দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমাতে শুধু কথাই হয়

নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করা সরকারের যেসব দপ্তরের দায়িত্ব, তারাই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে তৎপর নয়। প্রতিবছরই সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি বাড়ছে।

বেপরোয়াভাবে একটিকে অতিক্রম করছে অপর বাসটি। শুক্রবার ঢাকার আশুলিয়া সড়কে
ছবি: তানভীর আহাম্মেদ

দেশে নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করার সর্বোচ্চ সংস্থা জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিল (এনআরএসসি)। সংস্থাটির চেয়ারম্যান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী। সদস্য হলেন সরকারের সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরের প্রতিনিধি, পরিবহন খাতের মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধি, বিশেষজ্ঞ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।

প্রতি ছয় মাস অন্তর এনআরএসসির বৈঠক হওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে। কিন্তু প্রায় তিন বছর ধরে এনআরএসসির বৈঠক হয় না। সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের নথি অনুসারে, ২০১৯ সালের ৫ সেপ্টেম্বর সর্বশেষ কাউন্সিলের বৈঠক হয়।

নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় নীতি ও কর্মসূচি নেওয়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা হচ্ছে জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা উপদেষ্টা পরিষদ। এটিরও প্রধান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী। সরকারের প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের সচিবেরা এই পরিষদের সদস্য। এই পরিষদেরও বৈঠক হয় না তিন বছরের বেশি সময় ধরে। বৈঠক হওয়ার কথা ছয় মাস পরপর।

নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতে শনিবার থেকে পরবর্তী সাত দিন তাঁরা সড়কে থাকবেন। ঢাকায় সাত স্থানে এবং ৬৪ জেলায় মানুষকে সচেতন করা হবে।
এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী, সড়ক পরিবহন বিভাগের সচিব

সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের আদলে সারা দেশে জেলা পর্যায়েও অনুরূপ কমিটি থাকার কথা। তাদের দায়িত্ব জাতীয় কাউন্সিলের মতো জেলা পর্যায়ে নিয়মিত বৈঠক করে নিরাপদ সড়ক–সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা। কিন্তু জেলা পর্যায়ে এ ধরনের কোনো কমিটির কার্যক্রম নেই বললেই চলে।

পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলো ধর্মঘট ডাকলে তাঁদের নিয়ে আলোচনার জন্য বৈঠক ডাকা হয়। নিরাপদ সড়কের বিষয়টি আলোচনায় আসে না। বরং কীভাবে ধর্মঘট প্রত্যাহার হবে, মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলোর দাবি বাস্তবায়ন নিয়েই বেশি আলোচনা হয়। 

এই পরিস্থিতিতে গতকাল শনিবার জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস পালন করেছে সরকার। ২০১৭ সাল থেকে সরকারিভাবে ২২ অক্টোবর জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস পালন করা হচ্ছে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ছিল ‘আইন মেনে সড়কে চলি, নিরাপদে ঘরে ফিরি।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবারের যে প্রতিপাদ্য, তা মূলত পথচারী, যাত্রী এবং সাধারণ মানুষকে লক্ষ্য করে নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ সাধারণ মানুষ কীভাবে সড়ক পারাপার হবে ও যাত্রীদের আচরণ কী হওয়া উচিত—এটিই মূল বিষয় ছিল। জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উপলক্ষে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কর্মসূচি শোভাযাত্রা ও পথচারীদের সচেতনতা সৃষ্টিতে সীমাবদ্ধ ছিল।

সড়ক পরিবহন বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী প্রথম আলোকে বলেন, নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতে শনিবার থেকে পরবর্তী সাত দিন তাঁরা সড়কে থাকবেন। ঢাকায় সাত স্থানে এবং ৬৪ জেলায় মানুষকে সচেতন করা হবে। তিনি জানান, করোনা মহামারির কারণে নিরাপত্তা কাউন্সিলের বৈঠক হয়নি। শিগগিরই বৈঠক হবে।

সচিব বলেন, দুর্ঘটনার পেছনে চালক, যানবাহনের মালিক, পথচারীসহ অনেক বিষয় জড়িত। সব পক্ষকে নিয়ে কাজ করবেন বলেও জানান তিনি।

