বেশি দামে গম আমদানি ও গ্যাসকূপ খননের চুক্তি জনস্বার্থপরিপন্থী: টিআইবি

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বলেছে, বাজারমূল্যের চেয়ে বেশি দামে গম আমদানির সিদ্ধান্ত এবং তিন গুণ বাড়তি ব্যয়ে গ্যাজপ্রমের সঙ্গে ভোলায় তিনটি গ্যাসকূপ খননের চুক্তি জনস্বার্থপরিপন্থী। এসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সরকারের কৃচ্ছ্রসাধনের নীতিকে বুড়ো আঙুল দেখানো হয়েছে বলে মনে করে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি। সরকারি ব্যয়ের ক্ষেত্রে এসব অনিয়মের সুষ্ঠু তদন্তও চেয়েছে তারা। আজ রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেছে টিআইবি।

গণখাতে ক্রয় আইন লঙ্ঘন করে রাশিয়া থেকে সরকারি পর্যায়ে (জিটুজি) পাঁচ লাখ টন গম কেনায় তৃতীয় একটি পক্ষকে যুক্ত করা হয়েছে। বিশ্ববাজারে পড়তির দিকে থাকলেও ওই পক্ষের মাধ্যমে এই গম কেনা হচ্ছে বেশি দামে। গণখাতে ক্রয় আইন অনুযায়ী, সরকারি পর্যায়ে ক্রয়প্রক্রিয়ায় বেসরকারি তৃতীয় কোনো পক্ষ থাকবে না। কিন্তু রাশিয়ার গম ক্রয়সংক্রান্ত পুরো প্রক্রিয়ায় তৃতীয় পক্ষ হিসেবে ন্যাশনাল ইলেকট্রিক নামের একটি কোম্পানির চেয়ারম্যান সাত্তার মিঞা ও তাঁর ভাই ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আমিরুজ্জামান যুক্ত আছেন।

দুর্নীতিবিরোধী এ সংস্থা আজ তাদের বিবৃতিতে বলেছে, সরকারি পর্যায়ে ক্রয়প্রক্রিয়ায় বেসরকারি তৃতীয় কোনো পক্ষের সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ নেই। এরপরও গম আমদানিতে ‘ন্যাশনাল ইলেকট্রনিক বিডি’ নামের প্রতিষ্ঠানের সম্পৃক্ততার যে সুযোগ তৈরি করা হয়েছে, তা বেআইনি। পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্স আবিষ্কৃত ভোলার গ্যাস ফিল্ডের কূপ খননের জন্য তিন গুণ বেশি ব্যয়ে গ্যাজপ্রমের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের ক্ষেত্রে একই প্রতিষ্ঠানের সম্পৃক্ততা কাকতালীয় কোনো বিষয় নয়, বরং উভয় ক্ষেত্রেই একটি অসাধু স্বার্থান্বেষী ও সুযোগসন্ধানী চক্রকে সুপরিকল্পিতভাবে অনৈতিক ও অতিমুনাফা অর্জনের সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে বলে মনে করছে সংস্থাটি।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের সূত্র ধরে বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলছেন,  ‘কোভিড-১৯ এবং রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ বৈশ্বিক খাদ্য ও জ্বালানির বাজারে যে অস্থিরতা তৈরি করেছে, তা দেশের অর্থনীতিতে বহুমুখী সংকট তৈরি করেছে। এর মোকাবিলায় সরকার আর্থিক খাতে নানাবিধ বিধিনিষেধ আরোপের পাশাপাশি রাজস্ব ব্যয়ের ক্ষেত্রে যৌক্তিকভাবে কৃচ্ছ্রসাধন নীতি গ্রহণ করেছে। সেই একই সময়ে বিদ্যমান আইন অমান্য করে আন্তর্জাতিক চলতি বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক বেশি দামে খাদ্যপণ্য আমদানিতে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের বিতর্কিত প্রডিনটর্গকে কার্যাদেশ দেওয়ার ঘটনায় আমরা হতবাক হয়েছি। তার চেয়ে বড় প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে, মাত্র এক লাখ টন গম চুক্তি অনুযায়ী সরবরাহ করতে ব্যর্থ হওয়া প্রতিষ্ঠান, কোন জাদুবলে পাঁচ লাখ টন গম সরবরাহের কাজ পেল?’

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, গমের বাড়তি দামের কারণেই সম্প্রতি দক্ষিণ এশিয়ার অন্য একটি দেশ রাশিয়ার খাদ্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান প্রডিনটর্গের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম যখন কমছে, তখন বাড়তি দামে একই প্রডিনটর্গের সঙ্গে চুক্তির পেছনে মধ্যস্বত্বভোগীসহ সংশ্লিষ্ট একশ্রেণির সুবিধাভোগী চক্র যে যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে, তা সহজেই বোধগম্য। খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করার অজুহাতে বাড়তি দামে গম কেনার এই ঘটনা সংকটকালে সুযোগসন্ধানী চক্রের স্বার্থসিদ্ধির একটি নিকৃষ্ট উদাহরণ। বিশেষ করে এ কারণে যে বাড়তি দামে গম কেনার সঙ্গে জড়িত আলোচিত ‘ন্যাশনাল ইলেকট্রনিক বিডি’ প্রতিষ্ঠানটি তিন গুণ বেশি মূল্যে বিদেশি কোম্পানি গ্যাজপ্রমের সঙ্গে গ্যাসকূপ খননের চুক্তিরও সুবিধাভোগী।

আরও পড়ুন

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সরকারি আর্থিক ব্যয়ের ক্ষেত্রে কৃচ্ছ্রতার নীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এবং বাপেক্সের সক্ষমতাকে উপেক্ষা করে কেন তিন গুণ বেশি মূল্যে গ্যাজপ্রমের সঙ্গে চুক্তি করা হলো, তা জনস্বার্থে খতিয়ে দেখা জরুরি। ক্ষমতার অপব্যবহার করে যোগসাজশের দুর্নীতির এই যুগলবন্দীর ফলে যারা প্রত্যক্ষ লাভবান এবং যারা এর পরোক্ষ সুবিধাভোগী, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে তাদের চিহ্নিত করে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।