২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে শাহবাগ ছাড়ল ইনকিলাব মঞ্চ
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শহীদ শরিফ ওসমান বিন হাদির হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে অগ্রগতি জানাতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) খোদা বখস চৌধুরীকে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়ে (আলটিমেটাম) শাহবাগের সমাবেশ শেষ হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে জবাব দিতে না পারলে তাঁদের পদত্যাগ দাবি করেছে ইনকিলাব মঞ্চ।
আজ শনিবার বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে শাহবাগ মোড়ে জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভের সামনে এই আলটিমেটাম দিয়ে কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করেন ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল জাবের। এর আগে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় ওসমান হাদির জানাজার পর শাহবাগে এই সমাবেশ শুরু হয়েছিল। সমাবেশের কারণে শাহবাগের সড়ক দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
সমাবেশে ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবার’, ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’, ‘আমরা সবাই হাদি হব, গুলির মুখে কথা কব’, ‘বাকশালিদের আস্তানা, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘দালালি আর করিস না, পিঠের চামড়া থাকবে না’ প্রভৃতি স্লোগান দেওয়া হয়। বিকেলে শাহবাগের সড়কে আসরের নামাজ আদায় করেন বিক্ষোভকারীরা।
পরে বিকেল সোয়া পাঁচটায় সমাবেশের সমাপনী বক্তব্যে ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল জাবের দুটি দাবি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা (জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী) ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (খোদা বখস চৌধুরী) জনতার সামনে এসে বলতে হবে, গত এক সপ্তাহে তাঁরা কতটুকু এগিয়েছেন। এর জবাব দিতে না পারলে তাঁকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে। সিভিল-মিলিটারি ইন্টেলিজেন্সের (সামরিক-বেসামরিক গোয়েন্দা) মধ্যে ঘাপটি মেরে বসে থাকা আওয়ামী সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করুন।’
বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব বলেন, ‘আমরা সার্বক্ষণিক এখানে থাকব। কিন্তু আপনাদের একটু রেস্ট (বিশ্রাম) দিতে চাই। আপনারা আজকের জন্য বাসায় যান। আগামীকাল বিকেল সোয়া পাঁচটার মধ্যে যদি সরকারের পক্ষ থেকে কোনো জবাব না আসে, আমরা আবার এখানে আসব। অনেক ছাড় দিয়েছি, আর ছাড় দেব না।’
শান্ত থাকার আহ্বান
এর আগে সমাবেশে ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল জাবের বলেন, ‘নির্বাচন বাধাগ্রস্তের ষড়যন্ত্র রয়েছে। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ষড়যন্ত্র হচ্ছে। তারা চাইছে ওসমান হাদি যে লড়াইটা শুরু করেছিলেন, সেটা যেন কোনোভাবেই ফোকাসে না থাকে। এ জন্য দেখবেন বিভিন্ন লোক বিভিন্ন জায়গায় স্যাবোটাজ (নাশকতা) করা শুরু করে দিয়েছে। আমরা কি তাদের সেই সুযোগ দেব? আমাদের প্রথম দাবি হচ্ছে খুনিদের গ্রেপ্তার করা। এরপর সব আলাপ। আলাপ শুরুই হবে খুনিকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে। এর আগে কোনো আলাপ চলবে না।’
দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সবাইকে শান্ত থাকতে হবে উল্লেখ করে আবদুল্লাহ আল জাবের বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে আর দিল্লির কাছে বর্গা দেওয়া চলবে না। আমরা দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও স্থিতিশীলতায় বিশ্বাস করি। কেউ যাতে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে, সে জন্য সবাইকে ইনকিলাব মঞ্চের একেকজন কর্মী হয়ে যেতে হবে।’
আবদুল্লাহ আল জাবের কর্মসূচি সমাপ্ত ঘোষণার পরও অনেকে শাহবাগের সড়কে থেকে যান। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে এই মোড় দিয়ে সীমিত পরিসরে যান চলাচল শুরু হয়। সন্ধ্যা ছয়টায় বিক্ষোভকারীরা সরে গেলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।