সংরক্ষিত বন ডুবিয়ে প্রভাবশালীদের হ্রদ, মাছ চাষ 

পাহাড়ি ছড়ায় বাঁধ দিয়ে প্রভাবশালীরা ডুবিয়ে দিয়েছেন আড়াই হাজার   একর সংরক্ষিত বন। বন বিভাগ জানে, কিন্তু ব্যবস্থা নেয়নি। 

বনের জায়গা দখল করে এভাবে বাঁধ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে হ্রদ। এতে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি হাতির চলাচলে বাধার সৃষ্টি হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বড়হাতিয়া ও সাতকানিয়া উপজেলার সোনাকানিয়া ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকায় হ্রদের একাংশছবি: সৌরভ দাশ

চট্টগ্রামে একটি বনের প্রায় আড়াই হাজার একর বনভূমি ডুবিয়ে কৃত্রিম হ্রদ তৈরি করেছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। সেই হ্রদে করা হচ্ছে মাছ চাষ।

বনটি চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বড়হাতিয়া এবং সাতকানিয়া উপজেলার সোনাকানিয়া ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকায়। এটি বড়হাতিয়া বন নামে পরিচিত। এই বনের একটি অংশ সংরক্ষিত, আরেকাংশ রক্ষিত। 

সংরক্ষিত বনে হ্রদ তৈরি তো দূরের কথা, সেখানে প্রবেশই নিষিদ্ধ। আর রক্ষিত বনে অনুমতি সাপেক্ষে প্রবেশ করা যায়। বড়হাতিয়া বনের যে জায়গায় হ্রদ তৈরি করা হয়েছে, তা সংরক্ষিত ও রক্ষিত দুই অংশের মধ্যেই পড়েছে। 

হ্রদটি তৈরি করা হয়েছে বনের সোনাকানিয়া নামের একটি ছড়ায় বাঁধ দিয়ে। বাঁধের দৈর্ঘ্য ২০০ ফুটের মতো। প্রস্থ ২০ ফুট ও উচ্চতা ১০০ ফুট। 

বাঁধ ভাঙার জন্য আমাদের সামর্থ্যের মধ্যে সব ধরনের চেষ্টা করেছি। কিন্তু বাঁধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা প্রভাবশালী হওয়ার কারণে সফল হইনি। অভিযোগের পর তদন্তে সত্যতা পেয়ে সংশ্লিষ্ট বিট কর্মকর্তা মামলার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কিন্তু তৎকালীন এমপি মহোদয়ের হস্তক্ষেপে তখন মামলা করা হয়নি।’ 
দেলোয়ার হোসেন, চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক

বন বিভাগ বলছে, হ্রদ তৈরির কারণে গামারি, সেগুন, চিকরাশি, অর্জুনসহ বিভিন্ন প্রজাতির ছোট-বড় প্রায় পাঁচ লাখ গাছ মারা গেছে। ডুবে যাওয়া জায়গার মধ্যে বন্য হাতির চলাচলের পথ ছিল। খ্যাঁকশিয়াল, শজারু, বন্য শূকর, বনমোরগ, ময়ূর, গুইসাপ, অজগরসহ বিভিন্ন বন্য প্রাণী এবং নানা প্রজাতির প্রাণী বাস করত সেখানে। 

বন বিভাগ ও উপজেলা কৃষি কার্যালয় জানিয়েছে, ২০২১ সালের জানুয়ারিতে মাটির বাঁধটি নির্মাণ শুরু হয়। শেষ হয় ওই বছরের মার্চে। এরপর থেকেই চলছে মাছ চাষ। কৃষকেরা বলছেন, বাঁধ দেওয়ার ফলে ছড়া বন্ধ হয়ে গেছে। এতে লোহাগড়া ও সাতকানিয়ার ৪ হাজার ২৫৫ একর জমির চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে কৃষকেরা শুরু থেকেই সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করে এলেও প্রশাসন ব্যবস্থা নেয়নি। 

অবশ্য বন বিভাগের দাবি, তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পর আইনি প্রক্রিয়া শুরু করলেও সদ্য সাবেক স্থানীয় সংসদ সদস্য (চট্টগ্রাম-১৫) আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দীন নদভীর কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। 

