নেপথ্যের ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করতে তদন্ত কমিশন হচ্ছে

পদ্মা সেতু
ফাইল ছবি

পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির অসত্য তথ্য সৃষ্টির নেপথ্যের ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করতে তদন্ত কমিশন গঠন করতে যাচ্ছে সরকার। হাইকোর্টের রায়ের আলোকে কর্মরত বা অবসরপ্রাপ্ত একজন বিচারপতির নেতৃত্বে ‘কমিশন অব ইনকোয়ারি (তদন্ত কমিশন)’ গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা শুধু বলেন, বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

জানা গেছে, এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানোর জন্য একটি সারসংক্ষেপের খসড়াও তৈরি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

আরও পড়ুন

এর আগে গত ২৮ জুন বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ তদন্ত কমিশন গঠনের বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছিলেন।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, তাদের তৈরি খসড়া সারসংক্ষেপে হাইকোর্টের রায়ের কথা উল্লেখ করে বলা হয়, ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিচারের দাবিসংক্রান্ত বিষয়ে একটি দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন নজরে এনে হাইকোর্ট ওই বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি স্বতঃপ্রণোদিত (সুয়োমোটো) রুল জারি করেন। পদ্মা সেতুর নির্মাণ চুক্তিসংক্রান্ত অসত্য তথ্য সৃষ্টি করে রাষ্ট্র ও সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের নেপথ্যের প্রকৃত দোষী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার জন্য তদন্ত কমিশন গঠনের আদেশ কেন দেওয়া হবে না, সেই মর্মে রুলটি জারি করা হয়। গত ২৮ জুন ওই মামলার রায় ঘোষণা করা হয়।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, যোগাযোগসচিব, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যানসহ বিবাদীদের প্রতি কমিশন গঠনের বিষয়ে নির্দেশ দেওয়া হয়। কমিশন গঠন ও কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে—৩০ দিনের মধ্যে তার অগ্রগতি মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে জানাতে বলা হয়েছিল।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, তারা ২৮ আগস্ট আদেশের অনুলিপি পেয়েছে। আদেশ পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে কমিশন গঠন এবং দুই মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন জমা দিতে রায়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়।

রাতে পদ্মা সেতু
ছবি: প্রথম আলো

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের তৈরি খসড়া সারসংক্ষেপে বলা হয়, ‘কমিশন অব ইনকোয়ারি অ্যাক্ট ১৯৫৬’–এর অধীনে সরকার প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে কমিশন গঠন করতে পারে। এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের কাছ থেকেও মতামত পাওয়া গেছে। তাতে বলা হয়, এ কমিশনে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ এক বা একাধিক সদস্য নিয়োগ করা যেতে পারে। কমিশন একটি দেওয়ানি আদালত হিসেবে গণ্য হবে এবং দেওয়ানি আদালতের মতো ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবে। আর তদন্ত কমিশনে কোনো বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাকে সভাপতি বা সদস্য হিসেবে নিয়োগের প্রয়োজন হলে আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সংশ্লিষ্টতা থাকবে।

এ অবস্থায় হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য কর্মরত বা অবসরপ্রাপ্ত কোনো বিচারপতির নেতৃত্বে তদন্ত কমিশন গঠনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইন ও বিচার বিভাগকে অনুরোধ করা যেতে পারে বলে খসড়া সারসংক্ষেপে উল্লেখ করা হয়।

গত ২৫ জুন বহুল প্রত্যাশার পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে খুলে গেছে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৯টি জেলার সঙ্গে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অপরাপর অংশের জন্য সংযোগ, যোগাযোগ এবং সম্ভাবনার অনন্ত দুয়ার। বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে করেছে বহুল আলোচিত এই সেতু।

পদ্মা সেতু

এর আগে ২০১১ সালে এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়ে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), জাইকা ও ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের (আইডিবি) সঙ্গে ঋণচুক্তি সই করা হয়েছিল। পরে বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে অর্থায়ন বন্ধ করে। বাকি দাতা সংস্থাগুলোও পিছিয়ে যায়। সেই সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে ঘোষণা করেন, বাংলাদেশ নিজেদের সামর্থ্যেই গড়ে তুলবে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। উন্নয়ন-সহযোগীদের জানিয়ে দেওয়া হয়, তাদের অর্থায়নের দরকার নেই। সেতুর মূল কাজ শুরু হয় ২০১৪ সালের শেষের দিকে, যার চূড়ান্ত রূপ পায় এ বছরের জুনে।

আরও পড়ুন