এভাবে গ্রেপ্তার ও মামলা গ্রহণযোগ্য নয়

রাশেদা কে চৌধূরী

প্রথম আলো অনলাইনের একটি প্রতিবেদন ফেসবুকে শেয়ার করার সময় ব্যবহৃত গ্রাফিক কার্ডকে কেন্দ্র করে যে ঘটনা ঘটে চলছে, তা হতভম্ব হয়ে যাওয়ার মতো বিষয়।

একজন নাগরিক হিসেবে আমার মনে হচ্ছে, এই বিষয়কে ঘিরে বিভিন্ন মহল থেকে যেভাবে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখানো হচ্ছে, তা গ্রহণযোগ্য নয়। ঘটনাটি নিন্দনীয় হতে পারে বা কেউ পছন্দ না করলে পাল্টা বক্তব্য দিতে পারে, প্রতিবাদ জানাতে পারে; এটি গণতান্ত্রিক ভাবধারার অংশ। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সবারই আছে। কিন্তু এটা নিয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয় কী করে? আমি আইনজ্ঞ নই, সাধারণ নাগরিক হিসেবে এটি আমার কাছে বোধগম্য নয়। এটি নীতিনির্ধারকদের বিবেচনা করা উচিত। এ নিয়ে নীতিনির্ধারকেরা এখন নানাভাবে বক্তব্য দিচ্ছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। নানা ধরনের বক্তব্য থেকে বুঝতে পারছি না, ঘটনাটি কোন দিকে মোড় নিচ্ছে। তবে মোদ্দা কথায় যেটা বুঝতে পারি তা হলো একজন সম্পাদকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা ও একজন সাংবাদিককে তুলে নিয়ে পরে গ্রেপ্তার দেখানো এবং পরবর্তী ঘটনাগুলো গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করছে।

আরও পড়ুন

নীতিনির্ধারকদের কেউ কেউ মনে করছেন, একটি প্রতিবেদনের ঘটনায় দেশের ‘ভাবমূর্তি’ ক্ষুণ্ন হচ্ছে। কিন্তু নীতিনির্ধারকেরা যেভাবে বক্তব্য দিচ্ছেন, তাতে কি ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে না? বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে উঠেছে। এ নিয়ে আমরা গর্ব করি। কিন্তু উন্নয়ন তো শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং রুটি, রুজি ও আশ্রয়ের নিশ্চয়তাই নয়। মানব মর্যাদার অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, যা পৃথিবীর সব গণতান্ত্রিক দেশেই আছে। বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল সরকার পরিচালনায় আছে, তাদের সময়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার প্রত্যাশা করি না।

আরও পড়ুন

একজন নাগরিক হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করি বলে গর্ব করি। সে জন্য বলতে চাই, উগ্রবাদী জঙ্গিগোষ্ঠী ফেসবুক আর ইউটিউবে যেভাবে সরকারের বিরুদ্ধে, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালায়; সেখানে তো এভাবে তৎপর হতে দেখি না। সেখানে একটি অগ্রসর চিন্তার সংবাদপত্রের একজন সাংবাদিককে যেভাবে তুলে এনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে, সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, এটি গ্রহণযোগ্য নয়।

রাশেদা কে চৌধূরী: সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা