ণ নির্ভুল ও নিখুঁতভাবে কালাজ্বর শনাক্তকরণের একটি রোগীবান্ধব পদ্ধতি। এ পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে দ্রুততার সঙ্গে কালাজ্বর শনাক্ত করা সম্ভব, যা রোগীর দ্রুত চিকিৎসা ও রোগ নিরাময়ের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এ পদ্ধতিতে প্যাথলজিস্টদের কাজের চাপ কমবে। এ পদ্ধতির ব্যবহার বাংলাদেশকে কালাজ্বর নির্মূলের দিকে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে।

প্রস্রাবের নমুনা ব্যবহার করে এ পদ্ধতিতে যে উল্লেখযোগ্য সংবেদনশীলতা ও নির্দিষ্টতা পাওয়া গেছে, তা রক্ত বা আরও জটিল নমুনা যেমন অস্থিমজ্জা বা প্লীহার নমুনাভিত্তিক কালাজ্বর নির্ণয়পদ্ধতিকে প্রতিস্থাপন করতে পারবে বলে জানান মনজুরুল করিম।

আরও পড়ুন

তিনি বলেন, উদ্ভাবিত নতুন পদ্ধতিতে নমুনা সংগ্রহের পর মাত্র তিন ঘণ্টার মধ্যেই রিপোর্ট (ফলাফল) পাওয়া যাবে। আগে সাত দিন লেগে যেত। গবেষণাটি শেষ করতে খরচ হয়েছে সাত লাখ টাকা, সময় লেগেছে সাত বছর। গবেষণার জন্য ৮ থেকে ৮৫ বছর বয়সী রোগীদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল।

নতুন উদ্ভাবন প্রসঙ্গে উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান বলেন, নিঃসন্দেহে এটি একটি ভালো উদ্ভাবন। ভবিষ্যতে এ গবেষণা যেন প্রান্তিক পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে পৌঁছায়, সেটি দেখা প্রশাসনের দায়িত্ব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসন সেই কাজ করবে।