সড়কে প্রাণ ঝরছেই

নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করা সরকারের যেসব দপ্তরের দায়িত্ব, তারাই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে তৎপর নয়। প্রতিবছরই সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি বাড়ছে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) হিসাবমতে, ২০১৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ছয় বছরে ২১ হাজার ৬৬২ জন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। এর মধ্যে ২০১৬ সালে সড়কে ২ হাজার ২২২ এবং সর্বশেষ গত বছর ৩ হাজার ৭৭৬ জনের প্রাণ গেছে। অর্থাৎ প্রতিবছর দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি বাড়ছে।

বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠনের হিসাবে, সড়ক দুর্ঘটনায় বছরে ৭ থেকে ৯ হাজার মানুষের প্রাণহানি হয়। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রতিবেদন অনুসারে, দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিবছর প্রায় ২৫ হাজার মানুষ মারা যায়।

২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ২৫ শতাংশ বেড়েছে। ১০ বছর আগে দুর্ঘটনার যে ঝুঁকি ছিল, তা আরও বেড়েছে।
মো. হাদিউজ্জামান, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক

স্বাস্থ্য ও মানুষের আয়ুষ্কাল–সংক্রান্ত তথ্যভান্ডার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক লাইফ এক্সপেটেন্সি বিশ্বব্যাপী সড়ক দুর্ঘটনা, কোভিড-১৯, নানা রোগসহ বিভিন্ন কারণে মৃত্যুর তাৎক্ষণিক (রিয়েল টাইম) তথ্য প্রকাশ করে। তাদের হিসাবে, বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে ১৬.৭৪ জন মারা যান। ১৮৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৮তম। ২০১৮ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১০৬তম। অর্থাৎ তিন বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশের ১৮ ধাপ অমনমন হয়েছে।

বর্তমানে খারাপের দিক থেকে শীর্ষে বা প্রথম তিনটি স্থান দখলে থাকা দেশগুলো হচ্ছে যথাক্রমে ডমিনিকান রিপাবলিক, জিম্বাবুয়ে ও মালাউই। এই তালিকায় সবচেয়ে খারাপ অবস্থা আফ্রিকার দেশগুলোরই।

সবচেয়ে ভালো অবস্থা অ্যান্টিগা ও বার্বাডোজের। দ্বীপদেশ দুটিতে যানবাহনের সংখ্যা খুবই কম। ফলে এখন পর্যন্ত দুর্ঘটনায় প্রাণহানি হয়নি। এশিয়ার দেশ সিঙ্গাপুরে প্রতি লাখে ১.৬৯ জন প্রাণ হারায় সড়কে। ভালো অবস্থানে থাকা আরও দেশ হচ্ছে মাইক্রোনেশিয়া, সুইজারল্যান্ড, নরওয়ে, আইসল্যান্ড ও মালদ্বীপ।

অথচ সরকার টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টে (এসডিজি) আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি অর্ধেকে নামিয়ে আনার লক্ষ্য ঠিক করেছে। কিন্তু এর জন্য পরিকল্পিত কোনো কর্মসূচি দেখা যায় না। কিংবা ২০১৫ সালে শুরু হওয়া এসডিজির লক্ষ্য পূরণের পথে দুর্ঘটনা কমার লক্ষণ নেই। বরং বাড়ছে প্রতিনিয়ত।

গত বছর নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতে অর্থায়নের জন্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে বিশ্বব্যাংক। এ সময় সংস্থাটি বাংলাদেশের সড়ক দুর্ঘটনাসংক্রান্ত নানা বিশ্লেষণ তুলে ধরে।

২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির বিশ্লেষণ করে বিশ্বব্যাংক বলেছে, এ সময় সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো ব্যক্তিদের ৫৪ শতাংশ দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষ। তাদের প্রায় অর্ধেক আবার পথচারী। এসডিজিতে আগামী এক দশকে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি অর্ধেকে নামিয়ে আনার জন্য প্রায় ৮০০ কোটি ডলার ব্যয় করতে হবে বলে জানায় বিশ্বব্যাংক। অথচ সরকার চার লেনের মহাসড়ক নির্মাণ ছাড়া এই কাজে আলাদা মনোযোগ দিচ্ছে না।

