চালের জন্য কারও অপেক্ষা ২ ঘণ্টা কারও ৩ ঘণ্টা
চট্টগ্রাম নগরের বেসরকারি কারখানার শ্রমিক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম। দুই নম্বর গেট এলাকায় খোলা বাজারে পণ্য বিক্রির ট্রাক (ওএমএস) থেকে চাল কিনতে সকাল সাড়ে ৯টায় এসেছেন তিনি। আজ মঙ্গলবার প্রায় দুই ঘণ্টা অপেক্ষার পর চাল পেয়েছেন তিনি।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রায়ই দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। বাজার থেকে কম মূল্যে চাল পাওয়া যায় ওএমএসের ট্রাকে। এতে অন্তত ১০০ টাকা সাশ্রয় হয়। বর্তমানে বাজারে সেই ১০০ টাকার মূল্য অনেক। ওএমএসের ট্রাক থেকে ৩০ টাকা দরে ৫ কেজি চাল পাওয়া যায়। অপেক্ষার পর তাই চাল পেয়ে খুশি তিনি।
খোরশেদ আলম বলেন, রোজা রেখেও এই অপেক্ষা সন্তানদের কথা ভেবেই। চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলায় থাকেন তাঁর স্ত্রী ও তিন সন্তান। পরিবার ছেড়ে নগরে একাই থাকেন তিনি। ওএমএসের ট্রাক থেকে কেনা চাল নিজের জন্য কিছু রেখে বাকি অংশ পরিবারের কাছেই পাঠান তিনি। গত সপ্তাহেও একবার চাল কিনেছেন তিনি।
মঙ্গলবার নগরের দুই নম্বর গেট, ডিসি হিল ও ওয়াসা মোড় এলাকা ঘুরে দেখা গেছে ওএমএসের চাল কিনতে আসা মানুষের ভিড়। রোজার দিনেও পাঁচ কেজি চালের জন্য অপেক্ষা তাঁদের। কারও অপেক্ষা দুই ঘণ্টা,আবার কারও অপেক্ষা তিন ঘণ্টা।
ওয়াসা মোড় এলাকায় চাল কিনতে আসা বৃদ্ধ দিল মোহাম্মদ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বলেন, চার মেয়ের বিয়ে হয়েছে আগেই। এখন তিনি আর তাঁর স্ত্রী মিলে কোনোরকমে দিন পার করছেন। কোনো আয় নেই। ভিক্ষা করেই চলে সংসার। দিল মোহাম্মদ যখন সারিতে, তখন তাঁর সামনে আর মাত্র ১৫ জন। চাল পাবেন, এই আশায় মুখে হাসি তাঁর।
রোজা রেখে এসব মানুষের অপেক্ষা শুধু কম দামে চাল কেনার জন্য। কারণ, বাজার থেকে কিনতে গেলে আয়–ব্যয়ের হিসাব মিলে না। তাই রোদ কিংবা রোজার ক্লান্তিতেও অপেক্ষা শুধু পাঁচ কেজি চালের।
তবে নগরে ওএমএসের কার্যক্রম চলা এলাকাগুলোয় ট্রাকের সামনে দেখা গেছে বিশৃঙ্খলা। সারিবদ্ধভাবে সবাইকে দাঁড় করাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন খাদ্য পরিদর্শক ও বিক্রেতারা।
দুই নম্বর গেট শিশু কবরস্থানের সামনে ওএমএস কার্যক্রমের দায়িত্বে ছিলেন খাদ্য পরিদর্শক কামরুল আহসান। তিনি বলেন, গাড়ি আসার সঙ্গে সঙ্গেই সারিতে হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায়। তাঁদের সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করাতে হিমশিম খেতে হয়।