সারাহর মতো সিদ্ধান্তে বাঁচবে প্রাণ, বন্ধ হবে কিডনি ব্যবসা

সারাহ ইসলাম
ছবি: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

দেশে অঙ্গ প্রতিস্থাপন চিকিৎসায় বড় ধরনের জট লেগেছিল। সেই জট খুলে দিলেন সারাহ ইসলাম ও তাঁর মা শবনম সুলতানা। এই পথ যদি ঠিক রাখা যায়, তাহলে কিডনির ব্যবসা কিছুটা হলেও বাধাগ্রস্ত হবে।

দেশে কত মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত, তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। প্রায় দেড় দশক ধরে বলা হচ্ছে, কোনো না কোনো কিডনি রোগে ভুগছেন, দেশে এমন মানুষের সংখ্যা প্রায় দুই কোটি। তাঁদের একটি অংশের বেঁচে থাকতে নিয়মিত ডায়ালাইসিস করতে হয়। ডায়ালাইসিস অনেক কষ্টের এবং এর খরচও অনেক বেশি। দেশে পর্যাপ্তসংখ্যক ডায়ালাইসিস কেন্দ্রও নেই।

কিডনি রোগীদের বেঁচে থাকার অন্য বিকল্পটি হচ্ছে কিডনি প্রতিস্থাপন। মানুষের কিডনি দুটি। একটি কিডনি অন্যকে দেওয়া যেতে পারে। একটি কিডনি নিয়ে মানুষ পুরোপুরি সুস্থ থাকতে পারেন কি না, তা নিয়ে দ্বিমত আছে। তারপরও একটি কিডনি দানের রীতি চলে আসছে।

এতকাল দেশে কিডনি প্রতিস্থাপন হতো নিকট আত্মীয়ের মধ্যে। এই নিকট আত্মীয় কে হবেন, তার সংজ্ঞা আইনে দেওয়া আছে। অনেকের কিডনির প্রয়োজন। অথচ কোনো নিকট আত্মীয়ের কাছ থেকে তাঁরা কিডনি পেতেন না। তাই কেউ কেউ কিডনি কিনতেন।

বিশ্বের অনেক দেশেই কিডনি কেনাবেচা হয়। এটা অবৈধ। অবৈধ হলেও এই ব্যবসা বাংলাদেশেও চলছে। দরিদ্র মানুষ তাঁদের একটি কিডনি বিক্রি করছেন অর্থের বিনিময়ে। অভিযোগ আছে, বিদেশ গিয়ে অবৈধ লেনদেন ও প্রতিস্থাপনের কাজ হয়। জয়পুরহাটের কালাইয়ের অনেক মানুষ এই অবৈধ কিডনি ব্যবসার শিকার।

কিডনি দরকার, কিন্তু কিডনি পাওয়া যাচ্ছে না—এর থেকে উত্তরণের পথ কী। উত্তরণের একটি পথ ‘ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্ট’ বা মৃত মানুষের অঙ্গ প্রতিস্থাপন। চিকিৎসাবিজ্ঞানের এই জটিল পথে অনেক দেশে অনেক আগেই হেঁটেছে। বাংলাদেশ মাত্র হাঁটা শুরু করল।

আরও পড়ুন

একটা পর্যায়ে চিকিৎসকেরা এটা নিশ্চিত হয়ে পড়েন যে রোগীকে আর বাঁচানো যাবে না। যে রোগী আর বাঁচবেই না, তাঁর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কী কাজে লাগানো যায়? কীভাবে কাজে লাগানো যায়, তা নিয়ে বিশ্বজুড়ে অনেক কথা হয়েছে। নৈতিকতা ও আইন নিয়ে বিতর্ক হয়েছে। বিতর্ক শেষ হয়নি।

একটি মানুষের কিডনি, কর্নিয়া, যকৃৎ, হৃৎপিণ্ডসহ বেশ কিছু অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অন্য বেশ কয়েকজনের শরীরে প্রতিস্থাপন করা যায়, বিশ্বের অনেক দেশেই তা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ এর অপেক্ষায় ছিল। দেশে এর জন্য আইন হয়েছে, একাধিক কমিটি হয়েছে। কিন্তু অঙ্গদানের জন্য মানুষ পাওয়া যাচ্ছিল না। এমন একটি পরিবারের সম্মতির অপেক্ষায় ছিলেন কিডনি প্রতিস্থাপন শল্য চিকিৎসকেরা।

দেশের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রগুলোয় (আইসিইউ) অনেক রোগী থাকেন, যাঁরা আর জীবনে ফিরে আসবেন না। এটা চিকিৎসকেরা জানেন, আত্মীয়রাও বুঝতে পারেন। এমন আত্মীয় বা পরিবার রাজি হলে আবারও ‘মৃত ঘোষিত’ ব্যক্তির অঙ্গ প্রতিস্থাপন করতে পারবেন চিকিৎসকেরা।

আরও পড়ুন

সারাহর দুটি কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে দুই নারীর শরীরে। তাঁদের একজনের স্বামী এই প্রতিবেদককে বলেছেন, নিকট আত্মীয়ের কাছ থেকে কিডনি তাঁরা পাননি।

আল্লাহর দানের মতো তাঁরা সারাহর কিডনি পেয়েছেন। এভাবে কিডনি বা অন্য কোনো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পাওয়া গেলে মানুষ কেনাবেচার পথে হাঁটবে না।

আরও পড়ুন