এখনো পিছিয়ে বাংলাদেশ

২০৩০ সালের মধ্যে সর্বজনীন হাত ধোয়ার চর্চা নিশ্চিত করতে চায় সরকার। তবে চ্যালেঞ্জ অনেক।

বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে সর্বজনীন হাত ধোয়ার চর্চা নিশ্চিত করতে চায়। দেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে হাত ধোয়ার মৌলিক সুবিধাগুলো আছে। এ নিয়ে মানুষের মধ্যেও সচেতনতা আছে। তবে সার্বিকভাবে হাত ধোয়ার চর্চা শতভাগ নিশ্চিত করতে এখনো বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাত ধোয়াকে সামাজিক ক্ষেত্রে একটি সাধারণ আচরণ হিসেবে গড়ে তোলা এখনো সম্ভব হয়নি।

সর্বজনীন হাত ধোয়ার চর্চা নিশ্চিত করতে একটি কৌশলপত্র তৈরি করা হয়েছে বলে স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। এতে বলা আছে, ২০৩০ সালের মধ্যে হাত ধোয়ার সর্বজনীন চর্চা নিশ্চিত করতে অবকাঠামোসহ নানা ধরনের সুবিধা দরকার। সেগুলো এখনো নিশ্চিত করা যায়নি।

বাসাবাড়ি, হাসপাতালসহ নানা স্বাস্থ্যকেন্দ্র, স্কুল ও অন্যান্য জনপরিসরে হাত ধোয়ার অভ্যাস জরুরি।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, স্কুল-কলেজ, বাসাবাড়ি বা জনপরিসরের আগে হাত ধোয়ার অভ্যাস বেশি দরকার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে হাত ধোয়ার অভ্যাস আরও বেশি করে ছড়াতে হবে।

তবে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে হাত ধোয়ার অভ্যাসের চিত্র আশানুরূপ নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফের সম্প্রতি প্রকাশিত যৌথ পর্যবেক্ষণ কর্মসূচির (জয়েন্ট মনিটরিং প্রোগ্রাম—জেএমপি) প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশের ৮১ শতাংশ হাসপাতালে মানসম্পন্ন স্যানিটেশন, ৬৬ শতাংশ হাসপাতালে হাত ধোয়া বা জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা নেই। ৬৩ শতাংশ হাসপাতাল প্রয়োজনীয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করছে না, এমনকি ২১ শতাংশ হাসপাতালে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের যথাযথ ব্যবস্থা নেই।

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, হাত জীবাণুমুক্ত করার মৌলিক ব্যবস্থা আছে দেশের ৩৪ শতাংশ হাসপাতালে। এই সুযোগ সীমিত আকারে আছে ৬৩ শতাংশ হাসপাতালে। ফলে দেখা যাচ্ছে, স্বাস্থ্যসেবার স্থানে হাত জীবাণুমুক্ত রাখা, টয়লেটে পানি ও সাবান—তিনটির যেকোনো দুটির ঘাটতি আছে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও হাত ধোয়ার ব্যবস্থা অপ্রতুল। জেএমপির ২০২০ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের ৯৯ ভাগ স্কুলে হাত ধোয়ার সুবিধা আছে। তবে মাত্র ৪৮ শতাংশ স্কুলে পানি ও সাবান পাওয়া যায়।

কৌশলপত্রে সরকারের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, জনস্বাস্থ্য ও সার্বিক মঙ্গলের লক্ষ্যে গৃহস্থালি, স্কুল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও সংশ্লিষ্ট সব জনপরিসরে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য কয়েকটি শর্তের কথা বলা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে আছে একটি প্রতিশ্রুতিশীল রাজনৈতিক নেতৃত্ব; হাত ধোয়ার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি, হাত ধোয়ার সহজলভ্য ও যথাযথ উপাদান ও পরিষেবার ব্যবস্থা। এ জন্য এক বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থের প্রয়োজন।

ওয়াটার এইডের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরুল্লাহ আওয়াল প্রথম আলোকে বলেন, ‘সর্বজনীন হাত ধোয়ার চর্চা নিশ্চিতে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। কিন্তু এ জন্য যেসব শর্তের কথা বলা হয়েছে, সেগুলো আগে নিশ্চিত করতে হবে। কারণ, অবকাঠামোর ক্ষেত্রে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। পাশাপাশি অনুকূল পরিবেশও নিশ্চিত করতে সরকারের একাধিক দপ্তরের সমন্বিত প্রচেষ্টা দরকার।’

এ নিয়ে সরকারের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমরা আগের চেয়ে ভালো অবস্থায় আছি। তবে আরও অগ্রগতি আনতে আমাদের জোরালো চেষ্টা থাকতে হবে।’

বাংলাদেশে হাত ধোয়া পরিস্থিতির আসলে কতটুকু অগ্রগতি হয়েছে, তার কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য কারও কাছে নেই। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) স্বাস্থ্যবিধি জরিপ করে। এরপর দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হয়। এখন সরকারি পর্যায়ে জরিপ হলে প্রকৃত অবস্থা বোঝা যাবে বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. আবু জামিল ফয়সাল। তিনি বলেন, হাত ধোয়ার মতো অভ্যাস মানুষের আচরণ পরিবর্তনের সঙ্গে জড়িত। একটি সুনির্দিষ্ট তথ্যভান্ডার থাকলে কাজ সহজ হয়।

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলামও বলেন, এমন একটি জরিপ ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণে সহায়তা করবে।