অভিমত
জলাবদ্ধতা নিরসনে কি ‘স্পঞ্জ সিটি’র ধারণা গ্রহণ করবে ঢাকা
নিষ্কাশনব্যবস্থা ভালো না থাকায় রাজধানীতে বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। খাল–বিল, নালা দখল হয়ে যাচ্ছে, নালার ময়লা পরিষ্কার করা হচ্ছে না। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আধুনিক না হওয়ায় খাল ও নালা বন্ধ হয়ে আছে। এতে পাম্পস্টেশন থাকলেও তা কাজে আসছে না।
কয়েক দিন আগে কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে নাকাল রাজধানীবাসী। একটু বেশি বৃষ্টিতে চট্টগ্রামের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়। এমন নয় যে বাংলাদেশ মরুভূমির দেশ, আর বৃষ্টি নতুন বিষয়। যে দেশে বছরে ২ হাজার ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়, সে দেশের নগর ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা কর্তাব্যক্তিরা কীভাবে জলাবদ্ধতার কথা ভুলে থাকেন! দৃশ্যমান উন্নয়নের প্রমাণ দেখাতে নতুন নতুন স্থাপনা হচ্ছে। আর মাটির নিচের বিষয় বলেই কি পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা গুরুত্ব পাচ্ছে না? অবস্থাটা অনেকটা এমন—‘ওপরে ফিটফাট, ভেতরে সদরঘাট!’
আসলে আমাদের মতো গ্রীষ্মপ্রধান বৃষ্টিবিধৌত অঞ্চলে জলাবদ্ধতা নগরজীবনের নানা সমস্যার মধ্যে অন্যতম। নগরে জলাবদ্ধতা কেন হয়, সমাধানের উপায় কী—এগুলো স্বতঃসিদ্ধ বৈজ্ঞানিক বিষয়। সিটি করপোরেশন বা ওয়াসার প্রকৌশল বিভাগে যাঁরা আছেন, তাঁদের অবশ্যই এসব জানার কথা। পুরকৌশলে ‘হাইড্রোলজি’ একটি আবশ্যিক পাঠ্য বিষয়। এর বিষয়বস্তু মূলত আবর্তিত হয় ‘হাইড্রোলজিক্যাল সাইকেল’ বা পানিচক্র ঘিরে। বন্যা, জলাবদ্ধতা—এসব এখানকার আলোচ্য বিষয়!
জলাবদ্ধতার কারণ ও ক্ষতি
বৃষ্টির পর পানি মাটিতে পড়ে কয়েক ভাগে ভাগ হয়ে যায়। প্রাকৃতিক ভূমি হলে এই পানির ৫০ শতাংশের বেশি মাটি শুষে নেয়। বাকি পানির কিছু বাষ্প হয়ে উবে যায় কিংবা গাছ শুষে নেয় ইত্যাদি।
শেষমেশ ১০ শতাংশের মতো ‘রানঅফ’ বা ভূ-উপরিস্থ পানি হিসেবে মাটির ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পাশের খাল-বিল-নালা বা নদীতে পড়ে। এই প্রাকৃতিক ভূমি যখন নগরে রূপান্তরিত হয়, তখন কংক্রিটের বাড়িঘর আর পিচঢালাই রাস্তা ভেদ করে পানি মাটিতে ঢুকতে পারে না। ঢাকার অবস্থা আরও করুণ। এখানে ভূগর্ভে পানি যাওয়ার পরিমাণ ১০ শতাংশের নিচে নেমে গেছে।
নানা গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে, ঢাকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ইতিমধ্যে অনেক নিচে নেমে গেছে। অন্যদিকে ভূ-উপরিস্থ পানি হিসেবে যা পাশের নালায় যাচ্ছে, তা ১০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। বৃষ্টির পানি ধরে রাখার মতো প্রাকৃতিক জলাধার, যেমন পুকুর-খাল-বিল প্রায় প্রতিবছর কমছে। নিশ্চিহ্ন হচ্ছে খোলা জায়গা বা মাঠ।
এই ভূ-উপরিস্থ পানি দ্রুত সরে যেতে যে ধরনের নিষ্কাশনব্যবস্থা বা খাল-নালা থাকার কথা, রাজধানীতে তা খুবই অপ্রতুল। যা কয়েকটা আছে, তা-ও ময়লা-আবর্জনায় ভরা। তাই পর্যাপ্তভাবে পানি নিষ্কাশিত হচ্ছে না। ফলে জলাবদ্ধতা এখানে নিয়তি। ঢাকার আরেকটি বিষয় উল্লেখ্য। বন্যা থেকে রক্ষার জন্য রাজধানী বাঁধ দিয়ে ঘেরা। ফলে পানি বের হওয়ার পথ হচ্ছে কয়েকটি পাম্পস্টেশন ও স্লুইসগেট। ভরা বর্ষায় স্লুইসগেট কাজ না–ও করতে পারে।
