দুর্ঘটনা কমাতে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প

প্রকল্প এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনা ৩০ শতাংশ কমবে বলে আশা। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে দরকার সুশাসন।

  • প্রকল্পে মহাসড়কে সংকেত ঠিক করা, হাসপাতালের সক্ষমতা বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণ, যন্ত্রপাতি কেনাসহ বিভিন্ন উদ্যোগ রয়েছে।

  • এর আগে নির্মাণ করা ২১টি চিকিৎসাকেন্দ্রের ১৬টিই অব্যবহৃত।

সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির প্রতিবাদে এভাবে অনেক বার রাস্তায় দাঁড়িয়েছেন শিক্ষার্থীরা
ফাইল ছবি

সড়ক দুর্ঘটনা কমানো ও আহত মানুষদের দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে ৪ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন একটি প্রকল্প নিয়েছে সরকার। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে নেওয়া এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে প্রকল্প এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু ৩০ শতাংশ কমবে বলে প্রক্ষেপণ করা হয়েছে।

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে গতকাল বুধবার এই প্রকল্পের যাত্রা শুরুর অনুষ্ঠান হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর, পুলিশ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষসহ (বিআরটিএ) সরকারের বিভিন্ন সংস্থা। প্রকল্পের জন্য দুটি মহাসড়ক বেছে নেওয়া হয়েছে—গাজীপুর থেকে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা এবং নাটোর থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পর্যন্ত।

প্রকল্পের আওতায় মহাসড়কের সংকেত (সাইন) ঠিক করা, আশপাশের হাসপাতালের সক্ষমতা বৃদ্ধি, দুর্ঘটনায় আহত মানুষদের দ্রুত চিকিৎসার লক্ষ্যে বিনা পয়সায় অ্যাম্বুলেন্স সেবা দেওয়া, পেশাদার চালকের প্রশিক্ষণ, দুর্ঘটনার তথ্যভান্ডার গড়ে তোলা, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বৃদ্ধি, যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে হাইওয়ে পুলিশকে যন্ত্রপাতি দেওয়া, হাইওয়ে পুলিশের জন্য মাদারীপুরে একটি প্রশিক্ষণকেন্দ্র চালু করাসহ বিভিন্ন উদ্যোগের কথা বলা হয়েছে।

রাজধানী ঢাকাও এই প্রকল্পের আওতায় পড়বে। এখানে আহত মানুষদের দ্রুত চিকিৎসাসেবা দিতে প্রয়োজনে মোটরসাইকেল অ্যাম্বুলেন্স চালু করার কথা বলা হয়েছে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে সওজের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ১৯৯০ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি তিন গুণ বেড়েছে। সড়ক দুর্ঘটনার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৫ শতাংশের মতো।

বর্তমান সরকারের আমলে যোগাযোগব্যবস্থায় অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে জানিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা যতই পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, এক দিনে এক শ সেতু উদ্বোধন করি না কেন, যখন দুর্ঘটনার খবর দেখি, তখন মনটা বিষণ্ন হয়ে যায়। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত বেদনার। আমরা মন্ত্রী হলেও তো মানুষ।’

নিরাপদ সড়কের প্রকল্প দ্রুত শেষ করার আহ্বান জানিয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব শরীফা খান বলেন, অধিকাংশ প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি হয়। এ জন্য ব্যয় বাড়ে। মানুষ সময়মতো সুফল পান না।

বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুল্লায়ে সেক বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় এটাই বিশ্বব্যাংকের প্রথম নিরাপদ সড়কের প্রকল্প।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (অপরাধ ও অপারেশন) মো. আতিকুল ইসলাম, সওজের প্রধান প্রকৌশলী মো. ইসহাক, বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার প্রমুখ।

অবশ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে বেশি দরকার সুশাসন। দেশে বিপুলসংখ্যক যানবাহন চলাচল করছে ফিটনেস ছাড়া। দুর্ঘটনা ঘটলে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় চালকের লাইসেন্স নেই। এদিকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ২১টি ট্রমা সেন্টার (চিকিৎসাকেন্দ্র) করা হয়েছিল। গত মার্চে সরেজমিনে দেখা যায়, ১৬টি ট্রমা সেন্টারই এখন অব্যবহৃত।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক সামছুল হক প্রথম আলোকে বলেন, নিরাপদ সড়কের সঙ্গে সরকারের অনেক অংশীজন যুক্ত। শুধু একটি প্রকল্প দিয়ে সমস্যাটির সমাধান করা যাবে না। প্রকল্পটি যাতে কেনাকাটানির্ভর না হয়, সময়মতো বাস্তবায়ন হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। প্রকল্প শেষে মূল্যায়ন করে দেখতে হবে লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে কি না।