‘বিতর্কিত’ দুই এমডিকে আবার নিয়োগ

তাকসিম এ খান ও এ কে এম ফজলুল্লাহ

পানিসংকটের সমাধান না হওয়া, প্রকল্পের ধীরগতি, নিয়োগে অনিয়মসহ নানা বিতর্কের পরও ঢাকা ও চট্টগ্রাম ওয়াসার দুই ব্যবস্থপনা পরিচালককে (এমডি) আরও তিন বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা ওয়াসার তাকসিম এ খান সপ্তমবার ও চট্টগ্রাম ওয়াসার এ কে এম ফজলুল্লাহ অষ্টমবারের মতো নিয়োগ পেলেন। দুজনের মেয়াদ চলতি বছরের অক্টোবরে শেষ হচ্ছে। এর দুই মাস আগেই গতকাল বৃহস্পতিবার স্থানীয় সরকার বিভাগ পুনরায় নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করে।

স্থানীয় সরকার বিভাগের পানি সরবরাহ শাখার উপসচিব মুস্তাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ আইন ১৯৯৬-এর ২৮ (২) ধারা মোতাবেক তাকসিম এ খান এবং এ কে এম ফজলুল্লাহকে তিন বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ওয়াসা আইনে এমডি পদে একই ব্যক্তি সর্বোচ্চ কতবার বা কত বছর নিয়োগ পেতে পারেন, সে বিষয়ে কিছু বলা নেই।

আরও পড়ুন

‘বিতর্কিত’ তাকসিমেই ভরসা

২০০৯ সালে ওয়াসার এমডি নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিতে পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশনে অথবা সিনিয়র পর্যায়ে সাধারণ প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ২০ বছরের আবশ্যিক অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়। ওই সময় তাকসিম এ খানের এ-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। তবু তিনি নিয়োগ পেয়েছিলেন। তখন তাঁর মোট মাসিক বেতন ছিল ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। বর্তমানে তাঁর বেতন সর্বসাকল্যে ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা। গত ১২ বছরে তাঁর মাসিক বেতন বেড়েছে ৪২১ শতাংশ। সর্বশেষ করোনা মহামারির মধ্যে একলাফে বেতন বাড়ানো হয় পৌনে ২ লাখ টাকা। তাকসিম এ খান, তাঁর স্ত্রী ও সন্তানেরা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। ১৯৫৬ সালে তাঁর জন্ম। ওয়াসায় নিয়োগের আগে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থায় কাজ করেছেন তিনি।

প্রকল্প ব্যয় বাড়ানো, ঠিকাদার নিয়োগে সিন্ডিকেট, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগসহ বিস্তর অভিযোগ তাকসিমের বিরুদ্ধে। ২০২১ সালে ঢাকা ওয়াসার ১১টি দুর্নীতিগ্রস্ত খাত চিহ্নিত করে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দিয়েছিল দুদক। সম্প্রতি দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদক দুই সদস্যের দল গঠন করেছে।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন

৮১ বছর বয়সী ফজলুল্লাহ টানা ৮ বার

চট্টগ্রাম ওয়াসার এমডি এ কে এম ফজলুল্লাহর বয়স এখন ৮১ বছর। ১৪ বছর ধরে এ পদে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। চলতি বছর ৩০ অক্টোবরে তাঁর সাতবারের মেয়াদ শেষ হচ্ছে।

তাকসিমের মতো তিনিও ১৫০ শতাংশ বেতন বাড়ানোর চেষ্টা করেন গত বছরের জানুয়ারিতে। অর্থাৎ ১ লাখ ৮০ হাজার টাকার বেতন ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা করতে চেয়েছিলেন। এ নিয়ে সমালোচনা হলে তিনি বেতন বাড়ানোর আবেদন প্রত্যাহার করে নেন। এ ছাড়া এ কে এম ফজলুল্লাহর আমলে পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা গড়ে তুলতে পাঁচটি বড় প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কোনো প্রকল্পের কাজই নির্ধারিত মেয়াদে শেষ হয়নি। ব্যয়ও বাড়াতে হয়েছে তিনটির। নগরে পানিসংকটও কাটেনি। এ ছাড়া সংকটের মধ্যেও গত ১৩ বছরে পানির দাম বেড়েছে ১৪ বার।

১৯৪২ সালে জন্ম নেওয়া এ কে এম ফজলুল্লাহ চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে অবসর নেন ২০০০ সালে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে নিয়োগ পান ওয়াসায়। তবে এ কে এম ফজলুল্লাহ দাবি করেন, তাঁর সময়ে ওয়াসার পানির উৎপাদন বেড়েছে চার গুণ। নেওয়া হয়েছে বড় প্রকল্প।

দুর্নীতি, অনিয়মসহ নানা অভিযোগ থাকার পরও তাঁদের একই পদে রাখা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাবেক সভাপতি আকতার মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা ও চট্টগ্রাম ওয়াসার এমডিরা এমন অসাধারণ কিছু করেননি, যাতে তাঁদের আরও তিন বছর একই পদে রাখতে হবে। ওয়াসার পানি সরবরাহের ক্ষেত্রে কোনো টেকসই ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়নি। পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থাতেও সফলতা নেই।

আরও পড়ুন