যেমন রাজধানীর পশ্চিমে পানি যাওয়ার মূল পথ দুটি—গোড়ানচাটবাড়ি ও কল্যাণপুর পাম্পস্টেশন। কিন্তু রাজধানীর পানি এই দুই পাম্পস্টেশনে পৌঁছার মতো পর্যাপ্ত পথ নেই। একইভাবে পাম্পস্টেশনের সামনের জলাধার দুটিও ক্রমে সংকুচিত হচ্ছে। ফলে শহরের ভেতরে পানি জমা ছাড়া উপায় নেই। এই জলাবদ্ধতার কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকির পাশাপাশি অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
নগরের সড়কের আস্তর উঠে গেলে তা মেরামতে যেমন শত শত কোটি টাকা খরচ হয়, তেমনি সময় নষ্ট হয়। মানুষ কাজে যেতে পারেন না। মনের ওপর প্রভাব পড়ে। ডেঙ্গু মহামারির একটি অন্যতম কারণও এই জলাবদ্ধতা।
বর্জ্য একটি বড় সমস্যা
বাসার টয়লেট বা যেখান দিয়ে বাসার পানি বাইরের নালায় যায়, তার মুখে জালের মতো ছাঁকনি লাগানো থাকে। বাসার বড় বর্জ্য যাতে নালায় ঢুকতে না পারে, সে জন্য এই ব্যবস্থা। একইভাবে সড়কের পানি যেখানে নালায় ঢোকে, সেখানেও ছাঁকনি থাকে। শহরের নিষ্কাশনব্যবস্থা যত বর্জ্যমুক্ত রাখা যাবে, পানির গতি ও ধারণক্ষমতা তত বাড়বে। উন্নত দেশে এসব সুরক্ষার পরও পানিনিষ্কাশনব্যবস্থার বিভিন্ন স্তরে বর্জ্য ট্র্যাপ করার ব্যবস্থা থাকে। আর আমাদের নিষ্কাশনের পথগুলো বর্জ্যে রীতিমতো বন্ধ হয়ে আছে। ফলে যে পানি ১ ঘণ্টায় নেমে যেত, তা ১০ ঘণ্টায়ও নামতে পারছে না।
রাজধানীতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা থাকলেও তা অপ্রতুল ও ত্রুটিপূর্ণ। বিশেষ করে পানিনিষ্কাশনব্যবস্থায় বর্জ্য প্রবেশ ঠেকাতে কোনো উদ্যোগ নেই। নতুন ড্রেনেজ মাস্টারপ্ল্যানেও নালা থেকে বর্জ্য সরানোর কথা বলা আছে ভাসা-ভাসা। অথচ এটি আমাদের বড় একটি সমস্যা। এতেও অনেক প্রযুক্তিগত সমাধান আছে। ভরটেক্স, ফ্লোটিং ট্র্যাশ ট্র্যাপ, ট্র্যাশ নেট বা এসএসডি। হাতিরঝিলে স্পেশাল সিওয়েজ ডাইভারশন স্ট্রাকচার (এসএসডিএস) স্থাপন করা হয়েছে। কথা ছিল এসএসডিএসগুলো হ্রদে আবর্জনার প্রবেশ ঠেকাবে; কিন্তু এই এসএসডিএসের অনেকগুলো এখন অকেজো।
সমাধান কী
যেকোনো সমস্যা থেকে উত্তরণে দুটি উপায় থাকে। একটি হচ্ছে ‘প্রোঅ্যাকটিভ বা প্রতিরোধমূলক’, অন্যটি ‘রিঅ্যাকটিভ বা প্রতিকারমূলক’। খোলা জায়গা, খাল-নালা আর জলাধার রক্ষা করা গেলে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত হলে সমস্যা এতটা জটিল হতো না। এখন সমস্যা এতটাই জটিল যে সমাধানের পথ বের করা বেশ ব্যয়সাপেক্ষ। প্রযুক্তিগত সমাধান যে নেই, তা নয়।
তবে যে কাজ ১০ টাকায় হয়ে যেত, সেটি করতে এখন ১০০ টাকা লাগবে। উন্নত দেশগুলো বরাবরই প্রতিরোধমূলক তথা সঠিক ভূমি ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করেছে। আবার কিছু উন্নয়নশীল দেশ সমস্যা প্রকট হওয়ার পর সবকিছু ঢেলে সাজিয়ে সমাধানের পথ বের করেছে।
দক্ষিণ কোরিয়ায় সড়ক ও আবাসন এলাকা ভেঙে খাল খননের নজির আছে। শতকোটি ডলার খরচ করে টোকিওতে মাটির নিচে রীতিমতো কৃত্রিম নদী খনন করা হয়েছে। চীন সম্প্রতি ‘স্পঞ্জ সিটি’ ধারণা প্রবর্তনের মাধ্যমে অনেক শহরের জলাবদ্ধতা নিরসন করেছে।
স্পঞ্জ সিটির ধারণা
