নির্যাতনের শিকার চমেকের দুই ছাত্র বাড়ি ফিরেছেন
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) শাখা ছাত্রলীগের ‘নির্যাতনের’ শিকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির দুই ছাত্র হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ফিরেছেন। গতকাল রোববার বেলা দুইটার দিকে হাসপাতাল থেকে তাঁদের ছাড়পত্র দেওয়া হয়। দুজনের শারীরিক অবস্থা এখন ভালো। দুই ছাত্র হলেন জাহিদ হোসেন ওরফে ওয়াকিল (২২) ও সাকিব হোসেন (২২)।
আজ সোমবার মুঠোফোনে কথা হয় সাকিব হোসেনের খালাতো ভাই মিজানুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, সাকিব ও ওয়াকিলের অবস্থা ভালো। এ কারণে তাঁদের হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। গতকালই সাকিবকে নিয়ে বাঁশখালির নিজ বাড়িতে চলে আসেন তিনি। আর ওয়াকিলের বাড়ি সাভারে। তাঁরা সেখানে চলে যান।
মিজানুর রহমান বলেন, কলেজ কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা দিতে পারলে সাকিব আবার ছাত্রাবাসে ফিরবেন। তবে তাঁদের মনে নিরাপত্তা নিয়ে ভয় আছে। যদি নিরাপত্তার আশ্বাস না পান, তবে ছাত্রাবাসে ফিরবেন না। কিন্তু পড়াশোনা চালিয়ে যাবেন। একই বিষয়ে জানতে ওয়াকিলের বাবাকে কয়েকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এর আগে ৮ ফেব্রুয়ারি রাতে চমেকের প্রধান ছাত্রাবাসের একটি কক্ষে চার ছাত্রকে পর্যায়ক্রমে পেটানো হয়। ছাত্রশিবিরের রাজনীতিতে যুক্ত সন্দেহে এই চার ছাত্রকে চমেক শাখা ছাত্রলীগের একটি অংশের নেতা-কর্মীরা মারধর করেন বলে অভিযোগ উঠে। তবে শিক্ষার্থীদের পরিবার থেকে জানানো হয়, এ শিক্ষার্থীরা কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত নন। তাঁরা পড়াশোনা নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন। নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নিতেন।
জাহিদ হোসেন ওরফে ওয়াকিল ও সাকিব হোসেন ছাড়া নির্যাতনের শিকার বাকি দুজন হলেন আবু রাইয়াত ও মোবাশ্বির হোসেন। চারজনই চমেকের ৬২তম ব্যাচের এমবিবিএস চতুর্থ বর্ষের ছাত্র।
চমেক সূত্রে জানা যায়, ৮ ফেব্রুয়ারি রাতে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী ওই চার ছাত্রকে ছাত্রাবাসের নিজ নিজ কক্ষ থেকে পর্যায়ক্রমে ডেকে নিয়ে যান। পরে তাঁদের অন্য একটি কক্ষে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনে তাঁদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম হয়। এরপর তাঁদের বাড়িতে চলে যেতে বলা হয়। রায়হান ও মোবাশ্বির বাড়িতে ফিরে যান। জাহিদ ও সাকিব চমেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যান। তখন ঘটনা জানাজানি হয়।
এ ঘটনায় ৯ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। পরে ১৩ ফেব্রুয়ারি সাকিব ও ওয়াকিল কলেজের অধ্যক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। দুজনের লিখিত অভিযোগে যাঁদের নাম এসেছে, তাঁদের মধ্যে অভিজিৎ দাশ, জাকির হোসেন, ইমতিয়াজ আলম, রেয়াজুল ইসলাম, সাজু দাশ, সৌরভ দেবনাথ ও আকাশ অন্যতম। এর মধ্যে নির্যাতনের শিকার ছাত্রদের সহপাঠী সাজু্ ও জাকির। তাঁরা সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত।
সাকিবের ভাই মিজানুর জানান, তদন্ত কমিটির সদস্যরা সাকিব ও ওয়াকিলের সঙ্গে আলাদাভাবে এক ঘণ্টা করে কথা বলেছেন। চিকিৎসাধীন দুই ছাত্রের বিষয়ে চমেক অধ্যক্ষ সাহেনা আক্তার বলেন, দুজনকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।
দুই শিক্ষার্থীর নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, সব শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা দিতে কলেজ কর্তৃপক্ষ কাজ করছে। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি হয়েছে। আবার ১৬ ফেব্রুয়ারি চার শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তদন্ত কমিটিকে সেটিও দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।