২০১৮ সালের জুলাইয়ে বিমানবন্দর সড়কে শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী বাসের চাপায় নিহত হওয়ার পর ওই কলেজের শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে নামে। একপর্যায়ে তা ঢাকাসহ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে যানবাহনের কাগজপত্র, চালকের লাইসেন্স পরীক্ষা করে, সংকেত মেনে যানবাহন চলাচল ও শৃঙ্খলায় রক্ষায় তৎপরতা দেখায়। সে সময় সরকারের মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা বলেছিলেন, ‘শিশুরা আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে, বিবেককে জাগ্রত করেছে।’

ওই বছর তড়িঘড়ি করা হয় সড়ক পরিবহন আইন। আইন অমান্যের শাস্তি কঠোর করা হয়। কিন্তু বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ধাক্কা খায় সরকার। ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতাদের নেতৃত্বাধীন পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলো ধর্মঘট ডেকে বসে। সরকার তাদের দাবি মেনে এই দুটি অপরাধের শাস্তি স্থগিত করে। আইনের প্রয়োগ শিথিল করে দেয়।

এর ফলে সড়ক পরিবহন আইনে লাইসেন্সবিহীন চালক ও ফিটনেসবিহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির যে বিধান আছে, এর প্রয়োগ বন্ধ হয়ে যায়।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে দূরপাল্লার পথে চলাচলকারী যানের চালকদের বিশ্রামের ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়েছিল সরকার। তা এখনো হয়নি। সড়কে অতিরিক্ত গতিতে চলাচলকারী যানবাহন চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার কাজও এগোয়নি।

সিদ্ধান্ত হয়, কার্যকর হয় না

জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের জন্ম ১৯৯৫ সালে। কাউন্সিলের অধীনে ১৯৯৭ সাল থেকে দুই বছর মেয়াদি নিরাপদ সড়কসংক্রান্ত কৌশলগত পরিকল্পনা করে আসছে সরকার। ২০১৭ সাল থেকে তিন বছর মেয়াদি পরিকল্পনা হচ্ছে। প্রতিবারই দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি অর্ধেক কমানোর কথা বলা হয়েছে।

তবে কীভাবে দুর্ঘটনা কমানো হবে—এর কারিগরি বা বৈজ্ঞানিক কোনো পদ্ধতি দাঁড় করাতে পারেনি সরকার। দুর্ঘটনা কমাতে সারা বছর ধরে যে কর্মসূচি থাকার কথা, এরও কোনো উল্লেখ নেই পরিকল্পনায়। নামকাওয়াস্তে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ কাজ করবে, এর ফিরিস্তি তুলে ধরা হয়েছে।

সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বাধীন সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিল দেশের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম হলেও নিরাপদ সড়কসংক্রান্ত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে মনোযোগ নেই তাদের। বরং বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তর চার লেন সড়ক, উড়ালসড়ক, মেট্রোরেলসহ মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে তৎপর।

সড়ক আইন বাস্তবায়ন, পথচারী পারাপার নিশ্চিত করা, চালকের লাইসেন্স ও যানবাহনের ফিটনেস নিশ্চিত করা, যানবাহনের গতিনিয়ন্ত্রণ—এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু বাস্তবায়ন হয় না। বড় বড় অবকাঠামো প্রকল্পে বিপুল বিনিয়োগ হচ্ছে, সেখানে দুর্নীতি ও বাড়তি ব্যয়ের অভিযোগ রয়েছে।

২০১১ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করেছিল সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিল। উদ্দেশ্য ছিল সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে করণীয় ঠিক করা। কমিটি ৮৬ দফা প্রস্তাব দিয়েছিল। এর বেশির ভাগই চালক, যানবাহন ও সড়ক–সংশ্লিষ্ট সংস্কার প্রস্তাব ছিল। ওই প্রতিবেদন এখন বিআরটিএতে পড়ে আছে।