কৃষকদের অভিযোগ, বাঁধ নির্মাণ ও হ্রদ তৈরিতে জড়িত ব্যক্তিরা ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তাঁরা নেজামুদ্দীন নদভীর একান্ত সচিব ও জেলা পরিষদের সদস্য এরফানুল করিমের ঘনিষ্ঠ। 

সোনাইছড়ি ছড়া পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সভাপতি শামসুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ১৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছি। তবে বাঁধ নির্মাণ থেকে শুরু করে হ্রদ পরিচালনা করেন মূলত দুজন—মো. নাছির উদ্দিন ও মনজুর আলম। তাঁরা সাবেক এমপির ঘনিষ্ঠ হওয়ায় কেউ কিছু করার সাহস পায়নি এত দিন।’ 

বন বিভাগ বলছে, হ্রদ তৈরির কারণে গামারি, সেগুন, চিকরাশি, অর্জুনসহ বিভিন্ন প্রজাতির ছোট-বড় প্রায় পাঁচ লাখ গাছ মারা গেছে। ডুবে যাওয়া জায়গার মধ্যে বন্য হাতির চলাচলের পথ ছিল। খ্যাঁকশিয়াল, শজারু, বন্য শূকর, বনমোরগ, ময়ূর, গুইসাপ, অজগরসহ বিভিন্ন বন্য প্রাণী এবং নানা প্রজাতির প্রাণী বাস করত সেখানে। 

সরেজমিনে একদিন

বন অধিদপ্তরের বার্ষিক প্রতিবেদনে (২০২২-২৩) দেওয়া তথ্য বলছে, চট্টগ্রাম অঞ্চলের সংরক্ষিত বনগুলোকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয় ব্রিটিশ শাসনামলে। দেশে এখন প্রায় ৩৩ লাখ ১১ হাজার একর সংরক্ষিত ও ১১ লাখ ৭৩ হাজার একর রক্ষিত বন রয়েছে, যার মধ্যে বড়হাতিয়া বনটিও পড়েছে। 

চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলা সদর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে সাত কিলোমিটার দক্ষিণে চুনতি বাজার। সেখান থেকে ছয় কিলোমিটার পাকা সড়ক, তিন কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক এবং এক কিলোমিটার সমতল ও পাহাড়ি পথে হেঁটে যাওয়ার পর কৃত্রিম হ্রদটির দেখা পাওয়া যায়। সেটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘ন্যাচারাল লেক’।

সরেজমিনে গত বৃহস্পতিবার দেখা যায়, হ্রদের পাশে একটি টিনের ঘর। কিন্তু কাউকে পাওয়া যায়নি। শীত মৌসুমে পানি কমেছে। এ কারণে হ্রদের ভেতর মরা গাছের ডালপালা দেখা যাচ্ছে। হ্রদের আশপাশে বেশ কিছু পাহাড় কাটা হয়েছে, সে চিহ্ন স্পষ্ট।

বনের আশপাশের এলাকার বাসিন্দারা বলেন, হ্রদটিতে শুষ্ক মৌসুমে পানির গভীরতা থাকে ৪৫ ফুটের মতো। তবে বর্ষায় গভীরতা বেড়ে প্রায় ৬০ ফুট পর্যন্ত দাঁড়ায়। সেখানে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ করা হয়। হ্রদে নিয়মিত টিকিট কেনার বিনিময়ে বড়শি দিয়ে মাছ ধরার সুযোগ দেওয়া হয়। একেক জনের কাছ থেকে নেওয়া হয় তিন থেকে চার হাজার টাকা। পর্যটকদের কাছে ভাড়া দেওয়ার জন্য দুটি নৌকা রয়েছে। দেখা গেল, নৌকা দুটি ঘাটে বাঁধা। 

স্থানীয় সূত্র বলছে, হ্রদ তৈরির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা মূলত সেখানে একটি বড় পর্যটনকেন্দ্র করার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন।

সাতকানিয়ার সোনাকানিয়া ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকার যে স্থানে বাঁধ দেওয়া হয়েছে, সেখান থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে লোহাগাড়ার জঙ্গল বড়হাতিয়ার পিরিলিয়া নামের পাহাড়ি ঝরনা থেকে ছড়াটির উৎপত্তি। ফলে বাঁধ দেওয়ায় পাহাড়ের পাদদেশে পানি জমে হ্রদের সৃষ্টি হয়, যেখানে ছিল ঘন বন। ছড়াটি বাঁধ থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে গিয়ে সাতকানিয়ার ডলু নদে মিশেছে।

