রাজধানীতে ধরপাকড়, বিএনপির ৩৬৬ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার

গ্রেপ্তার হওয়া বিএনপির নেতা–কর্মীদের প্রিজন ভ্যানে আদালতে নেওয়া হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে একটার দিকে তোলা
ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে গতকাল বুধবার রাতেও রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ধরপাকড় চালিয়ে কয়েক শ নেতা–কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে কেবল নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের কাছাকাছি মিডওয়ে হোটেল থেকেই দলটির ৫০ জনের বেশি নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে। এর বাইরে বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেককে আটক করলেও সে সংখ্যা কত, আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত পুলিশ তা আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি।

আজ দুপুরে ডিএমপির একটি সূত্র জানায়, গতকাল রাতে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) মোট ৪১১ জনকে গ্রেপ্তার করে। তাঁদের মধ্যে বিএনপির ৩৬৬ নেতা-কর্মী রয়েছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার রাতে গ্রেপ্তার ৭৫ নেতা-কর্মীকে গতকাল আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

এদিকে আজ বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, তাদের মহাসমাবেশে যোগ দিতে আসা তিন শর বেশি নেতা-কর্মীকে পুলিশ এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করেছে।

আরও পড়ুন

পুলিশ সূত্র জানায়, গতকাল রাত ১০টার দিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা (ডিবি) মতিঝিল বিভাগ নয়াপল্টনে হোটেল মিডওয়েতে অভিযান চালায়। দুই ঘণ্টা ধরে অভিযান চালায়। এ বিষয়ে আজ সকালে ডিবির মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার রাজীব আল মাসুদ প্রথম আলোকে বলেন, হোটেল মিডওয়েতে অভিযান চালিয়ে অর্ধ শতাধিক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। তাঁর দাবি, আটক ব্যক্তিরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির জন্য ওই হোটেলে জড়ো হয়েছিলেন।

তবে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তাদের কর্মসূচিতে যোগ দিতে আসা নেতা-কর্মীদের অনেকে মিডওয়ে ও পাশের ভিক্টোরিয়া হোটেলে উঠেছিলেন। সেখানে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। আটক নেতা-কর্মীদের মধ্যে আছেন ফেনী জেলার বিএনপির সদস্যসচিব আলাল উদ্দিন, যুগ্ম আহ্বায়ক এয়াকুব নবী, জেলা যুবদলের সহসভাপতি শাহাদাত হোসেন (সেলিম), জেলা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক দাউদুল ইসলাম (মিনার), জেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক জাকের হোসেন (রিয়াদ), জাতীয়তাবাদী হেল্প সেলের প্রধান সমন্বয়ক সুমন আহসান, ফেনী সদর উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মেজবাহ উদ্দিন মিয়াজী, সদর উপজেলার ধলিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুর নবী, সাংগঠনিক সম্পাদক নাসির উদ্দিন, বালিগাঁও ইউনিয়ন বিএনপির সদস্যসচিব কাজী কামরুল হাসান, যুগ্ম আহ্বায়ক নুর নবী, ফেনী পৌর ১৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহাব উদ্দিন, বালিগাঁও ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি আরিফুল ইসলাম, সদর উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী শাকিল, তুহিন, সোহাগ, সাইফুর রহমান, রুবেল পাটোয়ারী ও সোনাগাজী ৭ নম্বর ইউনিয়নের সমির খান ও জাহিদুল ইসলাম প্রমুখ।
গতকাল রাতে পুলিশের মিরপুর বিভাগের বিভিন্ন থানায়ও অভিযান চালানো হয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের একজন দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তা। তবে আজ সকালে যোগাযোগ করা হলে পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার মো. জসীম উদ্দীন আটকের মোট সংখ্যা জানাতে পারেননি।

আরও পড়ুন

তবে স্থানীয় সূত্রের বরাত দিয়ে প্রথম আলোর রাজবাড়ী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মহাসমাবেশে যোগ দিতে আসা রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের ১৯ নেতা-কর্মীকে গতকাল রাতে ঢাকার মিরপুরের বিভিন্ন স্থান থেকে আটক করা হয়।

