যুবদল নেতাকে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে চিকিৎসা, রিটের ওপর আদেশ সোমবার
যশোরে যুবদলের নেতা মো. আমিনুর রহমানকে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে চিকিৎসা দেওয়ার বৈধতা নিয়ে করা রিটের ওপর আদেশের জন্য আগামীকাল সোমবার দিন রেখেছেন হাইকোর্ট। আজ রোববার শুনানি নিয়ে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আদেশের এ দিন ধার্য করেন।
এর আগে সকালে আমিনুর রহমানের স্ত্রী নাহিদ সুলতানা আবেদনকারীর হয়ে রিট করেন। রিটটি উপস্থাপন করা হলে মধ্যাহ্ন বিরতির পর শুনানি হয়।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী কায়সার কামাল। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
রিটে আমিনুরকে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে চিকিৎসার বৈধতা প্রশ্নে রুল চাওয়া হয়েছে। রুল হলে বিচারাধীন অবস্থায় কারাবন্দীদের হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি পরানোর বিষয়ে ‘কারাবন্দী আইন ও কারাবিধি’ প্রয়োগে উপযুক্ত নির্দেশনার জন্য একটি কমিটি গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া যথাযথ ও পর্যাপ্ত চিকিৎসার জন্য আমিনুরকে রাজধানীর ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতাল অথবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) অথবা সমান মানসম্পন্ন রাজধানীর অন্য কোনো সরকারি হাসপাতালে পাঠানোর জন্যও নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে রিটে।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে শুনানির এক পর্যায়ে এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, জেল কোড (কারাবিধি) প্রায় ১০০ বছর আগের। তাঁর উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘১৯৪৭–এ পাকিস্তান হলো, পরে বাংলাদেশ হলো। এখন পর্যন্ত আপনারা (কারাবিধি) এটি পরিবর্তন করলেন না। আপনারা তো সংসদে যান আপনাদের মতো। মানুষের পক্ষে কোনো কাজ করেননি এখন পর্যন্ত।’ তখন এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘কেন আমরা এটি করছি না?’ আদালত বলেন, ‘৫২ বছরে কত দল গেল–এল, পরিবর্তন করলেন না।’ শুনানি নেওয়ার পর আদালত আগামীকাল সোমবার আদেশের জন্য দিন রাখেন।
‘ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে হাসপাতালের মেঝেতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে যুবদল নেতাকে’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন গত ২৯ নভেম্বর হাইকোর্টের একই বেঞ্চের নজরে এনে স্যুয়োমটো (স্বতঃপ্রণোদিত) আদেশ প্রার্থনা করেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। তাঁদের উদ্দেশে সেদিন আদালত বলেছিলেন, চাইলে আবেদন নিয়ে আসতে পারেন। এরপর গণমাধ্যমে আসা তিনটি প্রতিবেদন যুক্ত করে আজ রিট করেন আমিনুরের স্ত্রী।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, যশোরে বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার যুবদলের এক নেতাকে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। পেশায় কলেজশিক্ষক ওই যুবদল নেতা কারাগারে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হলে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
স্বজনদের অভিযোগ, হাসপাতালের শয্যায় ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। খাওয়ার সময়ও তাঁর হাতকড়া খোলা হয়নি। এমনকি স্বজনদের সঙ্গে তাঁকে দেখা করতেও দেওয়া হয়নি।
আমিনুর রহমান যশোর জেলা যুবদলের সহসভাপতি ও সদর উপজেলার দেয়াড়া ইউনিয়নের আমদাবাদ কলেজের প্রভাষক।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ডান্ডাবেড়ি পরা তাঁর একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার কলেজের একজন শিক্ষকের সঙ্গে দাগী আসামির মতো ব্যবহারকে ‘মানবাধিকার লঙ্ঘন’ বলছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা।