সাকিবের টিউশনির টাকায় চলত পরিবার

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) শাখা ছাত্রলীগের ‘নির্যাতনের’ শিকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ছাত্র সাকিব হোসেনের বাবা আবদুল কাদের পেশায় দিনমজুর। আয় নেই বললেই চলে। নগরে টিউশনি করিয়ে নিজের ও ভাইবোনের পড়াশোনা এবং সংসারের খরচ চালাতেন সাকিব। এখন তাঁর ঠাঁই হাসপাতালের বিছানায়। অন্যদিকে ছেলেকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভেঙে পড়েছেন বাবা।

আজ শনিবার বিকেলে মুঠোফোনে সাকিবের পরিবারের অবস্থা তুলে ধরেন তাঁর খালাতো ভাই মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, সাকিব কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না, পড়াশোনা নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন।

দুজনের (নির্যাতনের শিকার দুই ছাত্র) অবস্থা স্থিতিশীল। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি প্রতিবেদন দিলে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সাহেনা আক্তার, অধ্যক্ষ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ

মিজান আরও বলেন, সাকিব মাসে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা পাঠাতেন বাবার কাছে। কখনো বেশিও পাঠাতেন। সংসারে টানাপোড়েন লেগেই ছিল। টিউশনি করেই পরিবার চালাতেন। কিছু টাকা বাঁচাতে কলেজের ছাত্রাবাসে উঠেছিলেন। নির্যাতনের ঘটনার পর তাঁর মা-বাবা ভেঙে পড়েছেন।

ছাত্রশিবিরের রাজনীতিতে যুক্ত এমন অভিযোগে গত বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত চমেকের প্রধান ছাত্রাবাসে কলেজের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র সাকিব হোসেন (২২) ও জাহিদ হোসেন ওরফে ওয়াকিলকে (২২) মারধর করা হয়। ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী তাঁদের মারধর করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। একই সময় আবু রাইয়াত (২১) ও মোবাশ্বির হোসেন (২২) নামের আরও দুই ছাত্রকে নির্যাতন করে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সাকিব ও ওয়াকিল বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসা নিচ্ছেন। আজ দুপুরে সেখানে গিয়ে কথা হয় সাকিবের ভাই রাকিব হোসেনের সঙ্গে। তিনি বর্তমানে নগরের একটি বেসরকারি কলেজে উচ্চমাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষে পড়েন।

গত বুধবার রাতে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী চার ছাত্রকে ছাত্রাবাসের নিজ নিজ কক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে যান। পরে তাঁদের অন্য একটি কক্ষে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। পরদিন সন্ধ্যার দিকে তাঁদের বাড়িতে চলে যেতে বলা হয়। রাইয়াত ও মোবাশ্বির বাড়িতে চলে গেলেও জাহিদ ও সাকিব হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যান। তখন ঘটনা জানাজানি হয়।

রাকিব জানান, বাঁশখালীর ছনুয়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের খুদুকখালী গ্রামে তাঁদের বাড়ি। তাঁরা তিন ভাই ও দুই বোন। সাকিব সবার বড়। পড়াশোনার সব খরচ সাকিবই দেন।

চমেক সূত্রে জানা গেছে, বুধবার রাতে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী ওই চার ছাত্রকে ছাত্রাবাসের নিজ নিজ কক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে যান। পরে তাঁদের অন্য একটি কক্ষে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। পরদিন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে তাঁদের বাড়িতে চলে যেতে বলা হয়। রাইয়াত ও মোবাশ্বির বাড়িতে চলে গেলেও জাহিদ ও সাকিব হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যান। তখন ঘটনা জানাজানি হয়।

চমেকের অধ্যক্ষ সাহেনা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, দুজনের অবস্থা স্থিতিশীল। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি প্রতিবেদন দিলে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চমেকে ছাত্রলীগের দুটি ধারা সক্রিয়। একটি শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর ও আরেকটি সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেন। ওই ঘটনায় মহিবুল হাসানের অনুসারী চমেক ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী জড়িত বলে সংগঠনটির সূত্রে জানা গেছে।

অভিযোগের বিষয়ে চমেক ছাত্রলীগের মহিবুলপন্থী গ্রুপের নেতা অভিজিৎ দাশ গতকাল শুক্রবার বলেছেন, তাঁরা (চার ছাত্র) শিবির করেন। গোপনে এই কাজগুলো তাঁরা করে যাচ্ছিলেন। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

এদিকে হাসপাতালে গিয়ে কথা হয় নির্যাতনের শিকার আরেক শিক্ষার্থী ওয়াকিলের বাবা মো. ফরহাদ হোসেন ও বড় ভাই তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে। তাঁরা বলেন, ওয়াকিল কোনো রাজনীতিতে যুক্ত নয়। সে পড়াশোনায় অত্যন্ত মনোযোগী ছিল। কখনো শিক্ষাজীবনে দ্বিতীয় হয়নি। সব সময় পড়াশোনার মধ্যে থাকত।

ওয়াকিলকে কেন মারধর করা হয়েছে এমন প্রশ্নে বাবা ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘ওয়াকিল ক্লাসরুমে সক্রিয় ছিল। সব সময় ক্লাস পরীক্ষায় অংশ নিত। ক্লাসে বেশ পরিচিত ছিল। হয়তো ঈর্ষা থেকে হামলা করে থাকতে পারেন (তাঁরা)।’

আরও পড়ুন

এর আগে ২০২১ সালের ৩০ অক্টোবর ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মারামারির পর চমেক বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তখন মারামারিতে মহিবুলপন্থী মাহাদি জে আকিব নামের একজন ছাত্র গুরুতর আহত হন। তাঁর খুলির হাড় ভেঙে গিয়েছিল। এরপর চমেক ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

আরও পড়ুন