সেন্ট মার্টিন দ্বীপে জমি কেনাবেচা কীভাবে

ছবি: প্রথম আলো

সেন্ট মার্টিন দ্বীপ প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ)। এই দ্বীপে ভবন নির্মাণের কোনো ছাড়পত্র দেয় না পরিবেশ অধিদপ্তর। তবে হোটেল, রিসোর্ট ও কটেজ নির্মাণের জন্য নানাভাবে জমি নিজেদের দখলে নিচ্ছেন প্রভাবশালীরা।

দ্বীপটিতে ভবন নির্মাণের জন্য জমি কেনাবেচা নিষিদ্ধ। তবে তার মধ্যেও নানা কৌশলে জমি কেনাবেচা হচ্ছে।

টেকনাফ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. এরফানুল হক চৌধুরী গত মাসে প্রথম আলোকে বলেন, জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি সাপেক্ষে দ্বীপের জমি বেচাকেনা হয়। ফসল উৎপাদনের নামে জমি কিনে কেউ কেউ হোটেল, রিসোর্ট ও কটেজ নির্মাণ করছেন বলে জানা গেছে। সম্প্রতি কিছু স্থাপনার নির্মাণকাজ বন্ধ এবং কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে।

প্রশাসনিকভাবে সেন্ট মার্টিন একটি ইউনিয়ন। দ্বীপটিতে প্রায় ১০ হাজার মানুষের বাস। টেকনাফ উপজেলার ভূমি কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সেন্ট মার্টিন ইউনিয়নের আয়তন ১ হাজার ৯৭৭ একর। ফসলি জমিসহ ব্যক্তিমালিকানাধীন ভিটেমাটির পরিমাণ প্রায় ৮০০ একর।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বর্তমানে দ্বীপের ৩৪টি পরিবারের কাছে ৫০ থেকে ৬০ একরের মতো জমি আছে। বাকিদের জমি গত তিন দশকে নানাভাবে নিজেদের দখলে নিয়েছেন আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, আমলা, বিভিন্ন বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, আইনজীবী, সাংবাদিকসহ প্রভাবশালীরা। কেউ কেউ অতীতে জমি কিনেছেন। কেউ কেউ বায়না চুক্তি অথবা ইজারার মাধ্যমে জমি দখলে নিয়েছেন।

সেন্ট মার্টিন দ্বীপ হোটেল মালিক সমিতি সূত্রে জানা যায়, দ্বীপটির একতলা ও দোতলাবিশিষ্ট ২৫ থেকে ৩০টি কটেজ ও রিসোর্টের মালিক স্থানীয় বাসিন্দারা। বাকি প্রায় ২০০টি হোটেল, রিসোর্ট ও কটেজের মালিক দ্বীপের বাইরের প্রভাবশালীরা।
দ্বীপের হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি আবদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বিভিন্ন ব্যক্তি নামে-বেনামে জমি কিনে কিংবা অন্যের জমি ইজারা নিয়ে পর্যটন স্থাপনা তৈরি করেছেন। আরও অন্তত ১১২ জন প্রভাবশালী ব্যক্তি দ্বীপের বিভিন্ন জায়গায় বিপুল জমি কিনে রেখেছেন। তাঁরা ভবিষ্যতে পর্যটন স্থাপনা নির্মাণ করবেন।

ছবি: প্রথম আলো

সেন্ট মার্টিনে প্রবাল, শৈবাল, কাছিম, শামুক, ঝিনুক ও কড়ি, সামুদ্রিক মাছ, পাখি, স্তন্যপায়ী প্রাণী, কাঁকড়াসহ ১ হাজার ৭৬ প্রজাতির জীববৈচিত্র্য রয়েছে বলে বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে। বিলুপ্তপ্রায় জলপাই রঙের কাছিমের ডিম পাড়ার স্থান এই দ্বীপের বালিয়াড়ি। তবে অনিয়ন্ত্রিতভাবে অবকাঠামো নির্মাণ, বিপুলসংখ্যক পর্যটকের গমন ও পরিবেশদূষণের কারণে দ্বীপটি সংকটাপন্ন হয়েছে।