ড. মুহাম্মদ ইউনূস
ফাইল ছবি

শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে ‘হয়রানিমূলক ব্যবস্থা’ বন্ধের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপিপন্থীসহ সুপ্রিম কোর্টের ৩০১ জন আইনজীবী। একই সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে সব ধরনের ‘হয়রানিমূলক মামলা’ প্রত্যাহারের আহ্বান জানান তাঁরা।

আজ বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের ৩০১ আইনজীবী এক বিবৃতিতে এই আহ্বান জানান। গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতির শেষাংশে বলা হয়, ‘আমরা এ দেশের আইনজীবী সমাজ মনে করি, শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস বর্তমান সরকারের প্রতিহিংসার শিকার। তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে ফরমায়েশি বিচারের নামে যে বিচারিক হয়রানি করা হচ্ছে, তা দেশে-বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ব্যাপকভাবে ক্ষুণ্ন করছে। আইনজীবী হিসেবে আমরা দেশের সব নাগরিকের নিরাপত্তা ও আইনের সঠিক প্রয়োগ চাই। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নোবেল বিজয়ী ও বাংলাদেশের গর্ব ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে ফরমায়েশি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ অবিলম্বে বন্ধ এবং সব ধরনের হয়রানিমূলক চলমান মামলাগুলো প্রত্যাহারের আহ্বান জানাচ্ছি।’

আরও পড়ুন

আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি ড. ইউনূসের ওপর ভর করেছে: তথ্যমন্ত্রী


৩০১ জন আইনজীবীর স্বাক্ষর–সংবলিত বিবৃতির শুরুতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ তথা সারা বিশ্বের দারিদ্র্যপীড়িত কর্মহীন মানুষের স্বপ্নের নায়ক, ক্ষুদ্রঋণের প্রবক্তা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন এবং দীর্ঘ সমস্যা ‘দারিদ্র্য নিরসনে’ ক্ষুদ্রঋণের যে ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছেন, তা বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের দারিদ্র্যপীড়িত সমাজবদলের এক অনন্য নজির। তিনি সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছেন। দারিদ্র্য দূরীকরণের এক অনবদ্য চিন্তার ফসল এই ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প, যা সারা বিশ্বে সমাদৃত হয়েছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস শুধু ক্ষুদ্রঋণের প্রবক্তাই নন, মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশ সিটিজেনস কমিটি’ গঠন করে বাংলাদেশের পক্ষে বহির্বিশ্বের সমর্থন আদায় করেছিলেন। ক্ষুধা ও দারিদ্র্য দূরীকরণের মাধ্যমে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখায় শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করে দেশের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে উজ্জ্বল করেছেন।’

আরও পড়ুন

নোবেলজয়ী ড. ইউনূসসহ বাংলাদেশে মানবাধিকারকর্মীদের আইনিভাবে হয়রানি করা হচ্ছে

ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার, কংগ্রেসনাল গোল্ড মেডেল, আন্তর্জাতিক গান্ধী শান্তি পুরস্কার ও প্রেসিডেনশিয়াল মেডেল অব ফ্রিডমস পুরস্কারসহ নানা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন উল্লেখ করে বিবৃতিতে ৩০১ আইনজীবী বলেছেন, তাঁরা বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে তাঁর জন্য গর্বিত।

আরও পড়ুন

ড. ইউনূসের তথ্য নিতে গ্রামের বাড়িতে পুলিশ

বিবৃতিদাতা আইনজীবীরা বলছেন, ‘তাঁরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে উপলব্ধি করছেন, ক্ষুধা ও দারিদ্র্য দূরীকরণের এই মহান কারিগরের বিরুদ্ধে বর্তমান সরকার প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে নানা রকম নিপীড়ন ও হয়রানিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।’

বর্তমান সরকার যাঁকেই প্রতিপক্ষ মনে করে, তাঁকেই রাষ্ট্রীয় যন্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে নিপীড়ন করা হয় বলে বিবৃতিতে বলা হয়েছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘বর্তমান সরকারের রোষানলে পড়ে অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি ও রাজনৈতিক ব্যক্তি মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলায় তথাকথিত বিচারিক প্রক্রিয়ায় ফরমায়েশি রায়ের মাধ্যমে হয় সাজা ভোগ করেছেন, নয়তো কারান্তরীণ আছেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে চলমান বিচারিক প্রক্রিয়া একপেশে, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও আক্রোশপ্রসূত।’

আরও পড়ুন

ড. ইউনূস বিচারিক ‘হয়রানির শিকার’, বিবৃতিতে সই করব না: ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল

বিবৃতিদাতা ৩০১ জনের মধ্যে রয়েছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, সুব্রত চৌধুরী ও এ এম মাহবুব উদ্দিন, আইনজীবী মো. রুহুল কুদ্দুস, সৈয়দ মামুন মাহবুব, গাজী কামরুল ইসলাম, রেজাউল করিম, মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান খান, ফরিদুজ্জামান, মোহাম্মদ আলী, রফিকুল ইসলাম, এ কে এম এহসানুর রহমান, জহিরুল ইসলাম, মাহদীন চৌধুরী, রেদওয়ান আহমেদ, আনিসুর রহমান, জামিউল হক প্রমুখ।

আরও পড়ুন

ড. ইউনূসকে হয়রানি বন্ধে বিশিষ্ট নাগরিকদের বিবৃতি

আরও পড়ুন

ড. ইউনূসের মামলা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে শতাধিক নোবেল বিজয়ীর খোলাচিঠি