ফ্রিজ কিনুন দেখে, শুনে এবং বুঝে

রেফ্রিজারেটর কেনার আগে আকার, ডিজাইন, স্থায়িত্ব ক্ষমতা ও প্রযুক্তি সম্পর্কে জানা উচিতছবি: সংগৃহীত

কোরবানির ঈদের (ঈদুল আজহা) খুব বেশি দেরি নেই। এ সময় অনেকেই ঘরে নতুন রেফ্রিজারেটর বা ফ্রিজ কিনতে চান। এখন হয়তো চলছে পরিকল্পনা—কোন ফ্রিজ এবং কেমন ফ্রিজ কেনা যায়। তাই ফ্রিজ কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কিছু বিষয় জেনে রাখা দরকার।

রেফ্রিজারেটর কেনার আগে এর আকার, ডিজাইন, স্থায়িত্ব ক্ষমতা, প্রযুক্তি ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। নির্ধারিত বাজেটের মধ্যে হলে তো ভালো, অন্যথায় বাজেট একটু বাড়িয়ে হলেও এসব জিনিসে প্রাধান্য দিয়ে পছন্দের ফ্রিজ ঘরে আনাই হবে সঠিক সিদ্ধান্ত।

ওয়ালটন গ্রুপের ব্র্যান্ড ম্যানেজার মুস্তাফিজ রহমান বলেন, ‘ফ্রিজ কেনার সময় অবশ্যই ভালো কম্প্রেসার, বিদ্যুৎ–সাশ্রয়ী ক্ষমতা, ফ্রিজের ভেতরের জায়গা ইত্যাদি দেখে নিতে হবে। সাধ্য অনুযায়ী চেষ্টা করতে হবে সর্বশেষ প্রযুক্তির ফ্রিজটি কিনতে। ভালো ফ্রিজ জীবনযাপনে অনেক স্বাচ্ছন্দ্য আনে এবং খাবারের পুষ্টিমান বজায় রাখে। যেহেতু এর সঙ্গে শরীর ও সুস্থতার বিষয়টি যুক্ত, তাই ফ্রিজ কেনার আগে সচেতন হয়েই কিনতে হবে।’

ফ্রিজ কেনার আগে যেসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে

মডেল ও আকার

কোন মডেলের ফ্রিজ কিনবেন, সেটা আগেই ঠিক করে নিতে হবে। সেই সঙ্গে দেখে নিতে হবে ফ্রিজের আকার। অনেক সময় বাইরে থেকে বড় দেখা গেলেও ফ্রিজের ভেতরে কতটুকু জায়গা রয়েছে, তা বোঝা যায় না। এ জন্য আধুনিক প্রযুক্তির ‘নো ফ্রস্ট’ বা বরফ জমে না এমন রেফ্রিজারেটর কেনাই ভালো। বর্তমানে ডাবল ডোর ফ্রিজের চাহিদা খুব বেশি। এতে স্টোরেজ বা ধারণক্ষমতা অনেক বেশি পাওয়া যায়।

দেখে নিতে হবে কম্প্রেসার

ফ্রিজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো কম্প্রেসার। এটি যত উন্নত মানের হবে, ফ্রিজ তত তাড়াতাড়ি শীতল হবে। অত্যাধুনিক ইনভার্টার কম্প্রেসার রয়েছে, এমন মডেলের ফ্রিজ কেনাই ভালো। এতে বাসার বিদ্যুৎ সাশ্রয় হওয়ার পাশাপাশি ভোল্টেজের ওঠানামা থাকলেও ফ্রিজের ভেতরটা ঠিকঠাক শীতল হয়।

