পুলিশের খোয়া যাওয়া ৪ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়নি আড়াই মাসেও

আগ্নেয়াস্ত্রফাইল ছবি

ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশের দিন গত বছরের ২৮ অক্টোবর রাজধানীর পল্টন, শাহজাহানপুর ও আশপাশের এলাকায় সংঘর্ষের সময় পুলিশের কাছ থেকে শটগান ও পিস্তলসহ মোট আটটি আগ্নেয়াস্ত্র খোয়া যায়। এর মধ্যে চারটি আগ্নেয়াস্ত্র পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে। বাকি তিনটি পিস্তলসহ চার আগ্নেয়াস্ত্র আড়াই মাসেও উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।

পুলিশের একটি সূত্র বলছে, উদ্ধার হওয়া আগ্নেয়াস্ত্রগুলো ঘটনার দিন সংঘর্ষের সময় আহত পুলিশ সদস্যের কাছ থেকে বাহিনীর অন্য সদস্যরা নিয়ে রেখেছিলেন। তবে এ ঘটনায় করা মামলা তদন্তের সঙ্গে যুক্ত পুলিশ কর্মকর্তারা তা অস্বীকার করেছেন। তাঁদের দাবি, অস্ত্রগুলো পল্টন ও আশপাশের এলাকায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে।

পুলিশের এসব আগ্নেয়াস্ত্র খোয়া যাওয়ার ঘটনায় রাজধানীর পল্টন, মতিঝিল ও শাহজাহানপুর থানায় বিএনপি নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে পৃথক চারটি অস্ত্র ছিনতাইয়ের মামলা করা হয়েছে।

পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার হায়াতুল ইসলাম খান প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির মহাসমাবেশের দিন শাহজাহানপুর রেল কলোনি থেকে এক পুলিশ সদস্যকে আহত করে একটি পিস্তল, রাজারবাগ পুলিশ লাইনস ৩ নম্বর গেটের সামনে থেকে আরেক পুলিশ সদস্যের কাছ থেকে একটি পিস্তল, কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে পুলিশ সদস্যদের কাছ থেকে একটিটি পিস্তল, দুটি শটগান, একটি গ্যাসগান ও একটি চাইনিজ রাইফেল এবং বক্স কালভার্ট রোড এলাকায় এক পুলিশ সদস্যকে মারধর করে তাঁর কাছ থেকে একটি শটগান ছিনিয়ে নেওয়া হয়।

ঘটনার রাত থেকে পরদিন পল্টন ও আশপাশের এলাকা থেকে দুটি শটগান, একটি চাইনিজ রাইফেল ও একটি গ্যাসগান ভাঙা ও পোড়া অবস্থায় পাওয়া যায়। বাকি তিনটি পিস্তল ও একটি শটগান এখনো উদ্ধার করা যায়নি।

পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, বিএনপির সমাবেশে সারা দেশ থেকে ঢাকায় লোক এসেছিলেন। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে তাঁদের সবারই অসংখ্য ছবি। তাঁদের মধ্যে অস্ত্র ছিনতাইকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারে সময় লাগছে।

কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল মোড়ে পুলিশের কাছ থেকে পিস্তল ছিনতাই হওয়ার ঘটনায় করা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পল্টন থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. ইউসুফ ২ নভেম্বর আদালতে দেওয়া পুলিশ প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছিলেন, গ্রেপ্তার বিএনপি নেতা আমিনুল হক ও যুবদল নেতা সাজ্জাদুল মিরাজের পরস্পর যোগসাজশে লাঠিসোঁটা ও ইটপাটকেল নিয়ে পুলিশের ওপর আক্রমণ করেন। তাঁরা বলপ্রয়োগ করে একটি পিস্তল, দুটি শটগান, একটি রাইফেল, একটি গ্যাসগান ও কিছু গুলি ছিনিয়ে নিয়ে যায়। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা অস্ত্র ও গুলি লুটের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।

