চট্টগ্রামে আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের ওপর হামলা, ককটেল বিস্ফোরণ এবং গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে ১১৬ জনের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা হয়েছে। এতে আসামিদের মধ্যে ৭০ জন আইনজীবী ও দুজন সাংবাদিকও রয়েছেন। এ নিয়ে হত্যাসহ পাঁচটি মামলা হলো।
গতকাল শুক্রবার রাতে নগরের কোতোয়ালি থানায় মামলাটি করেন খুন হওয়া আইনজীবী সাইফুল ইসলামের ভাই জানে আলম। একই দিন নিহত সাইফুলের বাবা জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে ৩১ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছেন। এতে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের ইন্ধনে সাইফুলকে খুন করা হয় বলে অভিযোগ করেন বাবা।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল করিম আজ প্রথম আলোকে বলেন, হত্যার শিকার সাইফুলের ভাই বাদী হয়ে ১১৬ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় ৫০০ জনকে আসামি করে বিস্ফোরক আইনে মামলা করেছেন।
মামলার আসামিদের অন্যতম চট্টগ্রাম আদালতের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও মহানগর পূজা পরিষদের সাবেক সভাপতি চন্দন কুমার তালুকদার, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী নিতাই প্রসাদ ঘোষ, মহানগর পূজা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী নিখিল কুমার নাথ, আইনজীবী চন্দন দাশ, রুবেল পাল, সুমন আচার্য্য, আশীর্বাদ কুমার বিশ্বাস প্রমুখ।
সাংবাদিকের মধ্যে রয়েছেন চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শুকলাল দাশ ও দৈনিক চট্টগ্রাম প্রতিদিন–এর উপদেষ্টা সম্পাদক আয়ান শর্মা।
মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, গত মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম আদালতে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন নামঞ্জুর হয়। এরপর তাঁকে কারাগারে পাঠানোর জন্য প্রিজন ভ্যানে তোলা হলে বাধা দেন তাঁর অনুসারীরা। তাঁরা প্রিজন ভ্যান আটকে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে পুলিশ, বিজিবি লাঠিপেটা ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। তখনই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এ সময় আসামিরা আইনজীবী, বিচারপ্রার্থীদের ওপর হামলা চালান। হামলায় ২০ থেকে ৩০টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন আসামি আইনজীবীরা। চট্টগ্রাম মহানগর পূজা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিখিল কুমার নাথ আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাইফুল আমাদের সহকর্মী ও ভাই। তাঁকে যারা হত্যা করেছে, অবশ্যই তাদের বিচার হতে হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, ১১৬ আসামির মধ্যে ৭০ জনের মতো আইনজীবী রয়েছেন। তাঁরা সবাই সনাতনী আইনজীবীদের সংগঠন আইনজীবী বিজয়া সম্মিলন পরিষদের সদস্য। ঘটনার দিন হামলা কিংবা গাড়ি ভাঙচুরে আইনজীবীদের কেউ জড়িত ছিলেন না।
একইভাবে সাংবাদিক শুকলাল দাশ ও আয়ান শর্মাও দাবি করেন ঘটনার সঙ্গে তাঁদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
এর আগে পুলিশের ওপর হামলা, কাজে বাধাদানের অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে গত বুধবার কোতোয়ালি থানায় তিনটি মামলা করেছে। এসব মামলায় ৭৭ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতপরিচয় ১ হাজার ৩০০ জনকে আসামি করা হয়। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৩৮ জনকে। তাঁদের বেশির ভাগই কোতোয়ালি এলাকার বান্ডিল সেবক কলোনির বাসিন্দা।
মামলার ব্যাপারে জানতে চাইলে নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলামের ভাই জানে আলম প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে চিন্ময় দাসকে কারাগারে নিয়ে যেতে বাধা দেওয়া থেকে। কিছু আইনজীবী ওই সময়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে লোকজন জড়ো করেছেন। তাঁরা উসকানিমূলক স্লোগান দিয়েছেন। এরপর সশস্ত্র লোকজন জড়ো হয়ে আদালতের অদূরে তাঁর ভাইকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে নৃশংসভাবে খুন করে।