আরও পড়ুন

কারা জড়িত

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (৭ জানুয়ারি ভোট গ্রহণ) স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল মোতালেবের কাছে হেরে যান নৌকার প্রার্থী আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী। এর পাঁচ দিন পর গত ১২ জানুয়ারি স্থানীয় কৃষকেরা ছড়ায় দেওয়া বাঁধটি কাটার চেষ্টা করেন। তখন বিষয়টি সামনে আসে। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে বনে হ্রদ তৈরির বিষয়ে বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দেন জয়নাল আবেদীন নামের এক ব্যক্তি। অভিযোগটি তদন্ত করতে দায়িত্ব দেওয়া হয় চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের (পদুয়া) সহকারী বন সংরক্ষক মো. দেলোয়ার হোসেনকে। তিনি সরেজমিনে তদন্ত শেষে গত বছরের ১২ মার্চ প্রতিবেদন জমা দেন। 

তদন্ত প্রতিবেদনে বন বিনষ্ট করা, বন্য প্রাণী ও পাখি শিকার, পাহাড় কাটাসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা এবং উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করতে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়। 

লোহাগাড়া ও সাতকানিয়ার কৃষকেরা যে ১৭ জনের নামে সরকারি দপ্তরগুলোতে অভিযোগ দিয়েছিলেন, তাঁদের আটজন ব্যবসায়ী, পাঁচজন প্রবাসী ও একজন সাবেক ইউপি (ইউনিয়ন পরিষদ) সদস্য। বাকি তিনজনের নির্দিষ্ট কোনো পেশা নেই। বন বিভাগের তদন্তে এসেছে ১২ জনের নাম। সেখানে কৃষকদের তালিকায় থাকা ১০ জনসহ আরও দুজন ব্যবসায়ী রয়েছেন। 

বন বিভাগের তদন্তে নাম আসা মো. নাছির উদ্দিন ও মনজুর আলমের বাড়ি বড়হাতিয়া ইউনিয়ন এলাকায়। তাঁদের বিরুদ্ধে হ্রদ এলাকায় একটি হরিণ হত্যার দায়ে গত বছরের ৯ মার্চ বন বিভাগ মামলা করে। 

নাছির উদ্দিন গত ২৯ জানুয়ারি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ৬০ জন সদস্য বাঁধটি দিয়েছি মাছ চাষ ও কৃষিকাজের জন্য। তৎকালীন লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আমাদের প্রত্যয়নপত্র দিয়েছেন। বাঁধটি অনুমোদনের জন্য আমরা বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে লিখিত আবেদন করেছি, সেটিও প্রক্রিয়াধীন।’ 

আরও পড়ুন

এরপর গত বৃহস্পতিবার রাতে যোগাযোগ করে প্রত্যয়নপত্রের বিষয়ে জানতে চাইলে নাছির উদ্দিন বলেন, হ্রদ তৈরির সঙ্গে তিনি জড়িত নন। 

হ্রদ তৈরির জন্য কৃষি বিভাগ কোনো প্রত্যয়নপত্র দিয়েছে কি না, তা জানতে লোহাগাড়ার তৎকালীন কৃষি কর্মকর্তা মনিরুল ইসলামের (বর্তমানে নওগাঁ সদরে কর্মরত) সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বাঁধ নির্মাণে কাউকে কোনো প্রত্যয়নপত্র দেওয়া হয়নি। 

সেই সময় লোহাগাড়ায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিসেবে দায়িত্ব পালন করা আহসান হাবীবও নাছির উদ্দিনের দাবি মিথ্যা বলে উল্লেখ করেন। 

লোহাগাড়া উপজেলা ভূমি কার্যালয় থেকে জানানো হয়, যে এলাকায় কৃত্রিম হ্রদ করা হয়েছে, তার বেশির ভাগ জমি বন বিভাগের। কিছু জমি খাস। লোহাগাড়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাজমুন লায়েল গত বৃহস্পতিবার বিকেলে তাঁর কার্যালয়ে প্রথম আলোকে বলেন, এই খাস জমি বন্দোবস্ত নেওয়ার জন্যও কেউ আবেদন করেননি। 

