ঢাকা মেডিকেলসহ সব হাসপাতালে পুরোদমে সেবা চালুর ঘোষণা
আন্দোলন প্রত্যাহার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ সারা দেশের হাসপাতালে সব ধরনের চিকিৎসাসেবা চালুর ঘোষণা দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে ঢাকা মেডিকেলের নিউরোসার্জারি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক মো. আবদুল আহাদ বলেন, এখন থেকে সারা দেশের সব হাসপাতালে আগের মতো পূর্ণ সেবা চালু থাকবে। আজ বিকেলে সর্বস্তরের চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে চার সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন সচিবের সঙ্গে বৈঠক করে। ওই বৈঠকে তাঁদের (চিকিৎসক ও শিক্ষার্থী) পক্ষ থেকে উত্থাপিত চারটি দাবির বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এসব দাবির বিষয়ে সচিব দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে হাসপাতালে সব ধরনের সেবা চালুর ঘোষণা দেন আবদুল আহাদ।
গত শনিবার ঢাকা মেডিকেলের নিউরোসার্জারি বিভাগে কর্মরত দুজন চিকিৎসকের ওপর হামলা হয়। হাসপাতালের ভেতরে ভাঙচুর করেন হামলাকারীরা। এর প্রতিবাদে চিকিৎসকেরা চার দফা দাবিতে রোববার সকাল থেকে কর্মবিরতিতে যান। দেশব্যাপী চিকিৎসকেরাও কর্মবিরতি পালন করেন। দাবি পূরণের আশ্বাস পেয়ে ১২ ঘণ্টা পর রোববার রাত পৌনে আটটার দিকে চিকিৎসকেরা কাজে ফেরেন।
সংবাদ সম্মেলনে চিকিৎসক আবদুল আহাদ বলেন, তাঁদের চার দফা দাবি পূরণে পদক্ষেপ গ্রহণ করা শুরু হয়েছে। একটি দাবি ছিল, হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা। এরই মধ্যে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আরেকটি দাবি ছিল, ঢাকা মেডিকেলসহ বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা। ঢাকা মেডিকেলসহ অনেক হাসপাতালে সেটি করা হয়েছে। সব হাসপাতালে এখনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হয়নি, সেখানে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে। সচিব এসব বিষয়ে তাঁদের আশ্বস্ত করেছেন।
আবদুল আহাদ বলেন, অন্য দুটি দাবি হচ্ছে, স্বাস্থ্য পুলিশ গঠন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা। এই দুটি দাবির বিষয়ে দীর্ঘ ও তাৎপর্যপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। সচিব দ্রুততম সময়ের মধ্যে এসব দাবি বাস্তবায়নের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন। এ লক্ষ্যে একটি কার্যকর কমিটি গঠন করা হবে বলেও আশ্বস্ত করা হয়েছে। এই কমিটিতে আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের একটি প্রতিনিধিদলকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এ ছাড়া স্বাস্থ্যসেবার বিভিন্ন অসংগতি, যেমন ক্যাডার বৈষম্যসহ অন্যান্য বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
চিকিৎসকদের দাবিগুলো সচিব গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছেন উল্লেখ করে আবদুল আহাদ বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ‘স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন’ নিয়ে আরও তিন–চার সপ্তাহ সময় চেয়েছে। এ সময়ের ভেতরে পূর্ববর্তী স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইনের খসড়ায় যে অসংগতিগুলো রয়েছে, সেগুলো নিয়ে তাঁরা আলোচনা করবেন। পাশাপাশি আরেকটি খসড়া ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবেন। চিকিৎসক–সমাজ আলোচনা–পর্যালোচনা করে সেই খসড়ার ওপরে কোনো সংশোধনী থাকলে, তাদের পক্ষ থেকে মতামত পেশ করবে। তারপর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে পরিবর্তিত ও পরিমার্জিত ‘স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন’ পাসের উদ্যোগ নেওয়া হবে। আর স্বাস্থ্য পুলিশের ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রস্তাব পাঠানোর বিষয়ে দ্রুততম সময়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে আগামীকাল বুধবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে।