বাংলাদেশ থেকে প্রতিবেশী দেশগুলোয় ব্যান্ডউইডথ নিতে চায় স্টারলিংক

স্টারলিংকছবি: রয়টার্স

বাংলাদেশ থেকে ব্যান্ডউইডথ নিয়ে আশপাশের দেশগুলোয় ইন্টারনেট–সেবা দিতে চায় যুক্তরাষ্ট্রের স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট–সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান স্টারলিংক। এ জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) চিঠি দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

স্টারলিংক বিটিআরসিকে চিঠিটি দিয়েছে গত ১৩ আগস্ট। এতে তারা বলেছে, তারা বাংলাদেশকে পয়েন্ট অব প্রেজেন্স বা পপ হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে আশপাশের পপ ও দেশগুলোয় সেবা দিতে ব্যান্ডউইডথ নিতে চায়। এ জন্য তারা বাণিজ্যিকভাবে ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিজড সার্কিট (আইপিএলসি) ও আনফিল্টারড আইপি (নিয়ন্ত্রণহীন ইন্টারনেট সংযোগ) ব্যবহারের অনুমোদন চেয়েছে।

বাংলাদেশে গত মে মাসে স্টারলিংক বাণিজ্যিকভাবে যাত্রা শুরু করে। প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলঙ্কা ও ভুটানে স্টারলিংকের সেবা চালু আছে। ভারত ও নেপালে স্টারলিংকের সেবা চালুর অপেক্ষায়।

আরও পড়ুন

বাংলাদেশে এখন যে ইন্টারনেট-সেবা দেওয়া হয়, তা সাবমেরিন কেব্‌লনির্ভর। অর্থাৎ সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে তারের মাধ্যমে ব্যান্ডউইডথ এনে মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর ও ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডাররা (আইএসপি) মানুষকে ইন্টারনেট-সেবা দেয়।

স্টারলিংক ইন্টারনেট-সেবা দেয় স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে। স্টারলিংকের মূল প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তাদের ইন্টারনেট-সেবা জিওস্টেশনারি (ভূস্থির উপগ্রহ) থেকে আসে, যা ৩৫ হাজার ৭৮৬ কিলোমিটার ওপর থেকে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে।

পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে স্থাপিত হাজার হাজার স্যাটেলাইটের একটি সমষ্টি হচ্ছে স্টারলিংক, যা পুরো বিশ্বকেই উচ্চগতির ইন্টারনেট-সেবা দিতে পারে।

বিটিআরসিকে দেওয়া চিঠিতে স্টারলিংক বলেছে, তারা বাংলাদেশের পপ থেকে সিঙ্গাপুর ও ওমানে নিজেদের পপের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে আইপিএলসি চালু করতে চায়। তাদের প্রতিটি পপই অন্তত দুটি পপের সঙ্গে আন্তসংযুক্ত। তারা এই আইপিএলসির মাধ্যমে ‘আনফিল্টারড’ (নিয়ন্ত্রণহীন) আইপি ট্রানজিট ব্যবহার করে, যার কোনো অংশ বাংলাদেশের স্থানীয় ট্রাফিকের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। তারা বাংলাদেশর জন্য স্থানীয় নীতিই মেনে চলবে।

আরও পড়ুন

চিঠিতে স্টারলিংক আরও বলেছে, এই আইপিএলসির সংযোগগুলো বাংলাদেশের স্থানীয় বা অভ্যন্তরীণ কোনো বিষয়ের ওপর প্রভাব ফেলবে না। বাংলাদেশের প্রতিটি ব্যবহারকারী স্থানীয় ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) ও স্থানীয় আইপি ট্রানজিটের মাধ্যমে রাউট হবে। ফলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সব কার্যক্রম নিরাপত্তা, আইনানুগ আড়িপাতা ও কনটেন্ট ব্লকিং (নিয়ন্ত্রণ) বিধান প্রযোজ্য হবে।

আনফিল্টারড আইপি বাংলাদেশের অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান ফাইবারঅ্যাটহোম ও সামিট কমিউনিকেশনস থেকে নেওয়া হবে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করেছে স্টারলিংক। এই দুই প্রতিষ্ঠানেরই ইন্টারন্যাশনাল টেরিস্ট্রিয়াল কেব্‌ল (আইটিসি) ও আইআইজি লাইসেন্স রয়েছে।

আরও পড়ুন

বিষয়টি নিয়ে বিটিআরসি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. এমদাদ উল বারী প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা এটাকে ব্যান্ডউইডথ রপ্তানির বিষয় হিসেবে দেখছেন, ট্রানজিট নয়। বাংলাদেশ আগে থেকেই ব্যান্ডউইডথ রপ্তানি করছে। ভারতের ত্রিপুরায় সে ব্যান্ডউইডথ যায়, যার সঙ্গে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সংযোগের কোনো সম্পর্ক নেই।

বিটিআরসির চেয়ারম্যান আরও বলেন, স্টারলিংক এভাবে ব্যান্ডউইডথ রপ্তানি করতে চাইলে বিটিআরসি তখন সরকারের কাছে বিষয়টি নিয়ে যাবে। তবে তার আগে কারিগরি দিক দেখা হবে এবং বিষয়টি নিয়ে আরও স্পষ্ট হতে হবে। স্টারলিংকের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা চলছে, কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

তথ্যপ্রযুক্তি খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, এ অঞ্চলে ভুটানে স্টারলিংক–সেবার ক্ষেত্রে ব্যান্ডউইডথ আসে সিঙ্গাপুর থেকে। দূর থেকে ব্যান্ডউইডথ আনতে গিয়ে মান খারাপ হয় এবং খরচ বেশি পড়ে। দূরত্বের দিক থেকে বাংলাদেশ কাছে। ভুটান ও নেপালের মতো দেশগুলোয় সেবা দিতে বাংলাদেশ থেকে ব্যান্ডউইডথ নেওয়া লাভজনক।

আরও পড়ুন

বাংলাদেশে বর্তমানে স্টারলিংকের চারটি গ্রাউন্ড স্টেশন রয়েছে, যার মধ্যে দুটি গাজীপুরে এবং বাকি দুটি রাজশাহী ও যশোরে অবস্থিত।

খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দেশে এখন ব্যান্ডউইডথের চাহিদা হচ্ছে প্রায় ৯ টেরাবাইট, যার মধ্যে অন্তত ৭ টেরাবাইট আনার সক্ষমতা আছে দুই সাবমেরিন ক্যাবলের। বাকিটা আসে ইন্টারন্যাশনাল টেরিস্ট্রিয়াল কেব্‌ল বা আইটিসির মাধ্যমে ভারত থেকে।

ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সভাপতি আমিনুল হাকিম প্রথম আলোকে বলেন, এই মুহুর্তে স্টারলিংককে ব্যান্ডউইডথ রপ্তানি দেওয়ার ক্ষেত্রে দেশের চাহিদা ও সক্ষমতা বিবেচনায় নিতে হবে। কারণ তাদের বাড়তি ব্যান্ডউইডথ দিতে গেলে আইটিসির মাধ্যমে ভারত থেকে আনতে হবে। সরকার যদি সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে আনা ব্যান্ডউইডথ স্টারলিংককে দিতে পারে, সেটা লাভজনক হবে। কিন্তু সেই সক্ষমতা আছে কি না, সেটা একটা প্রশ্ন।