এদিকে যোগাযোগ করা হলে বন বিভাগের তদন্তে নাম আসা মনজুর আলম প্রথম আলোকে বলেন, নাছির উদ্দিন ও এরফানুল করিম (সাবেক সংসদ সদস্যের একান্ত সচিব) বাঁধ দিয়ে বনে হ্রদ তৈরি করেছেন। 

বিষয়টি নিয়ে এরফানুল করিমের কাছে জানতে চাইলে তিনি মনজুরের অভিযোগ অস্বীকার করেন। 

হ্রদে যেতে পাহাড় কেটে তৈরি করা হয়েছে রাস্তা। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে লোহাগাড়া উপজেলার বড়হাতিয়া এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

সাবেক সংসদ সদস্যের হস্তক্ষেপে মামলা হয়নি 

চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক দেলোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাঁধ ভাঙার জন্য আমাদের সামর্থ্যের মধ্যে সব ধরনের চেষ্টা করেছি। কিন্তু বাঁধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা প্রভাবশালী হওয়ার কারণে সফল হইনি। অভিযোগের পর তদন্তে সত্যতা পেয়ে সংশ্লিষ্ট বিট কর্মকর্তা মামলার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কিন্তু তৎকালীন এমপি মহোদয়ের হস্তক্ষেপে তখন মামলা করা হয়নি।’ 

বন বিভাগের অভিযোগ অস্বীকার করেন সদ্য বিদায়ী সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এগুলোর সঙ্গে (বাঁধ নির্মাণ) আমার কোনো সম্পর্ক নেই। কাউকে চিনিও না। শুধু কয়েক বছর আগে একবার বেড়াতে গিয়েছিলাম।’ 

সাবেক সংসদ সদস্য কীভাবে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন জানতে চাওয়া হয়েছিল সহকারী বন সংরক্ষক দেলোয়ার হোসেনের কাছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সাবেক সংসদ সদস্য বন বিভাগের দায়িত্বশীলদের এক দফা উপজেলা পরিষদে ডেকে নিয়ে এবং আরেক দফা মুঠোফোনে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ না নিতে বলেছিলেন। পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে তখন আর কোনো আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। 

এদিকে সাবেক সংসদ সদস্য বনে হ্রদ তৈরির সঙ্গে জড়িত মো. নাছির উদ্দিন ও মনজুর আলমকে চেনেন না বলে দাবি করলেও এবারের সংসদ নির্বাচনে তাঁরা তাঁর (আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী) পক্ষে প্রচারে সক্রিয় ছিলেন। বিভিন্ন কর্মসূচিতে তাঁরা উপস্থিত ছিলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সাবেক সংসদ সদস্যের একান্ত সচিব এরফানুল করিমের সঙ্গে তোলা একাধিক ছবি দেন তাঁরা দুজন। 

স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, নাছির উদ্দিন ও মনজুর আলম সাবেক সংসদ সদস্যের একান্ত সচিব এরফানুলের ঘনিষ্ঠ এবং আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীর কর্মী। নেজামুদ্দিন নদভী তাঁর লোকজনকে নিয়ে ২০২২ সালের মার্চে ওই হ্রদে বেড়াতেও যান। তাঁদের জন্য দুপুরের খাবারের আয়োজনও করা হয়। 

এদিকে সংরক্ষিত বনে হ্রদ তৈরির বিষয়ে জানে না স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর। লোহাগাড়ার বর্তমান ইউএনও মু. ইনামুল হাছান প্রথম আলোকে, ‘বনের জায়গা দখল করে হ্রদ নির্মাণের ঘটনা আমার জানা নেই। এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকলে জনস্বার্থে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম জেলার উপপরিচালক মু. ফেরদৌস আনোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, পরিবেশের ক্ষতি করে বাঁধ নির্মাণের বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

‘ভাবাও যায় না’

বন গবেষকেরা বলছেন, বনের মধ্যে এভাবে হ্রদ তৈরি করাটা কারও অজানা থাকার কথা নয়। তাঁরা সবাই জানতেন। কিন্তু ব্যবস্থা নেননি। এখন হ্রদ তৈরির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। দ্রুত ছড়ার বাঁধ কেটে পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক করতে হবে। 

বন গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মো. কামাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, যেভাবে বন ও পাহাড়ের জায়গায় হ্রদ তৈরি করা হয়েছে, তা ভাবাও যায় না।