চিড়িয়াখানায় হায়েনার কামড়ে হাত হারানো শিশুটি কেমন আছে

সাইফ আহমেদ। আজ তোলা ছবিছবি: পরিবারের সৌজন্যে

ঈদের দিন গতকাল বৃহস্পতিবার হাতির আক্রমণে রাজধানীর মিরপুরে জাতীয় চিড়িয়াখানার মাহুত আজাদ আলীর ছেলে জাহিদের (১৭) মৃত্যু হয়। ১০ মাস আগেও এই চিড়িয়াখানায় প্রাণীর আক্রমণের শিকার হয়েছিল এক শিশু। গত বছরের ৮ জুন হায়েনা কামড় দিয়ে মো. সাইফ আহমেদ নামে শিশুটির একটি হাতের কনুই পর্যন্ত ছিঁড়ে নেয়।

সাইফ আহমেদ যখন দুর্ঘটনার শিকার হয়, তখন তার বয়স ছিল দুই বছর তিন মাস। এখন তার বয়স তিন বছর ছাড়িয়ে গেছে। সে কথা বলতেও শিখেছে।

সাইফ মা–বাবার সঙ্গে গাজীপুরে থাকে। আজ শুক্রবার কথা হয় তার বাবা সুমন মিয়া ও মা মোছা. শিউলি আক্তারের সঙ্গে। তার মা গৃহিণী ও বাবা একটি পোশাক তৈরির কারখানায় কাজ করেন। তাঁদের গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রামের পীরগঞ্জে। দুর্ঘটনার পর থেকে এখনো তাঁরা গ্রামে যাননি। এবারের ঈদও তাঁরা গাজীপুরে করেছেন। সাইফ বাবার সঙ্গে ঈদের নামাজও আদায় করেছে।

সাইফ এখন কেমন আছে জানতে চাইলে মা শিউলি আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাবু ভালোই আছে। কাটা হাতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু ওই হাত (কাটা হাত) দিয়ে খেতে চায়, ধরতে চায়।’

হায়েনা কামড় দিয়ে সাইফের ডান হাতের কনুই পর্যন্ত ছিঁড়ে নেয়। শিউলি আক্তার বলেন, ‘এখন তো ওর সব কাজ আমি করে দিই। সমস্যা হবে তো ও বড় হলে।’

শিশুসন্তানকে চিড়িয়াখানায় ঘুরতে নিয়ে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হওয়ায় এখনো এই দম্পতিকে নানা ধরনের কথা শুনতে হয়। শিউলি আক্তার বলেন, ‘কিসের জন্য ঘুরতে গেছি—মানুষ এসব প্রশ্ন করে। সবাই তো ঘুরতে যায়। আমরা কি জানতাম, ঘুরতে গেলে এমন হবে। জানলে কি কেউ যায়!’

আরও পড়ুন

চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ হায়েনার খাঁচা আরও সুরক্ষিত রাখলে এমন ঘটনা ঘটত না বলে মনে করেন এই দম্পতি। তবে দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার পর তাঁরা কখনো চিড়িয়াখানায় যাননি। তবে শিউলি আক্তারের ভাই একবার গিয়েছিলেন। শিউলি বলেন, ‘এখন ঠিকই ভালো করে দিছে জায়গাটা। একটা আঙুলও ঢুকবে না। অনেক দূর থেকে ঘিরে দিয়েছে।’

সাইফ আর ডান হাত দিয়ে কিছুই করতে পারবে না। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় তার মা-বাবা। এদিকে তিনজনের সংসারে সুমন মিয়া একা উপার্জন করেন। যা আয় হয়, তা কোনোরকমে সংসার চালাতেই খরচ হয়ে যায়।

দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার পর সাইফকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলেন অনেকে। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষও প্রথম দিকে চিকিৎসাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা করেছে। সাইফের বাবা সুমন মিয়া বলেন, তখন অনেকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু এক বছর হতে চলল। কেউ খোঁজখবর নেননি, সহযোগিতাও করেননি।

জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক রফিকুল ইসলাম তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল। ভবিষ্যতে যদি কখনো তাদের জন্য কিছু করার সুযোগ তৈরি হয়, তাহলে করা হবে।

আরও পড়ুন