আটক হওয়া নেতা-কর্মীরা হলেন—মুজাহিদুল ইসলাম, জিহাদুল ইসলাম, কাউসার প্রামাণিক, নবী উল্লাহ, মুকুল মিয়া, আবদুল রব, বদিউর রহমান, সামিউল আলম, রেজাউল ইসলাম, বক্কার প্রামানিক, তারিক প্রামাণিক, লিটন প্রামাণিক, আনিসুর রহমান, নজরুল ইসলাম, সজীব রাজা, ইমরান হোসেন, জাহিদ হোসেন, মো. কনক, ফজল হোসেন।

রাজবাড়ী জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও রাজবাড়ী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নাসিরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশে যোগ দিতে ঢাকায় এসেছি। গ্রেপ্তার ও হয়রানি এড়ানোর জন্য নেতা-কর্মীরা আগেই ঢাকা এসেছেন। ঢাকায় আমাদের এক নেতা মুজাহিদুল ইসলামের কার্যালয় থেকে একসঙ্গে ১৩ জনকে আটক করা হয়েছে। এমনকি কার্যালয়ের এক কর্মীকেও আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’

পুরান ঢাকার কোতোয়ালি থানার পুলিশ মানিকগঞ্জের ঘিউর উপজেলা ছাত্রদলের পাঁচ নেতাকে আটক করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। তাঁরা হলেন—রবিউল দেওয়ান, আকাশ, মো. অমি, রাসেল মোল্লা ও মো. শাহরুখ।

আরও পড়ুন

এ ব্যাপারে আজ সকালে জানতে চাইলে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, আজ সকালে পুরান ঢাকার বাবুবাজারে নিরাপত্তাচৌকিতে তল্লাশির সময় রবিউল মোল্লা ও আকাশ পুলিশকে ফাঁকি দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে তাঁদের আটক করা হয়। তাঁরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে ঢাকায় এসেছিলেন।

গতকাল রাতে লালমাটিয়ার ডি ব্লকের বাসা থেকে আবদুল কুদ্দুস আকন নামের বিএনপির এক নেতাকে পুলিশ তুলে নিয়ে গেছে বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করেছে।

মোহাম্মদুর থানার ওসি মাহফুজুল হক ভূঁইয়া আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রাতে মোহাম্মদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে কিছু ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে বিএনপির নেতা আবদুল কুদ্দুস আছে কি না, তা খোঁজ নিয়ে পরে জানাতে পারবেন।

ঢাকা সিটি করপোরেশনের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাবেক সহসভাপতি মীর আশরাফ আলী আজম এবং তাঁর ছেলে ব্যারিস্টার মীর মুনতাহা আলীকে লালবাগের তাঁদের বাসা থেকে গতকাল গভীর রাতে ডিবি গ্রেপ্তার করে। মীর আশরাফ আলী আজমের স্ত্রী অভিযোগ করেন, গ্রেপ্তারের সময় পুলিশ পিটিয়ে তাঁর স্বামীর পা ও কোমর ভেঙে ফেলেছে। তাঁর ছেলে আইনজীবী পরিচয় দেওয়ার পর তাঁকেও ধরে নিয়ে গেছে। এ সময় তাঁর পুত্রবধূর সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করা হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি।

এ ব্যাপারে লালবাগ থানার ওসি হেলাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, গতরাতে ডিবির লালবাগ বিভাগের সদস্যরা মীর আশরাফ আলীর বাসায় অভিযান চালান, এ সময় তিনি তিনতলার জানালা দিয়ে লাফ দিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন, এতে তাঁর পা ভেঙে যায়। আশরাফ আলী এখন পুলিশ পাহারায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

আরও পড়ুন

এর বাইরেও বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালানো হয়। গ্রেপ্তার নেতা-কর্মীদের আজ দুপুরের পর থেকে প্রিজন ভ্যানে আদালতে আনতে দেখা যায়। এ সময় তাঁদের অনেকে দলীয় স্লোগান দিতে থাকেন।

আজ সকালে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, আগামীকাল শুক্রবারের সমাবেশে যোগ দিতে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ঢাকায় এসেছেন। তাঁদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ রাজধানীর বিভিন্ন আবাসিক হোটেলসহ বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালাচ্ছে। তাঁদের ৩০০ জনের বেশি নেতা-কর্মীকে পুলিশ এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করেছে।

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান আজ দুপুর ১২টার দিকে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, মঙ্গলবার রাত থেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আশপাশ ও ঢাকার বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড থেকে তাঁদের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘একটা গণতান্ত্রিক দেশে সভা-সমাবেশ করার সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে। অনুরোধ থাকবে, প্রশাসন যাতে এতে হস্তক্ষেপ না করে।’