রোজা এলেও বাবার জন্য আর ইফতারি নিয়ে যায় না আলিনা

নিহত শিশু আলিনা ইসলাম
ফাইল ছবি

মা-বাবার আদরের একমাত্র সন্তান ছিল শিশু আলিনা ইসলাম আয়াত। পুরো বাসা মাতিয়ে রাখত পাঁচ বছরের শিশুটি। গত বছরের পবিত্র রমজান মাসে ইফতারের আগে মায়ের কাছে বায়না ধরত শরবত খাবে। কিন্তু এখন আলিনা না থাকায় কেউ আর বায়না ধরে না। বাসা থেকে বাবার জন্য দোকানে ইফতারিও নিয়ে যায় না। তাই বাসাজুড়ে এখন শুধুই বিষাদ।

আলিনার পরনের কাপড়, খেলনাসহ ব্যবহৃত নানা জিনিস দেখে দিন পার করছে পরিবারটি। নিখোঁজ হওয়ার আট দিন পর গত বুধবার চট্টগ্রাম নগরের পাহাড়তলী এলাকায় ১০ বছর বয়সী এক মেয়েশিশুর বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধারের পর এখন আলিনার কথা বারবার মনে পড়ছে তার মা-বাবার।

আলিনার পরনের কাপড়, খেলনাসহ ব্যবহৃত নানা জিনিস দেখে দিন পার করছে পরিবারটি। নিখোঁজ হওয়ার আট দিন পর গত বুধবার চট্টগ্রাম নগরের পাহাড়তলী এলাকায় ১০ বছর বয়সী এক মেয়ে শিশুর বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধারের পর এখন আলিনার কথা বারবার মনে পড়ছে তার মা-বাবার।

ইপিজেড থানার বন্দরটিলা এলাকায় থাকে আলিনার পরিবার। গত বছরের ১৫ নভেম্বর বাসার পাশে মক্তবে পড়তে যাওয়ার সময় নিখোঁজ হয় সে। ১০ দিন পর ২৫ নভেম্বর বাসার ভাড়াটে আবির মিয়াকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) গ্রেপ্তার করে।

নিহত শিশু আলিনা ইসলাম
ফাইল ছবি

পুলিশ বলছে, ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের জন্য আলিনাকে অপহরণ করেছিলেন আবির। পরে শিশুটি চিৎকার করলে তাকে গলা টিপে হত্যা করা হয়। এরপর লাশ ছয় টুকরা করে ফেলে দেন আবির। আলিনার পা ও খণ্ডিত মাথা উদ্ধার করেছে পিবিআই।

কোট: যখনই মেয়ের কথা মনে পড়ে, তখনই আলিনার জামা, আবার কখনো খেলনা নিয়ে থাকি। কিন্তু মনকে বোঝাতে পারি না।
শাহেদা ইসলাম, নিহত শিশু আলিনার মা

রোববার দুপুরে আলিনাদের বাসায় কথা হয় তার মা শাহেদা ইসলামের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সারাক্ষণ পুরো বাসা মাতিয়ে রাখত আলিনা। পবিত্র রমজানে ইফতারি তৈরির আগে সে বায়না ধরত ট্যাংয়ের গুঁড়া ও শরবত খাবে। আবার কখনো সে নিজ থেকে বলত শরবতে চিনি হয়েছে কি না দেখবে। ইফতারি তৈরি হলে সবাইকে ডাকাডাকি করত। এবারের রমজানে ইফতারে মেয়ে নেই।

আলিনাদের বাসায় তার ব্যবহৃত জিনিসপত্র দেখে বোঝার উপায় নেই, সে আর বেঁচে নাই। তার  কাপড়, খেলনা, বইয়ের ব্যাগ, জুতা সবই আছে। মা বলেন, যখনই মেয়ের কথা মনে পড়ে, তখনই তার জামা, আবার কখনো খেলনা নিয়ে থাকি। কিন্তু মনকে বোঝাতে পারি না।

শিশু আলিনার পরনের কাপড় দেখে দিন কাটে মা-বাবার। রোববার দুপুরে নগরের ইপিজেড এলাকায় আলিনাদের বাসায়
ছবি: প্রথম আলো

নিহত শিশুটির দাদা মনজুর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইফতারের টেবিলে বসলে মনটা ভেঙে যায়। শুধু মনে পড়ে নাতনির কথা।’

আলিনার বাবা সোহেল রানা স্থানীয় একটি মুদিদোকানের মালিক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘মেয়ে দোকানে ইফতারি নিয়ে আসত। গত বছরের রমজানেও নিয়ে এসেছিল। এবার আর আনে না। দোকানে এসে জিলাপি, দই খাওয়ার বায়না করত। এখন আর কেউ এসব করে না।’

শিশু আলিনাকে অপহরণ ও হত্যার ঘটনায় করা মামলা তদন্ত করছে পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পরিদর্শক মনোজ দে। তিনি রোববার প্রথম আলোকে বলেন, আলিনার ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। সেখানে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া আলিনার উদ্ধার করা শরীরের টুকরাগুলোর সঙ্গে তার মা-বাবার ডিএনএ নমুনার পরীক্ষা করা হয়। লাশের টুকরার সঙ্গে মা-বাবার ডিএনএ নমুনা মিলেছে। আবার আলিনাকে যে বাসায় টুকরা করা হয়েছিল, সেখান থেকে সংগৃহীত রক্তের নমুনার সঙ্গেও আলিনার ডিএনএ মিলেছে।

তদন্ত কর্মকর্তা আরও বলেন, আসামি আবিরের বন্ধু যিনি হত্যাকাণ্ডে সহায়তা করেছিলেন, তাঁর বয়স প্রমাণের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগে পরীক্ষা হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে প্রতিবেদন পাওয়া যাবে। আসামি নিজেকে কিশোর দাবি করে বয়স ১৭ বলেছেন পুলিশকে। কিন্তু তাঁর বয়স ১৮ বছরের বেশি হবে। ওই প্রতিবেদন পেলে আদালতে মামলার প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। গ্রেপ্তার আবিরসহ দুজন কারাগারে রয়েছেন।

এদিকে আলিনার বাবা সোহেল রানা বলেন, যত দিন পর্যন্ত আবিরের ফাঁসি না হবে, তত দিন তাঁদের মন শান্ত হবে না। আসামির যাতে ফাঁসি হয়, সে জন্য তিনি শেষ পর্যন্ত আইনি লড়াই লড়ে যাবেন।

আরও পড়ুন