পুলিশ ক্যাডারে ‘হতাশা দূর করতে’ পদোন্নতি শিগগিরই

পুলিশের ২৯০ কর্মকর্তার মধ্যে অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ জনকে এবং এসপি হিসেবে ১৫০ জনকে পদোন্নতির প্রস্তাব রয়েছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)

জাতীয় নির্বাচনের আগে পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের ‘হতাশা দূর করতে’ ২৯০ কর্মকর্তাকে শিগগিরই পদোন্নতি দেওয়া হতে পারে। সুপারনিউমারারি (সংখ্যাতিরিক্ত) পদ সৃষ্টি করে এই পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে। পদোন্নতির প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো হয়ে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে যাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন।

পুলিশের ২৯০ কর্মকর্তার মধ্যে অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত ডিআইজি) পদে ১৪০ জনকে ও পুলিশ সুপার (এসপি) হিসেবে ১৫০ জনকে পদোন্নতির প্রস্তাব রয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এসপি পদে পদোন্নতির বিষয়টি অতি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে।

গত জুলাইয়ে পুলিশের তিন কর্মকর্তা অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক পদে পদোন্নতি পান। আরও কিছু পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এরপর থেকে নিজেদের বঞ্চিত উল্লেখ করে পদোন্নতি চেয়ে আসছিলেন পুলিশ ক্যাডারের কিছু কর্মকর্তা। এর ধারাবাহিকতায় পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯ কর্মকর্তাকে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়ার এ প্রস্তাব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠায়।

পদের চেয়ে পদোন্নতি বেশি হলে সমস্যা হয়। কিন্তু একই রকমের পদের একটি অংশের যখন পদোন্নতি হয় না, তখন তাঁদের মনোবল ঠিক রাখার জন্য অনুমোদিত পদের বাইরে গিয়ে এ ধরনের পদোন্নতি দেওয়া হয়।
নুরুল হুদা, সাবেক আইজিপি

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পদোন্নতির বিষয়টি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠালে মন্ত্রণালয় ৭ সেপ্টেম্বর অস্থায়ী ‘সুপারনিউমারারি’ পদে ১৪০ জনকে অতিরিক্ত ডিআইজি ও ১৫০ জনকে এসপি হিসেবে পদোন্নতির অনুমোদন দেয়। এই সুপারনিউমারারি পদের মেয়াদ হবে পদ সৃষ্টির দিন থেকে এক বছর। পদোন্নতি পেলেও তাঁরা আগের পদে দায়িত্ব পালন করবেন। যিনি পদোন্নতি পাবেন, তাঁর বেতন-ভাতা একই থাকবে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর পদোন্নতির বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন প্রয়োজন হবে। এরপর যাবে সচিব কমিটিতে যাবে। সেখান থেকে পাঠানো হবে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে। প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন। তবে শিগগিরই সব প্রক্রিয়া শেষ হবে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে। গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে এসপি পদে পদোন্নতির বিষয়টিকে।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রায় দেড় মাস আগে এত কর্মকর্তার পদোন্নতির বিষয়টিকে কেউ কেউ ‘নির্বাচনী পদোন্নতি’ হিসেবে দেখছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রশাসন ক্যাডারের বিসিএস ব্যাচের পদোন্নতির সঙ্গে সমন্বয় চেয়ে গত তিন মাসে পুলিশের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তা দেখা করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে।

তাঁকে পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তাদের ক্ষোভের কথা জানানো হয়েছে। যদিও সবাই পদোন্নতি পাবেন—এমন নিশ্চয়তা নেই। সূত্র বলছে, যাঁরা দীর্ঘদিন পদোন্নতি পাননি, কোনো না কোনো যুক্তিতে এতদিন তাঁদের পদোন্নতি হয়নি। তাই যথাযথভাবে যাচাই–বাছাই করেই পদোন্নতি দেওয়া হবে।

আরও পড়ুন

পুলিশের একজন ডিআইজি নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রশাসন ক্যাডারে ১৫ ও ১৭ বিসিএস ব্যাচের কর্মকর্তারা অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন, যেখানে ১৫ ও ১৭ বিসিএস ব্যাচের পুলিশ ক্যাডারের কোনো কর্মকর্তাই অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাননি। এটা আমাদের জন্য হতাশাজনক।’

 ২৮তম বিসিএসের পদোন্নতি না পাওয়া অনেক কর্মকর্তার মধ্যেও ক্ষোভ রয়েছে। এই ব্যাচের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের ব্যাচের ২৫ জনকে এসপি পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ১৩ বছর দায়িত্ব পালনের পরও ১৫৫ জনের পদোন্নতি হয়নি।

পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রায় একই পরিস্থিতি ২৪তম বিসিএসের কর্মকর্তাদের। পুলিশের একজন উপকমিশনার নাম প্রকাশ না করে বলেন, এই ব্যাচের মাত্র ছয়জন অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন, যদিও তাঁদের ব্যাচের ১৬৫ জন এই পদের জন্য যোগ্য ছিলেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা নির্বাচনী পদোন্নতি নয়। পুলিশের হতাশার কথা বিবেচনা করে আমরা এ প্রস্তাব পাঠিয়েছিলাম। এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পদোন্নতি হবেই, এ নিশ্চয়তা আমরা দিতে পারব না।’ মন্ত্রী আরও বলেন, ‘যদি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি না হয়, তাহলে ২০৩০ সাল পর্যন্ত কর্মকর্তারা পদোন্নতি পাবেন না। আমরা চাই প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় রেখে তাদের পদোন্নতি হোক।’

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রশাসন ও পুলিশে পদোন্নতিসহ নানা পরিবর্তন আনছে সরকার। সম্প্রতি প্রশাসন ক্যাডারের ২২১ জন উপসচিব ও সমপদমর্যাদার কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিয়ে যুগ্ম সচিব করা হয়েছে। গত জুলাইয়ে পুলিশের বেশকিছু কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে এখন পদোন্নতির প্রক্রিয়াও চলছে। এ ছাড়া গত জুলাইয়ে পাঁচ বিভাগে নতুন বিভাগীয় কমিশনার এবং বদলি ও নতুন ডিসি মিলিয়ে মোট ৩০টি জেলায় ডিসি পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। গত ১৫ ও ১৬ জুলাই পুলিশেও বড় ধরনের রদবদল করেছে সরকার।

জানতে চাইলে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) নুরুল হুদা প্রথম আলোকে বলেন, ‘পদের চেয়ে পদোন্নতি বেশি হলে সমস্যা হয়; কিন্তু একই রকমের পদের একটি অংশের যখন পদোন্নতি হয় না, তখন তাঁদের মনোবল ঠিক রাখার জন্য অনুমোদিত পদের বাইরে গিয়ে এ ধরনের পদোন্নতি দেওয়া হয়। তা অল্প সময়ের জন্য। এখন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের যেহেতু সুপারনিউমারারি পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে সেজন্যই পুলিশেও এমন দাবি উঠছে।’