স্পঞ্জ সিটি শব্দটি থেকেই এই ধারণা আঁচ করা যায়। অর্থাৎ একটি শহর স্পঞ্জের মতো আচরণ করবে। স্পঞ্জ যেমন পানি শুষে নেয় বা ধরে রাখতে পারে, ঠিক তেমনই। শহরজুড়ে যতভাবে সম্ভব এমন ব্যবস্থা গড়ে তোলা, যাতে পানি মাটিতে চলে যায়। যেমন ফুটপাত এমনকি সড়ক এমন নির্মাণসামগ্রী দিয়ে প্রস্তুত করা, যার ভেতর দিয়ে বৃষ্টির পানি মাটিতে চলে যায়। চীনে শহরের নানা স্থানে বিনোদনের জন্য ওয়াটার পার্ক করা হয়েছে। প্রতিটি বাড়িতে বৃষ্টির পানি ধরে রাখতে আধার নির্মাণ বাধ্যতামূলক ও ছাদকৃষিকে উৎসাহিত করা হয়েছে। খাল পুনঃখনন ও ধারণক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। জলাধার ও খোলা জায়গা এমনভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে, যাতে পানি ধারণের ক্ষমতা আরও বেড়ে যায়।
উন্নত দেশগুলোতে এসব ধারণা অবশ্য বরাবরই ছিল। যেমন ২০০০ সালের দিকে জাপানে অবস্থানকালে শুনেছিলাম, জাপানের প্রতিটি খেলার মাঠ একেকটা পুকুরের মতো। কীভাবে সম্ভব? আসলে খেলার মাঠের নিচের ২০-৩০ ফুট মাটি প্রথমে সরিয়ে নেওয়া হয়। তারপর মাটির বদলে পাথর-নুড়ি আর বালু দিয়ে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে এমনভাবে স্তরবিন্যাস করা হয়, যাতে ওই মাঠ আগের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি পানি শোষণ বা ধারণ করতে পারে।
বাংলাদেশে কি স্পঞ্জ সিটি সম্ভব
আসলে স্পঞ্জ সিটি ধারণা এমন যে এতে হাজার রকমের পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে। মূল কথা, মাটির পানি শোষণের ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং বৃষ্টির পানি ধরে রাখার উপায় খোঁজা। কিছু পদ্ধতি অনেক আধুনিক; কিন্তু ব্যয়বহুল। তবে ‘লো হ্যাঙ্গিং ফ্রুট’ বা সহজে বাস্তবায়নযোগ্য কিছু প্রযুক্তি বা পন্থা আছে, যা বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করতে পারে।
যেমন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং, ছাদকৃষি, হ্রদের ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি, পানিনিষ্কাশনব্যবস্থার সংযোগ বাড়ানো। এসব ব্যবস্থা নিলে পাম্পস্টেশন পর্যন্ত পানি সহজে পৌঁছাতে পারে। নতুন করে কয়েকটি পাম্পস্টেশন বসানো যায়। পানিনিষ্কাশনব্যবস্থার সংযোগ ও পানি বের করার পথ তৈরি এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ভূমির ঢাল বিবেচনায় নিয়ে সঠিকভাবে নিষ্কাশনের পাইপগুলো বসানো হয়েছে কি না, তা-ও গুরুত্বপূর্ণ। ঢাকার অনেক জায়গায় এই ঢাল ত্রুটিপূর্ণ পাওয়া গেছে।
আশার কথা, হাতিরঝিলসহ ঢাকায় কয়েকটি হ্রদ এখনো অক্ষত আছে। তবে এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ ভালো হচ্ছে না। প্রতিবছর হ্রদে পলি জমছে। শুষ্ক মৌসুমে তা সরিয়ে হ্রদগুলোর গভীরতা তথা পানির ধারণক্ষমতা বাড়ানো যায়। পাম্পস্টেশনের সামনের জলাধারগুলোও প্রতিবছর খনন করা উচিত।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হতে পারে ‘রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং’ বা বৃষ্টির পানি ধরে রাখা। পানি ধরে রাখা শুধু জলাবদ্ধতা কমাবে না, শহরে পানির সরবরাহ বৃদ্ধির মাধ্যমে ওয়াসার ওপর চাপও কমাবে। ভাবুন একবার, রাজধানীর প্রতিটি বাড়ির নিচে একটি করে পানির ট্যাংক আছে, যাতে বৃষ্টির পানি জমা করা যায়। তাহলে হাজার হাজার বাড়ির ছাদ ও লনের পানি সেখানে জমা হচ্ছে। তার অর্থ, সড়ক বা নালায় পানি কম যাচ্ছে। এতে জলাবদ্ধতা কমে যাবে। সেই পানি পরে ‘নন-পোর্টেবল’ ব্যবহার যেমন টয়লেট ফ্ল্যাশিং, গাড়ি ধোয়া ইত্যাদি কাজে ব্যবহার করা সম্ভব। বাসায় ব্যবহৃত পানির বড় একটি অংশ যায় টয়লেট ফ্ল্যাশিংয়ে। একবার ফ্ল্যাশ করলে ১০ থেকে ১৫ লিটার পানি চলে যায়। এভাবে ওয়াসার পানির ওপর চাপ কমানো যায়।
