পাঁচ কেজি চালের জন্য পাঁচ ঘণ্টা অপেক্ষা

ওএমএস চাল কিনতে আসা মানুষের দীর্ঘ লাইন
ছবি: প্রথম আলো

সকাল ৭টা ৪৫ মিনিট। কেউ দাঁড়িয়েছেন লাইনে। কেউবা সঙ্গে আনা বাজারের ব্যাগ বিছিয়ে বসে পড়েছেন। অপেক্ষা খোলাবাজারে চাল বিক্রির (ওএমএস) ট্রাকের। কিন্তু ট্রাক আসবে আরও কয়েক ঘণ্টা পর। নগরের বহদ্দারহাট এলাকায় পুকুরপাড়ের সামনে আগেভাগেই ট্রাকের জন্য অপেক্ষমাণ মানুষের চিত্র এটি। নারী–পুরুষ মিলিয়ে তখন অপেক্ষায় ৫০ থেকে ৬০ জন।

কথা হয় চালের জন্য অপেক্ষমাণ সিএনজি অটোরিকশাচালক ইউসুফ নূরের সঙ্গে। জানালেন ফজরের আজানের পরপরই লাইনে দাঁড়িয়েছেন। গত কয়েক দিন এসেও পাননি কাঙ্ক্ষিত চাল। তাই আজ (বুধবার) ভোরে এসেই লাইনের শুরুর দিকে জায়গা করে নিয়েছেন।

প্রায় দুই ঘণ্টা পর সকাল ১০টার দিকে আসে কাঙ্ক্ষিত ওএমএসের ট্রাক। ততক্ষণে ভিড় বেড়েছে অন্তত চার গুণ। অনেকেই দাঁড়িয়েছেন লাইনের পেছনে। চাল বিক্রি কার্যক্রম শুরুর আধা ঘণ্টা পর দেখা গেল লাইনের শুরুতে থাকায় আজ চাল পেয়েছেন ইউসুফ। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পর চাল কিনতে পেরে স্বস্তি ফিরেছে তাঁর চোখে–মুখে।

ইউসুফ জানালেন, চাঁদগাঁও এলাকায় এক সেমি পাকা ঘরে স্ত্রী ও দুই মেয়েসহ থাকেন। তাঁর স্বল্প আয়ের ওপর নির্ভর চার সদস্যের পরিবার। বাজারে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে সাংসারিক খরচ মেটাতে পোহাতে বেগ পেতে হয় তাঁকে। কম দামে চাল কিনতে এখানে এসেছেন। আয়–ব্যয়ের জটিল হিসাব মেলাতে পাঁচ ঘণ্টা ধরে এ অপেক্ষা।

আরও পড়ুন

ইউসুফের পেছনে ফুটপাতে বসে ছিলেন দুজন। মাঝবয়সী ছবুর মিয়া ও প্রবীর দাস জানান, একই বস্তিতে থাকেন তাঁরা। গত দুদিন আসতে দেরি হওয়ায় চাল কিনতে পারেননি। আজ প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টার অপেক্ষার পর কিনতে পেরেছেন চাল।
বাড়ি ফেরার পথে তাঁরা জানালেন, স্বল্প আয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়।

আরও পড়ুন

লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অন্যদের গল্পও এর থেকে আলাদা নয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় বাড়তে থাকে ট্রাকের পেছনে। ট্রাকের বরাদ্দ ২ মেট্রিক টন চাল। প্রতি কেজি ৩০ টাকা দরে প্রত্যকে পাঁচ কেজি চাল পাবেন। সর্বমোট ৪০০ জন ক্রেতা পাবেন এ সুবিধা।

কিন্তু লাইনে অপেক্ষমাণ ক্রেতার সংখ্যা বরাদ্দের চেয়ে বেশি। তাই লাইনের শেষের দিকে দাঁড়িয়ে থাকা অনেকেই দুশ্চিন্তায় পড়ে যান, যদি চাল না পাওয়া যায়।

নগরের বিভিন্ন স্থানে একই চিত্র দেখা গেছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও চাল কিনতে ব্যর্থ হয়েছেন অনেকে। অপেক্ষমাণ লাইনে শুধু নিম্ন আয়ের নয়, বেড়েছে মধ্যবিত্ত ক্রেতার সংখ্যাও। চালের দামের ঊর্ধ্বগতিতে তাঁদের ভরসা খোলাবাজারের পণ্য বিক্রির ট্রাক।

আরও পড়ুন