আরও পড়ুন

বিদ্যুৎ–সাশ্রয়ী কি না

যতটা সম্ভব জ্বালানিসাশ্রয়ী ফ্রিজ কেনা উচিত। নতুন কেনা ফ্রিজটি যদি জ্বালানিসাশ্রয়ী হয়, তাহলে প্রতি মাসে বিদ্যুৎ বিল কমে আসবে। কীভাবে বুঝবেন ফ্রিজটি জ্বালানিসাশ্রয়ী কি না? ফ্রিজের গায়ে ‘স্টার’ চিহ্ন দিয়ে এর জ্বালানি সাশ্রয়ের ক্ষমতা বোঝানো হয়। কেনার সময় ফোর স্টার বা ফাইভ স্টারের রেফ্রিজারেটর কেনা উচিত।

খাবার সজীব ও সতেজ রাখতে

একটা সময় শুধু ফ্রিজে খাবার সংরক্ষণকেই প্রাধান্য দেওয়া হতো। এখন খাবারের সজীবতা রক্ষাকেও গুরুত্বপূর্ণ ভাবা হয়। তাই ফ্রিজ কেনার আগে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে প্রাধান্য দিতে হবে। খাবারের আর্দ্রতা ও সজীবতা দীর্ঘদিন ধরে রাখতে ‘নো ফ্রস্ট’ ফ্রিজ সবচেয়ে কার্যকর। এই ফ্রিজ পরিষ্কার করার জন্য কখনই বন্ধ করতে হবে না। সবজির সজীবতা রক্ষার জন্য ফ্রিজের ভেজিটেবল বক্সে সঠিক আর্দ্রতার দিকেও প্রাধান্য দিতে হবে।

ডিজাইন ও রং

খাবারঘর কিংবা রান্নাঘর—যেখানেই রাখা হোক না কেন, ফ্রিজের ডিজাইন ও রং গুরুত্বপূর্ণ। সাধ ও সাধ্যের সমন্বয় করে দুই দরজা, ডোর-ইন-ডোর বা সাইড-বাই-সাইড ডিজাইনের ফ্রিজ কিনতে পারেন। এতে আপনার খাবারঘরের সৌন্দর্যও বেড়ে যাবে বহুগুণ। আর যে রং দেখে জুড়িয়ে যাবে মন, পছন্দের ফ্রিজটিও সেই রঙের হলে ক্ষতি কী?

ওয়ারেন্টি দেখে নিন

ফ্রিজ কেনার আগে ওয়ারেন্টি দেখে কেনা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ। যতটুকু সম্ভব দীর্ঘ মেয়াদের ওয়ারেন্টি নেওয়া ভালো। বাজারে বিভিন্ন ধরনের ফ্রিজের কম্প্রেসারের ওপর ৫, ৮ ও ১০ বছর মেয়াদি ওয়ারেন্টি রয়েছে। তাই দেখে-বুঝে তারপর কিনুন আপনার পছন্দের ফ্রিজটি।

হেলথ কেয়ার টেকনোলজি

এখনকার প্রায় সব ব্র্যান্ডের ফ্রিজে যুক্ত থাকে ন্যানো হেলথ কেয়ার টেকনোলজি। এই ছোট্ট জিনিস ফ্রিজে সংরক্ষণ করা খাবার স্বাস্থ্যকর রাখতে সাহায্য করে। ন্যানো হেলথ টেকনোলজিযুক্ত হলে সেটি ফ্রিজের গায়ে স্টিকার লাগানো থাকবে। তথ্যটি খুব সহজে আপনি নিজেই পরীক্ষা করে নিতে পারবেন।

কিনতে পারেন স্মার্ট ফ্রিজ

বর্তমানে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের স্মার্ট ফ্রিজ পাওয়া যায়। স্মার্ট ফ্রিজে অনেক ইনভার্টার প্রযুক্তি থাকে। দীর্ঘ সময়ের জন্য বাসার বাইরে গেলে এই ফ্রিজে অ্যানার্জি সেভিং মুড চালু করে রাখতে পারেন। অনেক ফ্রিজে এখন অ্যান্টিব্যাকটেরিয়া প্রযুক্তি থাকে।

ফ্রিজ কেনার সময় এই বিষয়গুলো মাথায় রাখলে কেনার পর ভোগান্তিতে পড়তে হবে না।