সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন ঘিরে আইনজীবী ও গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর পুলিশের হামলা এবং আইনজীবীদের বিরুদ্ধে মামলার প্রতিবাদে আজ সোমবার বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম।
সমাবেশে ফোরামের নেতারা বলেছেন, পুলিশি হামলার বিচার করতে হবে। নতুন করে নির্বাচন দিতে হবে। যত দিন নতুন নির্বাচন না দেওয়া হবে ও হামলার বিচার না হবে, তত দিন আন্দোলন চলবে।
১৫ ও ১৬ মার্চ সমিতির নির্বাচন হয়। নির্বাচন ঘিরে পুলিশের হামলা ও মামলার প্রতিবাদে ১৭ মার্চ তিন দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে ফোরাম। এর মধ্যে আজ সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের কর্মসূচি ছিল।
১৫ ও ১৬ মার্চ সমিতির নির্বাচন হয়। নির্বাচনকে ঘিরে পুলিশের হামলা ও মামলার প্রতিবাদে ১৭ মার্চ তিন দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে ফোরাম। এর মধ্যে আজ সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের কর্মসূচি ছিল।
আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি প্রাঙ্গণে জড়ো হতে থাকেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। বেলা পৌনে একটার দিকে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড ও ‘কালো পতাকা’ নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে মাজার গেট দিয়ে বের হন আইনজীবীরা। পরে কদম ফোয়ারা–সংলগ্ন রাস্তায় গিয়ে অবস্থান নেন। প্রায় ১৫ মিনিট সেখানে অবস্থান করেন তাঁরা। এ সময় যান চলাচলে কিছুটা বিঘ্ন ঘটে। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে মিছিল নিয়ে বার কাউন্সিল–সংলগ্ন গেট দিয়ে সমিতি ভবনের সামনে এসে দেড়টার দিকে কর্মসূচি শেষ হয়।
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘স্বৈরাচারের কালো থাবা বিস্তার করছে দিন দিন। এর নজির হলো সুপ্রিম কোর্টে পুলিশের অযাচিত আক্রমণ, এটি শেষ করতে উদ্যোগ নিতে হবে। একটাই দাবি, শুধু স্বৈরাচারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আইনজীবীরা ঘরে ফিরবেন না।’
ফোরামের মহাসচিব কায়সার কামাল বলেন, ‘খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে, চক্রান্ত হয়েছে। হুঁশিয়ার করে বলে দিতে চাই—এই দিন কিন্তু সেই দিন নয়। আইনজীবী সমাজ রাজপথে নেমেছে। খালেদা জিয়ার ন্যায়বিচার রাজপথেই হবে। অবিলম্বে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন দিতে হবে।’
স্বৈরাচারের কালো থাবা বিস্তার করছে দিন দিন। এর নজির হলো সুপ্রিম কোর্টে পুলিশের অযাচিত আক্রমণ, এটি শেষ করতে উদ্যোগ নিতে হবে। একটাই দাবি, শুধু স্বৈরাচারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আইনজীবীরা ঘরে ফিরবেন না।
আইনমন্ত্রী ও অ্যাটর্নি জেনারেলের পদত্যাগ দাবি করে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক এই আইনজীবী আরও বলেন, অন্যথায় দেশের আইনজীবী সমাজ একবার রাস্তায় নেমেছে, আর রাস্তা থেকে উঠে যাবে না। দেশে আজ আইনের শাসন নেই। দেশ চায় একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন। আমরা আইনের শাসন কায়েম করার জন্য বদ্ধপরিকর। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা কায়েম করতে হবে।
সমিতির নির্বাচনে বিএনপি–সমর্থিত প্যানেল থেকে সভাপতি পদে আইনজীবী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন প্রার্থী হন, তিনি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিবও। ১৫ ও ১৬ মার্চ কোনো নির্বাচন হয়নি দাবি করে সমাবেশে মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, মৌখিকভাবে একজন আগন্তুক মো. মনিরুজ্জামানকে দিয়ে তারা ভোট পরিচালনা করতে চেয়েছিলেন। আইনজীবীরা প্রতিবাদ করেছিলেন ভোটকেন্দ্রে। তিন ঘণ্টা ভোট করতে পারেননি। হঠাৎ করে শত শত পুলিশ ঢুকে আইনজীবীদের ওপর হামলা করল, নিগৃহীত করল, পেটাল। সাংবাদিকদের নিগৃহীত করল। সবাইকে বের করে দিল। সেই লোকটা কে—আগন্তুক পুলিশের পাহারায় এখানে তথাকথিত নির্বাচন করল।
মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, এটি আইনের দৃষ্টিতে কোনো নির্বাচনই না। ভোটকেন্দ্র তারা দখল করল পুলিশের মাধ্যমে। পুলিশ কার অনুমতি নিয়ে এল? এজাহারে পুলিশ বলেছে আইনমন্ত্রী, অ্যাটর্নি জেনারেল ও মোমতাজ উদ্দিন ফকিরের (সমিতির সভাপতি) অনুরোধে তারা গিয়েছিল। আইনমন্ত্রী কেন পাঠালেন, কলঙ্ক ঘটেছে। এর দায়দায়িত্ব আইনমন্ত্রীকে নিতে হবে। পুলিশি হামলার বিচার করতে হবে। আইনমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে। নতুন নির্বাচন দিতে হবে। যত দিন নতুন নির্বাচন না দেবে, অবৈধ কমিটি থাকবে, পুলিশি হামলার বিচার না হবে—আন্দোলন চলবে।
নির্বাচনে বিএনপি–সমর্থিত প্যানেল থেকে সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন আইনজীবী মো. রুহুল কুদ্দুস। তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের মাধ্যমে ভোট চুরি ও ডাকাতির মহোৎসব হয়েছে। যে নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে পারেন না, আইনজীবীরা ভোট দিতে পারেন না—তা দিয়ে প্রমাণিত হয়, এ সরকারের আমলে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। আইন সমাজ ভোটের অধিকারের জন্য আন্দোলন করছে, আন্দোলন চলবে।
ফোরামের সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক গাজী কামরুল ইসলামের সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যদের মধ্যে এই ইউনিটের সভাপতি আবদুল জব্বার ভূইয়া, ঢাকা বার ইউনিটের সভাপতি মাসুদ আহমেদ তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক ফারুকী বক্তব্য দেন।
এদিকে নির্বাচনে বিএনপিপন্থীদের ব্যালট পেপার ছিনতাই ও ভাঙচুর চালানোর প্রতিবাদে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সমিতির সভাপতি ও সম্পাদকের কক্ষের সামনে জড়ো হয়ে আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীরা স্লোগান দিতে থাকেন। সমিতি ভবনে মিছিল করেন তাঁরা। পরে বেলা সোয়া একটার দিকে সমিতি ভবনের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন।
এ সময় আইনজীবী মাহফুজুর রহমান, আবুল কালাম, নূরে আলম উজ্জ্বল ও জগলুল কবির প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বেলা দেড়টার দিকে দেখা যায়, আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীরা সমিতির সভাপতি ও সম্পাদকের কক্ষের সামনে সমবেত হয়ে স্লোগান দিচ্ছেন।