পার্বত্য চুক্তি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে খোলাচিঠি
পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে খোলাচিঠি দিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন। সাত দফা দাবি তুলে তারা গতকাল রোববার এ চিঠি দেয়।
বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও মানবাধিকার সংগঠন মিলে গঠিত হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন। চলতি বছরই এটি গড়ে উঠেছে। তারা প্রথমবারের মতো দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে একাধিক সমাবেশ করেছে।
১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চুক্তি হয়। এর মাধ্যমে পাহাড়ে দীর্ঘ দুই যুগের অধিক সশস্ত্র সংঘাতের অবসান হয়। তৎকালীন সরকারের সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) মধ্যে এ চুক্তি সই হয়।
সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, চুক্তির বেশির ভাগ শর্তই পূরণ করা হয়েছে। তবে জেএসএসের দাবি, ভূমি সমস্যার সমাধানসহ চুক্তির মৌলিক দিকগুলো এখনো উপেক্ষিত।
রাজনৈতিক দলগুলোকে দেওয়া খোলাচিঠিতে বলা হয়, ‘দেশের মানুষ আশা করেছিল, সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে পাহাড়ের এসব জাতিসত্তাকে অস্বীকারের মাধ্যমে রাষ্ট্র যে ঐতিহাসিক ভুল করেছিল, তা থেকে মুক্তির পথ কিছুটা হলেও সমাধান দেবে স্বাক্ষরিত এই চুক্তি। কিন্তু বাস্তবতা হলো, পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরের প্রায় ২৫ বছর পেরিয়ে গেলেও এই চুক্তির মৌলিক বিষয় এখনো বাস্তবায়িত হয়নি এবং পার্বত্য চট্টগ্রামকে পাহাড়ি অধ্যুষিত অঞ্চল হিসেবে তার অনন্য বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণ ও বিকাশের কাজটি এখনো অসম্পূর্ণ থেকে গেছে। ফলে পার্বত্য অঞ্চলে এখনো ঔপনিবেশিক কায়দায় পাহাড়ি মানুষের ওপর শাসন ও শোষণ অব্যাহত রয়েছে।’
চিঠিতে বলা হয়, পার্বত্য সমস্যাকে জিইয়ে রেখে বাংলাদেশের সামগ্রিক অগ্রযাত্রা সম্ভব নয়। তারা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে সাত দফা দাবি তুলে ধরেছে খোলাচিঠিতে। এর মধ্যে আছে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য সময়সূচিভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করে এই চুক্তির দ্রুত ও যথাযথ বাস্তবায়ন করা; আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদগুলোতে প্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিকীকরণ ও স্থানীয় শাসন নিশ্চিত করতে পার্বত্য চুক্তি মোতাবেক যথাযথভাবে ক্ষমতায়িত করা; পার্বত্য ভূমি সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনকে কার্যকর করার মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু ও ভারত থেকে আসা জুম্ম শরণার্থীদের পুনর্বাসন করে তাঁদের ভূমি অধিকার নিশ্চিত করা; দেশের মূলধারার অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও টেকসই উন্নয়ন কর্মসূচিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের অংশীদারত্ব নিশ্চিত করা; ইউনিয়ন পরিষদসহ সব স্তরের স্থানীয় সরকারে সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ আসন সংরক্ষণ ও তাদের জীবনমান উন্নয়নে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন করা।
দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যাকে গভীরভাবে উপলব্ধি করে সেখানকার পাহাড়ি জনগণের ন্যায্যতার পক্ষে দাঁড়িয়ে সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান নিশ্চিত করতে রাজনীতিবিদদের ভূমিকা অগ্রগণ্য। রাজনীতিবিদেরাই সমাজকে পথ দেখিয়েছেন, নীতির ভিত্তিতে জনগণকে নেতৃত্ব দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। আমরা আশা করি, দেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ তাঁদের স্ব স্ব দল ও অবস্থান থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যাকে শান্তিপূর্ণ ও রাজনৈতিক উপায়ে সমাধানের পন্থা হিসেবে ১৯৯৭ সালে যে “পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি” স্বাক্ষরিত হয়েছিল, তার পূর্ণাঙ্গ ও যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য সরকার ও সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর প্রতি চাপ সৃষ্টিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।’
চিঠিতে চার দফা আহ্বান তুলে ধরা হয় রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি। সেগুলো হলো, পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের দেওয়া ৭ দফা দাবির আলোকে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি ঘোষণা করা; প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে দলীয় নির্বাচনী ইশতেহারে ৭ দফা দাবি গুরুত্বসহকারে অন্তর্ভুক্ত করা; রাজনৈতিক দল ও তার সহযোগী সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রামসহ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীরর বিষয়ে একজন মুখপাত্র ও সাংগঠনিকভাবে সম্পাদকীয় পদ তৈরি করা এবং জাতীয় সংসদসহ স্থানীয় সরকার পরিষদগুলোর সব স্তরে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের দলীয় মনোনয়ন দেওয়া।
পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের পক্ষে সই করেন যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন ও খায়রুল ইসলাম চৌধুরী।