বদলে যাচ্ছে কারাগারের নাম

কারা অধিদপ্তরের সদর দপ্তরে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। আজ মঙ্গলবার দুপুরে, বকশীবাজার, ঢাকাছবি: প্রথম আলো

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় ২ হাজার ৭০০–এর বেশি বন্দী পালিয়ে গিয়েছিলেন। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত সাত শতাধিক বন্দী পলাতক আছেন বলে জানিয়েছেন কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন।

কারা মহাপরিদর্শক বলেন, পলাতকদের মধ্যে জঙ্গি আছেন ৯ জন। আর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি আছেন ৬০ জন।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর বকশীবাজার এলাকায় কারা অধিদপ্তরের সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন।

কারা মহাপরিদর্শক আরও বলেন, সে সময় লুট হওয়া অস্ত্রের মধ্যে এখন পর্যন্ত ২৯টি অস্ত্র উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। অস্ত্র উদ্ধার ও পলাতক বন্দীদের গ্রেপ্তারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে।

বিএনপির নেতারা অভিযোগ করেছেন, দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগারে থাকার সময় অমানবিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। এই নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে বিচার করা উচিত। কারা কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে কী ভাবছে—সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে কারা মহাপরিদর্শক বলেন, তিনিও এমন সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেখেছেন। তবে খালেদা জিয়ার বিষয়ে কোনো অভিযোগ এখন পর্যন্ত তাঁদের কাছে কেউ দেননি। অভিযোগ পেলে তাঁরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখবেন।

কারাগারে বর্তমানে কতজন রাজনৈতিক বন্দী ও কতজন ভিআইপি বন্দী আছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে কারা মহাপরিদর্শক বলেন, রাজনৈতিক বন্দী বলতে তাঁদের কাছে কেউ নেই। কারণ, রাজনৈতিক কোনো মামলায় গ্রেপ্তার কাউকে কারাগারে আনা হয়নি। কারাগারে যাঁরা আছেন, তাঁরা সবাই বন্দী হিসেবে আছেন। আর ভিআইপি বন্দী বলতেও কোনো শব্দ নেই।

কারা মহাপরিদর্শক বলেন, কারাগারে বর্তমানে ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দী আছেন ১৬৩ জন। আরও ২৮ জন ডিভিশন পাওয়ার আবেদন করেছেন। তবে তাঁরা অনুমোদন পাননি।

আরও পড়ুন

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের কাছে বক্তব্যের কপি লিখিত আকারে দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, কারাগারকেন্দ্রিক সংশোধনের বিষয়টির ওপর অধিক গুরুত্বারোপের জন্য বাংলাদেশ জেলের নাম পরিবর্তন করে ‘কারেকশন সার্ভিসেস বাংলাদেশ’ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এতে আরও উল্লেখ করা হয়, মাদকাসক্তির বিষয়ে জিরো টলারেন্স কঠোরনীতি গ্রহণ করা হয়েছে এবং গত এক বছরে মাদকসেবী ২৯ জন সদস্যকে মাদক বহন, গ্রহণ ও সরবরাহে জড়িত থাকার অপরাধে ফৌজদারি মামলায় কারাগারে পাঠানোসহ বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এ–সংক্রান্ত সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কারা সদর দপ্তর নিজস্ব ডোপ টেস্টিং মেশিন সংগ্রহ করেছে।

কারা বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি এবং সব নিয়মবহির্ভূত বিষয়েও অধিদপ্তরের অবস্থান অত্যন্ত কঠোর বলে জানান কারা মহাপরিদর্শক। তিনি বলেন, বিগত এক বছরে বিভিন্ন অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বাধ্যতামূলক অবসর, ৩৪ জনকে চাকরিচ্যুত, ৪৪০ জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থাসহ ১৭২ জনকে প্রশাসনিক কারণে বিভাগের বাইরে বদলি করা হয়েছে।

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, বন্দীদের খাবারের তালিকায় প্রোটিনের পরিমাণ স্বল্প পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে এবং তা যৌক্তিক পর্যায়ে বাড়ানোর প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। ইতিমধ্যে তার অনুমোদন পাওয়া গেছে। এ ছাড়া সকালের নাশতা এবং বিশেষ দিবসের জন্যও খাদ্য বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে।

বন্দীদের উৎপাদনমুখী করার জন্য সুবিধাজনক স্থানে ‘কারেকশনাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক’ তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন।

সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন বলেন, প্রতিবছর ৫০ হাজারের মতো সক্ষম জনবল কারাগারে অবস্থান করে। এর মধ্যে ২০ থেকে ২৫ হাজার জনবলকে যদি উৎপাদনমুখী করা যায়, এতে একদিকে সরকারের যেমন রাজস্ব সাশ্রয় হবে, একইভাবে বন্দীদের মধ্যে অনেকেই পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি, তাঁরাও কারাগার থেকেই পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা দিতে পারবেন।

বড় দুর্নীতির জায়গা ছিল কারা অধিদপ্তর এই তথ্য জানিয়ে সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন বলেন, ইতিমধ্যে তাঁরা এই বিষয় কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন।

কারাগারে থেকেই গোপনে মুঠোফোন ব্যবহার, বন্দীদের চিকিৎসাসেবার অপ্রতুলতা এবং কারাগারে মাদকের ব্যবহারসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন। তিনি বলেন, গত বছরের ৫ আগস্টের পর তাঁরা এক হাজারের বেশি অভিযান পরিচালনা করে বন্দীদের কাছ থেকে ৮০ লাখ টাকা উদ্ধার করেছেন।

কারাগারে বন্দীদের চিকিৎসাসেবায় নানা সমস্যার কথা তুলে ধরে সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন বলেন, বর্তমানে কারাগারে ১৪১ জন চিকিৎসক আছেন। আর অস্থায়ী চিকিৎসা করেছেন ১০৩ জন। কারাবন্দী অবস্থায় কারও মৃত্যু হলে সে ঘটনার তদন্ত হয়, ময়নাতদন্ত হয়। অবশেষে বিচার বিভাগীয় তদন্ত পর্যন্ত হয়।

সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন আরও বলেন, সব সেবাপ্রত্যাশী ও কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সেবার মান বৃদ্ধি পেলেও কারা হাসপাতালে প্রয়োজনীয়সংখ্যক চিকিৎসক নিয়োগ, কারাগারগুলোতে অ্যাম্বুলেন্স সরবরাহ, কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শতভাগ আবাসন সমস্যা নিরসন, বেতন গ্রেড পরিবর্তন ইত্যাদি বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো আশাব্যঞ্জক প্রতিশ্রুতি পাওয়া যায়নি। তবে কারা বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় একত্র হয়ে এই যৌক্তিক চাহিদা পূরণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।