২০১৫ সালে গাড়িতে ‘স্পিড গভর্নর’ নামের একটি যন্ত্র বসিয়ে মহাসড়কে সর্বোচ্চ ৮০ কিলোমিটার গতিতে যানবাহন চলাচল নিশ্চিতের সিদ্ধান্ত হয়। পরে দেখা গেল সব যানবাহনে স্পিড গভর্নর যন্ত্র বসানোর ব্যবস্থা নেই। এরপর সিদ্ধান্ত হয় হাইওয়ে পুলিশ স্পিডগান দিয়ে গতি পরিমাপ করবে। তবে তা আর হয়নি। ২০১৬ সালে কাউন্সিল জাতীয় মহাসড়কে অটোরিকশা চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। তা–ও বাস্তবায়ন হয়নি।

রোড সেফটি বিভাগ আছে, কাজ নেই

বিআরটিএ, সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি), বাংলাদেশ পুলিশসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে রোড সেফটি উইং (নিরাপদ সড়কসংক্রান্ত শাখা) আছে। কিন্তু এসব দপ্তর সড়ক দুর্ঘটনার ওপর পূর্ণাঙ্গ কোনো গবেষণা করেনি। পুলিশ শুধু সড়ক দুর্ঘটনায় যেসব মামলা হয়, এর নথি ধরে হতাহতের একটা হিসাব দেয়। সেটা ধরেই বেশির ভাগ বেসরকারি সংস্থা ও ব্যক্তি গবেষণা করে থাকে।

যান চলাচলের নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে বড় অংশীদার বিআরটিএ। জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের সদস্যসচিবও সংস্থাটির চেয়ারম্যান। কিন্তু নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতে সারা বছর তাদের তেমন তৎপরতা দেখা যায় না। প্রতিবছর ২২ অক্টোবর জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবসকে কেন্দ্র করে কিছু পোস্টার-লিফলেট বিতরণ, সভা-সেমিনার করে। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে কিছু চালকের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করে।

সংস্থাটির কর্মকর্তারা বলছেন, তাঁদের রোড সেফটি উইংয়ের বাজেটই বছরে ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকা। এর একটা অংশ চলে যায় বৈঠকে আপ্যায়নে। বাকিটা পোস্টার ছাপিয়ে ব্যয় করা হয়।

সওজ ও এলজিইডি—দেশের প্রায় সব সড়কের নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে। দুটি সংস্থারই রোড সেফটি উইং আছে। তবে তাদের দৃশ্যমান কোনো কর্মকাণ্ড দেখা যায় না। অন্যদিকে পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে সংস্থাটি সচেতনতামূলক কিছু কর্মসূচি পালন করে। ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশকে কিছু প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে।

সড়ক চওড়া হয়েছে, ঝুঁকি কমেনি

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ২৫ শতাংশ বেড়েছে। ১০ বছর আগে দুর্ঘটনার যে ঝুঁকি ছিল, তা আরও বেড়েছে। এর মধ্যে সড়ক চওড়া করেছে, যানবাহনের সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। সড়ক ও যানবাহনের ত্রুটি রয়েই গেছে। এতে সড়কে মৃত্যু ওত পেতে আছে। ফলে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি বাড়ছে।

এই অধ্যাপক উদাহরণ দিয়ে বলেন, গত এক বছরে ৬০ হাজার ফিটনেসবিহীন যানবাহন যোগ হয়েছে। অদক্ষ ও ভুয়া চালক যুক্ত হয়েছেন অসংখ্য। সড়ক চওড়া করার পর গাড়ি, দূরপাল্লার বাস ও ট্রাকের গতি বেড়ে গেছে।

কিন্তু এই একই সড়কে ধীরগতির ব্যাটারি রিকশা, অটোরিকশা চলাচল বন্ধ হয়নি। মহাসড়কে পাতালপথ বা জেব্রা ক্রসিং দিয়ে পথচারী পারাপারের কোনো ব্যবস্থা নেই। এত অসংগতি রেখে দিয়ে শুধু পোস্টার-লিফলেট ছাপিয়ে, মানুষকে বক্তৃতা দিয়ে সড়ক নিরাপদ করা যাবে না।