চট্টগ্রামে পুলিশের ধাওয়ায় ছত্রভঙ্গ জামায়াত নেতা–কর্মীরা, আটক ৪০

চট্টগ্রাম নগরের ওয়াসা মোড়ে মঙ্গলবার বিকেলে জড়ো হওয়া জামায়াত-শিবিরের নেতা–কর্মীদের ধাওয়া দেয় পুলিশ
ছবি: জুয়েল শীল

চট্টগ্রাম নগরের ওয়াসা মোড়সহ কয়েকটি স্থানে জড়ো হওয়া জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের নেতা–কর্মীদের ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে পুলিশ। আটক করা হয়েছে ৪০ জনকে। এ সময় আহত হয়েছে পুলিশ, পথচারীসহ অন্তত ১০ জন। আজ মঙ্গলবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ বলছে, পরিস্থিতি অশান্ত করতে জামায়াত–শিবিরের নেতা–কর্মীরা জড়ো হয়েছিলেন। তবে জামায়াত নেতা–কর্মীদের দাবি, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ড পাওয়া দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাজা পড়তে তাঁরা একত্রিত হয়েছিলেন।

আরও পড়ুন

আজ বিকেল চারটার দিকে নগরের ওয়াসা মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদের আশপাশে ৩০০ থেকে ৪০০ লোক জড়ো হয়েছেন। তাঁরা জানাজা পড়ার দাবি ও সরকারবিরোধী স্লোগান দিতে থাকেন। সেখানে উপস্থিত কয়েকজন জানান, তাঁরা গায়েবানা জানাজা পড়তে এসেছেন। তবে পুলিশ জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদের দিকে যেতে দিচ্ছে না।

চট্টগ্রাম নগরের আলমাস সিনেমা হলের সামনে জামায়াত-শিবিরের নেতা–কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়
ছবি: জুয়েল শীল

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, মসজিদের আশপাশে পুলিশ সদস্যরা মোতায়েন রয়েছেন। পুলিশের সাঁজোয়া যানও রয়েছে। পুলিশ কয়েকজনকে ওয়াসা মোড়ের সামনে থেকে সরিয়ে দেয়। এরপর তাঁরা মিছিল শুরু করেন। মিছিলটি নগরের কাজীর দেউড়ি এলাকায় পৌঁছালে সেখান থেকে পুলিশ সদস্যদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়া হয়।

এ সময় আশপাশ থেকে অন্য পুলিশ সদস্যরা এসে জামায়াত–শিবিরের কর্মীদের ধাওয়া দেন। একপর্যায়ে সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। ইটপাটকেলের আঘাতে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবিরসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। এ ছাড়া নুরুল ইসলাম নামের নগরের পাথরঘাটা এলাকার এক বাসিন্দা মাথায় আঘাত পান।

আরও পড়ুন

এদিকে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে নগর পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ সদস্য ওয়াসা মোড়ে জড়ো হওয়া জামায়াত–শিবির কর্মীদের ধাওয়া দেন। ধাওয়া খেয়ে চলে যাওয়ার সময় নগরের দামপাড়া এলাকায় মহানগর পুলিশের কার্যালয়ের প্রধান ফটক লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন তাঁরা। এতে তিন থেকে চার মিনিটের জন্য পুলিশের কার্যালয়ের সামনের সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে। পরে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে নগরের দামপাড়া বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত জামায়াত–শিবিরের কর্মীদের ধাওয়া করে। এরপর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

চট্টগ্রাম নগরের দামপাড়া এলাকায় বিকেলে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন জামায়াত-শিবিরের নেতা–কর্মীরা
ছবি: জুয়েল শীল

নগর পুলিশের উপকমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের বলেন, জামায়াত–শিবিরের কর্মীরা পরিস্থিতি অশান্ত করতে জড়ো হয়েছেন। পুলিশ ধাওয়া দিয়ে তাঁদের সরিয়ে দিয়েছে। তাঁরা যাওয়ার সময় নগর পুলিশের কার্যালয় লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়েন। এতে পুলিশের কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন। কোতোয়ালি থানার ওসি জাহিদুল কবির জানিয়েছেন, পুলিশ ধাওয়া দিয়ে জামায়াত–শিবিরের ৩০ থেকে ৪০ নেতা–কর্মীকে আটক করেছে।

জানতে চাইলে নগর জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির আ জ ম উবায়েদুল্লাহ আজ বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, নগরের জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদে আজ বাদ আসর দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাজার জন্য সময় নির্ধারিত করা হয়েছিল। পরে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে তা বাতিল করা হয়। কিন্তু ততক্ষণে দূরদূরান্ত থেকে অনেক মানুষ সেখানে পৌঁছে যান।

আরও পড়ুন

পরিস্থিত অশান্ত করতে জামায়াত–শিবিরের নেতা–কর্মীরা জড়ো হয়েছেন—পুলিশের এমন অভিযোগ অস্বীকার করে আ জ ম উবায়েদুল্লাহ বলেন, এগুলো পুলিশের পুরোনো অভ্যাস। ইচ্ছেমতো গ্রেপ্তার ও মামলা দিতে তারা এসব করছে।

চট্টগ্রাম নগরের দামপাড়া এলাকায় জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়
ছবি: জুয়েল শীল

গতকাল সোমবার রাতে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী মারা যান। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর।

আরও পড়ুন