রোগীদের বিক্ষোভের পর চমেকে বসছে ১০টি ডায়ালাইসিস মেশিন

ফাইল ছবি

কিডনি রোগী ও স্বজনদের বিক্ষোভের পর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) নতুন ১০টি ডায়ালাইসিস মেশিন বসানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, এক মাসের মধ্যে মেশিনগুলো চালু হবে। এতে রোগীদের সংকট অনেকটা কেটে যাবে বলে আশা তাদের।

এই মেশিনগুলোয় অন্তর্বিভাগের পাশাপাশি স্যানডোরে এত দিন সেবা নেওয়া বাইরের রোগীদেরও কম মূল্যে ডায়ালাইসিস–সেবা প্রদান করা হবে বলেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। যাঁরা ভর্তুকি পেয়ে আসছিলেন, সেসব গরিব রোগীরা এখানে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সুপারিশ অনুযায়ী ডায়ালাইসিস করাতে পারবেন।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠান স্যানডোরের ডায়ালাইসিস ফি বৃদ্ধি এবং সরকারিভাবে ডায়ালাইসিসে ভর্তুকি কমিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে এক সপ্তাহ ধরে চট্টগ্রামে কিডনি রোগী ও স্বজনেরা বিক্ষোভ করছেন। এরপর গত মঙ্গলবার থেকে মেশিন বসানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়।

আরও পড়ুন

চমেক হাসপাতালের অধীন স্যানডোর ডায়ালাইসিস সার্ভিসেস বাংলাদেশ (প্রা.) লিমিটেড নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসিস–সেবা দেয়। ১ জানুয়ারি থেকে একবারের ডায়ালাইসিস ফি ভর্তুকিতে ৫১০ টাকার পরিবর্তে ৫৩৫ টাকা এবং ভর্তুকি ছাড়া ২ হাজার ৭৮৫ টাকার পরিবর্তে ২ হাজার ৯৩৫ টাকা করা হয়েছে।

পাশাপাশি এত দিন যেসব রোগী মাসে কমপক্ষে ৮ থেকে ১২টি ডায়ালাইসিস–সেবা ভর্তুকিতে পেতেন, তাঁরা এখন থেকে ৪ থেকে ৬টির ক্ষেত্রে এই সুবিধা পাবেন। বাকিগুলো প্রতিটি ২ হাজার ৯৩৫ টাকায় করাতে হবে।

আগের মতো ভর্তুকি বহাল রাখার দাবিতে কিডনি রোগী ও স্বজনেরা সড়ক অবরোধ পর্যন্ত করেছেন। এ সময় পুলিশের মারধরের শিকারও হয়েছেন তাঁরা। মঙ্গলবার এ ঘটনা ঘটে।

এই পরিস্থিতিতে চমেক হাসপাতালে ১০টি ডায়ালাইসিস মেশিন দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে। মেশিনগুলো বসানোর জন্য হাসপাতালের নেফ্রোলজি ওয়ার্ডে জায়গা প্রস্তুত করা হচ্ছে। বর্তমানে এই ওয়ার্ডে চারটি ডায়ালাইসিস মেশিন চালু রয়েছে। এগুলোতে অন্তর্বিভাগের রোগীদের সেবা দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন

গতকাল বুধবার সরেজমিন দেখা যায়, দেয়াল ভেঙে দুটি কক্ষকে এক করা হচ্ছে। এর মধ্যে ১০টি ডায়ালাইসিস মেশিন বসানো হবে। হাসপাতালের নেফ্রোলজি ওয়ার্ডের বিভাগীয় প্রধান মো. নুরুল হুদা বলেন, ‘ডায়ালাইসিস মেশিন চলে এসেছে। এখন বসানোর কাজ চলছে। আগামী এক মাসের মধ্যে এগুলো চালু হবে। এতে কম মূল্যে রোগীরা সেবা পাবেন। ফলে সংকট অনেকটা কাটবে বলে মনে করি।’

সরকারি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করাতে ৬ মাসে খরচ পড়ে ২০ হাজার টাকা। সে হিসাবে এখানে মাসে ৮টি ডায়ালাইসিস ধরা হলে তার প্রতিটির দাম পড়ে ৪১৭ টাকা। এটা স্যানডোরে ভর্তুকি মূল্যের চেয়েও কম। স্যানডোরে এখন ভর্তুকিতে ডায়ালাইসিস সেশনের মূল্য ৫৩৫ টাকা। নিয়মিত সেশন ২ হাজার ৯৩৫ টাকা।
হাসপাতালের ১০টি ডায়ালাইসিস মেশিনের পাশাপাশি কোভিড ওয়ার্ডের ৩টি মেশিনও বাইরের রোগীদের ডায়ালাইসিসের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। এখানে একই মেশিনে দিনে তিনটি করে সেশন সেবা দেওয়া হবে। এতে ১৩টি মেশিনে দিনে ৩৯ রোগীকে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।

স্যানডোরে ৩১টি মেশিন রয়েছে। ২০১৭ সাল থেকে তারা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে সেবা দিচ্ছে, তা বেসরকারি হাসপাতালের চেয়ে কিছুটা কম দামে হলেও একেবারে কম নয়। যার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গরিব রোগীদের ভর্তুকি দেয়। বছরে সাড়ে ছয় হাজার সেশন ডায়ালাইসিস ভর্তুকি দেওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু চট্টগ্রামে গত বছর তা প্রায় ১৫ হাজার সেশন পর্যন্ত হয়, যার কারণে ভর্তুকির লাগাম টেনেছে চমেক হাসপাতাল।

চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান বলেন, ‘ভর্তুকি যতটা সম্ভব দিয়েছি। এখন চলমান সংকট নিরসনে স্যানডোরের ওপর নির্ভর না করে নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। এ কারণে ১০টি নতুন ডায়ালাইসিস মেশিন আনা হচ্ছে। এগুলো চালু হলে সংকট অনেকটা কেটে যাবে।’