পিস্তল ছিনতাই হওয়ার ঘটনায় শাহজাহানপুর থানায় করা মামলার এজাহারে বলা হয়, ২৮ অক্টোবর বিকেল পৌনে চারটার দিকে সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) সাইফুল ইসলামসহ কয়েক পুলিশ সদস্য দুটি মোটরসাইকেলে করে যাচ্ছিলেন। কমলাপুর রেলওয়ে অফিসার্স কোয়ার্টারে সামনে তাঁরা পৌঁছামাত্র বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে দলের নেতা-কর্মীরা লাঠিসোঁটা, ইটপাটকেল, ককটেল ও পেট্রল নিয়ে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালাতে থাকেন। এ সময় পুলিশ সদস্যরা শটগান দিয়ে গুলি ছোড়েন। তবে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ছত্রভঙ্গ না হয়ে পরস্পর যোগসাজশে ইটপাটকেল ছুড়ে সরকারি কাজে বাধা দেন। তাঁরা এএসআই সাইফুলসহ দুই পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে আহত করেন। দুটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেন। একপর্যায়ে হামলাকারীরা সাইফুলের কাছ থেকে পিস্তল ছিনিয়ে নেন।

পল্টন, মতিঝিল ও শাহজাহানপুরে তিনটি পিস্তল ও একটি শটগান খোয়া যাওয়ার ঘটনায় হওয়া মামলাগুলো প্রথমে সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ তদন্ত করেছে। তবে এখন সেগুলোর দায়িত্ব পেয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা (ডিবি) বিভাগ তদন্ত।

পল্টন থানায় হওয়া মামলার বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পরিদর্শক আলমগীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল হক ও ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের সদস্যসচিব সাজ্জাদুল মিরাজসহ তিনজনকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। তবে ছিনতাই হওয়া পিস্তলটি উদ্ধার কিংবা এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিবির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ২৮ নভেম্বর বিএনপির মহাসমাবেশের দিন পল্টন এলাকা থেকে পুলিশ সদস্যদের মারধর করে একটি পিস্তল, দুটি শটগান, একটি চাইনিজ রাইফেল, একটি গ্যাসগান ও কিছু গুলি ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছিল। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সেদিন আহত পুলিশ সদস্যের কাছে থাকা দুটি শটগান, একটি রাইফেল ও একটি গ্যাসগান কর্তব্যরত অন্য পুলিশ সদস্যরা তাদের কাছে নিয়ে রেখেছিলেন। পরে গণনা করে মিলিয়ে দেখার সময় সেগুলো অন্য পুলিশ সদস্যদের কাছে পাওয়া যায়।

তবে সেদিন একজন এসআইয়ের কাছ থেকে ছিনতাই হওয়া গুলিভর্তি আরেকটি পিস্তল উদ্ধার করা যায়নি। সেটি উদ্ধারে ডিবি এখন কাজ করছে।

রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের ৩ নম্বর ফটকের সামনে থেকে ও বক্স কালভার্ট রোড থেকে পুলিশকে আহত করে একটি শটগান ও একটি পিস্তল ছিনিয়ে নেওয়ার মামলা তদন্তের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা জানান, অস্ত্রগুলো উদ্ধারে কাজ চলছে।

আরও পড়ুন

শাহজাহানপুর রেলকলোনি থেকে পুলিশের কাছ থেকে পিস্তল ছিনতাইয়ের ঘটনায় হওয়া মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ডিবি মতিঝিল বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. আতিকুল ইসলাম গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ছিনতাই হওয়া পিস্তলটি উদ্ধার করা যায়নি। তবে সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, যে ব্যক্তি পুলিশ সদস্যকে আহত করে পিস্তলটি ছিনিয়ে নিয়ে গেছেন, সেই জটলার পাশে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ১২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আবুল কালাম ছিলেন। কিন্তু তিনি অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়া ব্যক্তিকে শনাক্ত করতে পারেননি। এখন প্রচলিত পদ্ধতিতে তদন্ত করে অস্ত্র উদ্ধারে চেষ্টা চলছে।