ছাত্রলীগের ৭ জনকে শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বহিষ্কার

অভিজিৎ দাশকে তিন বছরের জন্য কলেজের যাবতীয় শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বহিষ্কার করা হয়। দুই বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয় রিয়াজুল ইসলাম, সাজু দাশ ও সৌরভ দেবনাথকে। দেড় বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয় মাহিন আহমেদ, জাকির হোসেন ও ইব্রাহিম খলিলকে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাসে ছাত্রলীগ কর্মীদের নির্যাতনের শিকার সাকিব হোসেন ও জাহিদ হোসেন
ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ছাত্রাবাসে চার সাধারণ শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের ঘটনায় সাত ছাত্রলীগ নেতাকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করেছে চমেক কর্তৃপক্ষ। আজ বৃহস্পতিবার একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই সাতজনের মধ্যে ছয়জনের বিরুদ্ধে আগেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল।

সাতজনই নিজেদের শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী বলে পরিচয় দেন। তবে মহিবুল হাসান চৌধুরী বারবার বলে আসছেন, তাঁর কোনো পক্ষ নেই। একই কলেজে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে ছাত্রলীগের একটি পক্ষ রয়েছে।

আজ শাস্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে চমেক ৫৯ ব্যাচের অভিজিৎ দাশকে তিন বছরের জন্য কলেজের যাবতীয় শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বহিষ্কার করা হয়। দুই বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয় ৫৯ ব্যাচের রিয়াজুল ইসলাম, ৬২ ব্যাচের সাজু দাশ ও একই ব্যাচের সৌরভ দেবনাথকে। দেড় বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয় মাহিন আহমেদ, জাকির হোসেন ও ইব্রাহিম খলিলকে। তিনজনই ৬২ ব্যাচের শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ইব্রাহিম খলিল ছাড়া বাকিদের আগেও বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা হয়েছিল। কিছুদিন পর তাঁদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শাস্তি মওকুফ করা হয়েছিল।

জানতে চাইলে চমেক অধ্যক্ষ সাহেনা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘তারা আগেও শাস্তি পেয়েছিল। শাস্তি পরে কিছুটা মওকুফ করা হয়েছিল। কিন্তু তারা শোধরায়নি। তাই আগের শাস্তিসহ মিলে এবার ১ থেকে ৩ বছর পর্যন্ত বহিষ্কার করা হলো।’

উল্লেখ্য, গত ৮ ফেব্রুয়ারি চতুর্থ বর্ষের চার ছাত্র—সাকিব হোসেন, জাহিদ হোসেন, আবু রাইয়াত ও মোবাশ্বির হোসেনকে প্রধান ছাত্রাবাসের একটি কক্ষে নিয়ে পেটানো হয়। তাঁদের মধ্যে দুজনই চমেক হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসা নিয়েছেন। মোবাশ্বির ও আবু রাইয়াত বাড়িতে গিয়ে চিকিৎসা নেন। এই চারজন ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ এনে তাঁদের মারধর করা হয়েছিল।

এই ঘটনায় চমেক অভিযোগ নিষ্পত্তি কমিটি ঘটনার তদন্ত করে। এর প্রধান ছিলেন উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক হাফিজুল ইসলাম। কমিটির প্রতিবেদনের পর তা নিয়ে আজ একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় আলোচনা হয়। সভায় কাউন্সিলের সদস্যরা অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কঠোর শাস্তির পক্ষে রায় দেন। এরপর এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্তটি আজ থেকে কার্যকর বলেও সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

এদিকে নির্যাতিত চার ছাত্র এখনো ক্যাম্পাসে ফিরে আসেননি। তাঁরা নিজেদের বাড়িতে অবস্থান করছেন। তাঁরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। শাস্তির বিষয়ে জানতে চাইলে আবু রাইয়াতের বাবা মো. আবু জামাল বলেন, ‘আর কোনো ছাত্র যাতে নির্যাতনের শিকার না হয়, আমরা এটা চাইব। আর ছাত্রদের নিরাপত্তা চাই।’

এর আগে ২০২১ সালের ৩০ অক্টোবর ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মারামারির পর চমেক বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তখন মারামারিতে মহিবুলপন্থী মাহাদি জে আকিব নামের এক ছাত্র গুরুতর আহত হয়েছিলেন। তাঁর মাথার খুলির হাড় ভেঙে গিয়েছিল। এরপর চমেক ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ওই ঘটনায় অভিজিৎসহ ৩১ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা হয়েছিল।

আরও পড়ুন