সবচেয়ে সুখী দেশ ফিনল্যান্ড, ১১ ধাপ পেছাল বাংলাদেশ

বিশ্বের সুখী দেশ নিয়ে বার্ষিক তালিকা আজ বুধবার প্রকাশ করা হয়েছেপ্রতীকী ছবি

টানা সপ্তমবারের মতো বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশ হিসেবে নাম উঠে এসেছে ফিনল্যান্ডের। তবে গতবারের মতো এ বছরও সুখী দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান পিছিয়েছে। আর তালিকায় একেবারে তলানিতে রয়েছে আফগানিস্তান।

বিশ্বের সুখী দেশ নিয়ে বার্ষিক এ তালিকা আজ বুধবার প্রকাশ করা হয়েছে। জাতিসংঘের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রকাশিত এ-সংক্রান্ত জরিপ প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করা হয় ১৪৩টি দেশকে।

২০২৪ সালের প্রতিবেদনে বাংলাদেশ রয়েছে ১২৯তম অবস্থানে। গত বছর এ অবস্থান ছিল ১১৮। সে হিসাবে এ বছর বাংলাদেশের অবস্থান ১১ ধাপ পিছিয়েছে। গতবারের আগের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে বাংলাদেশ ছিল তালিকার ৯৪ নম্বরে।

আরও পড়ুন
ফিনল্যান্ডের মানুষের এতটা সুখী হওয়ার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে, প্রকৃতির সঙ্গে তাঁদের নিবিড় সান্নিধ্য, সেই সঙ্গে স্বাস্থ্যসম্মত কর্মজীবন।
জেনিফার ডি পাওলা, হেলসিংকি ইউনিভার্সিটির গবেষক

আজ ২০ মার্চ আন্তর্জাতিক সুখ দিবস। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ২০১২ সালের ১২ জুলাই এ দিনকে সুখ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হয়। সুখ ও ভালো থাকার বিষয়টিতে একটি সর্বজনীন লক্ষ্য ও প্রত্যাশা নিয়েই দিবসটির উৎপত্তি।

প্রতিবছর এ দিবসের প্রাক্কালে সুখী দেশের তালিকা প্রকাশ করা হয়ে থাকে। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। প্রকাশ করা হয়েছে ‘ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট ২০২৪’।

এ বছরের তালিকায় যথারীতি ওপরের দিকে রয়েছে নরডিক অঞ্চলের দেশগুলো। প্রথম পাঁচটি সুখী দেশের মধ্যে রয়েছে এ অঞ্চলের আরও তিনটি দেশ ডেনমার্ক, আইসল্যান্ড ও সুইডেন। এসব দেশের অবস্থান যথাক্রমে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ। এ ছাড়া সুখী দেশ হিসেবে পাঁচ নম্বরে রয়েছে ইসরায়েলের নাম।

নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, লুক্সেমবার্গ, সুইজারল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার অবস্থান তালিকার যথাক্রমে ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম, নবম ও দশম স্থানে।

আরও পড়ুন
এক দশকের বেশি আগে থেকে সুখী দেশ নিয়ে এমন তালিকা প্রকাশ করা হচ্ছে। কিন্তু এবারই প্রথম বিশ্বের অন্যতম ধনী ও সমৃদ্ধ দেশ যুক্তরাষ্ট্র এবং জার্মানি প্রথম ২০টি সুখী দেশের তালিকায় স্থান পায়নি। এ বছর দেশ দুটির অবস্থান যথাক্রমে ২৩তম ও ২৪তম।

বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর মধ্যে নেপাল রয়েছে ৯৩তম, পাকিস্তান ১০৮তম, মিয়ানমার ১১৮তম, ভারত ১২৬তম ও শ্রীলঙ্কা ১২৮তম, আফগানিস্তান ১৪৩তম অবস্থানে।

আফগানিস্তানের এ অবস্থান তালিকার সর্বনিম্নে। ২০২১ সালে পশ্চিমা–মদদপুষ্ট আশরাফ গনি সরকারকে হটিয়ে দেশটির শাসনক্ষমতায় আসে তালেবান। এর পর থেকেই দেশটি এক নজিরবিহীন মানবিক সংকটে পড়ে রয়েছে।

এক দশকের বেশি আগে থেকে সুখী দেশ নিয়ে এমন তালিকা প্রকাশ করা হচ্ছে। কিন্তু এবারই প্রথম বিশ্বের অন্যতম ধনী ও সমৃদ্ধ দেশ যুক্তরাষ্ট্র এবং জার্মানি প্রথম ২০টি সুখী দেশের তালিকায় স্থান পায়নি। এ বছর দেশ দুটির অবস্থান যথাক্রমে ২৩তম ও ২৪তম।

আরও পড়ুন

বিপরীতে, প্রথম ২০টি দেশের তালিকায় প্রবেশ করেছে কোস্টারিকা (১২তম) ও কুয়েত (১৩তম)।

সুখী দেশের তালিকা করার ক্ষেত্রে মানুষের সুখের নিজস্ব মূল্যায়ন, সেই সঙ্গে অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে শূন্য থেকে ১০ সূচকে নম্বর পরিমাপ করা হয়। পাশাপাশি প্রতিটি দেশের মানুষের ব্যক্তিগত সুস্থতার অনুভূতি, ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, উদারতা, জিডিপি ও দুর্নীতির মাত্রা বিবেচনায় নেওয়া হয়।

এদিকে চলতি বছরের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বিশ্বের অধিকাংশ অঞ্চলেই বয়স্কদের তুলনায় তরুণেরা বেশি সুখী। আবার ইউরোপ ছাড়া সব অঞ্চলে সুখ নিয়ে অসমতা বেড়েছে।

আরও পড়ুন

সুখ বিষয়ে গবেষকের বক্তব্য

ফিনল্যান্ডের হেলসিংকি ইউনিভার্সিটির সুখবিষয়ক গবেষক জেনিফার ডি পাওলা বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ফিনল্যান্ডের মানুষের এতটা সুখী হওয়ার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে, প্রকৃতির সঙ্গে তাঁদের নিবিড় সান্নিধ্য, সেই সঙ্গে স্বাস্থ্যসম্মত কর্মজীবন।

এর বাইরে সফল জীবনের সংজ্ঞা নিয়ে ফিনল্যান্ডের মানুষের অধিকতর বোঝাপড়াও সুখী হওয়ার একটি কারণ হতে পারে বলে মনে করেন এ গবেষক। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে সাফল্যকে প্রায়ই অর্থনৈতিক অর্জনের সঙ্গে তুলনা করা হয়, সেখানে ফিনল্যান্ডবাসী প্রাধান্য দিয়ে থাকেন শক্তিশালী কল্যাণমূলক সমাজ, রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর প্রতি আস্থা, নিম্নমাত্রার দুর্নীতি, বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার ওপর।

আরও পড়ুন