অন্যদিকে বৃষ্টির পানির ট্যাংকের চারপাশ ছিদ্রযুক্ত হলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর বাড়বে। রাজধানীতে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর কোথাও কোথাও ৩০০ থেকে ৫০০ ফুট নিচে নেমে গেছে, যা বাস্তুতন্ত্রের জন্য মারাত্মক হুমকি। অন্যদিকে ছাদকৃষির বেলায়ও একইভাবে প্রতিটি ফুলের টব কিছু না কিছু বৃষ্টির পানি ধরে রাখছে। এ ধরনের অনেকগুলো সহজসাধ্য প্রযুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমেই স্পঞ্জ সিটি ধারণার অনেকটা সুফল পাওয়া সম্ভব। তবে সরকারি পর্যায়ে চীনের এই অভিজ্ঞতাকে বড় শহরগুলোতে বাস্তবায়নে একটি নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়াও প্রয়োজন।
জনগণের সচেতনতাও গুরুত্বপূর্ণ। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোডে (বিএনবিসি) বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে কিছু জায়গা খোলা রাখার কথা বলা হয়েছে। সেই খোলা জায়গা দিয়ে পানি মাটিতে প্রবেশ করবে, এটাও কিন্তু এর একটি উদ্দেশ্য। কিন্তু দুঃখের বিষয়, জনগণ এ বিষয়ে একেবারেই অজ্ঞ। তাই তারা খালি জায়গা আবার কংক্রিট দিয়ে ভরাট করে গাড়ি পার্কিং বা তত্ত্বাবধায়কের থাকার ব্যবস্থা করে।
সরকারি ব্যবস্থাপনা সংস্থার দায়িত্ব
সম্ভবত সরকার সব সময় এমন কিছু বানাতে চায়, যা দৃশ্যমান। যেমন বড় দালান, সড়ক বা ফ্লাইওভার। মাটির নিচের বিষয় বলেই হয়তো পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা গুরুত্ব পাচ্ছে না। অবশ্য কিছু দৃশ্যমান বিষয়েও গাফিলতি রয়েছে। খাল-নালা দখল হয়ে যাচ্ছে, নালার ময়লা পরিষ্কার করা হচ্ছে না। অন্তত বর্ষার আগে একবার হলেও তো নালাগুলো বর্জ্যমুক্ত করা যেত। তা ছাড়া রাজধানীর খোলা জায়গাগুলো সংরক্ষণ করার ক্ষেত্রে সবার আগে সরকারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
কেননা, ঢাকায় জমির দাম এত বেড়ে গেছে যে সাধারণ মানুষের পক্ষে জায়গা খোলা রাখা প্রায় অসম্ভব। দুঃখের বিষয়, সরকার নিজেই অনেক খোলা জায়গায় সরকারি স্থাপনা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে, যা পরে গণ-আন্দোলনের মুখে বন্ধ করা হয়েছে। যেমন সোহরাওয়ার্দী ও ওসমানী উদ্যান। সরকারের তো বরং উচিত ছিল, ব্যক্তিমালিকানাধীন খোলা জায়গাগুলো অধিগ্রহণ করে সেখানে পার্ক আর পুকুর বানানো।
সর্বোপরি সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের অভাব লক্ষণীয়। আসলে রাজধানীকে বাসযোগ্য করতে হলে অবশ্যই এর পানি ব্যবস্থাপনাকে গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ, আমরা গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলের দেশ। বিল্ডিং কোডে পরিবর্তনসহ বিভিন্ন নীতিমালা বা আইন তৈরি করে হলেও এই সমস্যার সমাধানে সচেষ্ট হতে হবে।
রাজধানীবাসীরও দায়িত্ব আছে। সঠিক জায়গায় ময়লা ফেলা, খাল-নালা ভরাট না করা কিংবা বিল্ডিং কোড মেনে বাড়ি বানানো ইত্যাদি ক্ষেত্রে তাঁদের সচেতন হতে হবে।
মো. সিরাজুল ইসলাম অধ্যাপক, সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়