জামিনে বেরিয়ে আত্মগোপনে যুবক পেটানো সেই সোনা পাচারকারী

পরিবেশমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের সঙ্গে সুলতান মিয়া (বাঁয়ে)
ছবি: সংগৃহীত

দুবাই থেকে অবৈধভাবে আনা সোনা উদ্ধারে পুলিশকে দিয়ে এক যুবককে ধরিয়ে থানায় এনে পেটানো সেই সুলতান মিয়া সম্প্রতি সোনা পাচারের এক মামলায় জেল খেটেছেন। ঢাকার বিমানবন্দর থানায় করা ওই মামলায় গত বছরের ডিসেম্বরে তিনি গ্রেপ্তার হন। দুই সপ্তাহ আগে জামিনে বেরিয়ে আসেন সুলতান। তবে থানায় যুবককে পেটানোর ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর তিনি আত্মগোপনে চলে যান।

গত বছরের আগস্টে পুলিশ দিয়ে নাজমুল হাসান নামের এক যুবককে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থানায় তুলে আনেন সুলতান। সেটার ভিডিও সম্প্রতি প্রথম আলোর কাছে আসে। তাতে দেখা যায়, সাটুরিয়া থানার পরিদর্শকের (ওসি-তদন্ত) চেয়ারে বসে সোনা পাচারকারী হিসেবে পরিচিত সুলতান মিয়া জেরা করছেন নাজমুল হাসানকে। একপর্যায়ে পুলিশের এক সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) ওই যুবককে মারধর করেন। পরে ওসি-তদন্তের চেয়ার থেকে উঠে সুলতানও পেটাতে থাকেন।

এ ঘটনা জানাজানির পর মানিকগঞ্জ জেলা পুলিশ জানায়, একজন ভিআইপির অনুরোধে পুলিশ ওই যুবককে আটক করে সোনা উদ্ধার করে। তবে পুলিশ ওই ভিআইপির নাম বলেনি। অনুসন্ধানে জানা গেছে, সেই ভিআইপি হচ্ছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন। তিনি মৌলভীবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য।

এ বিষয়ে মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন গত শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘সুলতান আমার এলাকার ছেলে। দুবাই যাওয়া-আসা করে। তার সোনা হারিয়েছে বলে আমার কাছে এসে বলেছিল। আমি পুলিশকে বলেছিলাম তদন্ত করে সত্য-মিথ্যা যাচাই করতে। আমি পুলিশকে বলিনি তাকে ওসির (ওসি-তদন্ত) চেয়ারে বসাতে।’

সুলতানের বড় ভাই ফারুক মিয়ার সঙ্গে আজ শনিবার বিকেলে প্রথম আলোর ফোনে কথা হয়। তাঁদের বাড়ি মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়নে। তিনি বলেন, দুবাইয়ে অন্য আরেকজনের সঙ্গে ব্যবসায়িক বিরোধের জেরে তাঁকে (সুলতান) একটি সোনা পাচার মামলায় বিমানবন্দর থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল। দুই সপ্তাহ আগে সেই মামলায় তিনি জামিন পেয়েছেন।

আরও পড়ুন

সোনা উদ্ধারের ওই ঘটনা প্রসঙ্গে ফারুক মিয়া বলেন, সুলতান দুবাই থেকে তাঁর স্ত্রী এবং এক ভাগনির বিয়ের জন্য মানিকগঞ্জের এক ব্যক্তির মাধ্যমে (নাজমুল) সোনা পাঠান। ওই ব্যক্তিকে একটি টিকিট ও সোনার কর বাবদ ৪০ হাজার টাকাও দেন। ওই ব্যক্তি যেদিন দেশে আসেন, ওই দিন তাঁরা (ফারুক) বিমানবন্দরে সোনা আনতে গিয়েছিলেন। কিন্তু নাজমুল সোনা পৌঁছে না দিয়ে ফোন বন্ধ করে দেন।

ফারুক মিয়া আরও বলেন, এ ঘটনার পাঁচ-ছয় দিন পর সুলতান মিয়া ১০-১২ দিনের জন্য দেশে আসেন। দেশে আসার পর এলাকার সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের কাছে তাঁরা তিন-চারজন গিয়ে দেখা করে সোনা উদ্ধার করিয়ে দিতে অনুরোধ করেন। মন্ত্রী মানিকগঞ্জ জেলা পুলিশকে বলে দেন। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ২৬ লাখ টাকার সোনার মধ্যে ১৫ লাখ টাকার সোনা উদ্ধার করে।

ফারুকের দাবি, তাঁর ভাই সোনা পাচারের সঙ্গে জড়িত না। সুলতান দুবাইয়ে মালিকদের কাছ থেকে বাড়ি ইজারা নিয়ে অন্যদের কাছে ভাড়া দেওয়ার ব্যবসা করেন। প্রায় ১৫ বছর ধরে তিনি দুবাই থাকেন।

কথা বলতে সুলতান মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। সুলতানের মুঠোফোন নম্বর চাইলে ফারুক বলেন, তাঁর কাছে নম্বর নেই। জামিনে বেরিয়ে সুলতান বাড়িতে ৮–১০ দিন ছিলেন। এরপর সিলেটে যান। সেখানে যাওয়ার পর আর যোগাযোগ হয়নি।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফারুক মিয়াও দুবাই ছিলেন। মাস চারেক আগে তিনি দেশে এসেছেন। বিদেশ যাওয়ার আগে ফারুক মিয়া যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আজির উদ্দিন আজ শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘সোনা চোরাচালানে যুক্ত কি না, জানা নেই। দুবাই থাকেন। কয়েক দিন আগে বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাঁর ভাইয়ের (ফারুক মিয়া) কাছ থেকে জেনেছি জামিনে আসছেন।’

আরও পড়ুন