ডেঙ্গুতে প্রায় ৫০% মৃত্যু হাসপাতালে ভর্তির এক দিনের মধ্যে

চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৫৫ জন। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ৫ জন। 

ডেঙ্গু রোগের বাহক এডিস মশাছবি: রয়টার্স

চলতি বছর দেশে প্রায় ৫০ শতাংশ ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে। এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যুর কারণ বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পেয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৫৫ জন। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় (গত রোববার সকাল আটটা থেকে গতকাল সোমবার সকাল আটটা পর্যন্ত) মারা গেছেন ৫ জন। এ সময়ে নতুন করে ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৬৩৬ জন। এ মাসের ১৫ দিনে আক্রান্ত ও মৃত্যু যথাক্রমে ৭ হাজার ৫১ এবং ৩৩। চলতি বছর কোনো মাসের অর্ধেক সময়ে এত আক্রান্ত বা মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি।

আরও পড়ুন

এবারের ডেঙ্গুতে মৃত্যু নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর একটি বিশ্লেষণ করেছে। মোট ৭৬টি মৃত্যু নিয়ে এই বিশ্লেষণ করা হয়। এর মধ্যে ৩৬ জনেরই মৃত্যু হয় হাসপাতালে আসার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে। অর্থাৎ মোট মৃত্যুর ৪৭ ভাগের বেশি মৃত্যু হয়েছে মাত্র এক দিনের মধ্যে। আর দুই দিনের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১৫ জনের। বাকি ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে ৩ থেকে ৫ দিনের মধ্যে।

এবার ডেঙ্গুতে যে ১৫৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, তার মধ্যে ৯৫ জনই মারা গেছেন ঢাকার দুই হাসপাতালে। অর্থাৎ ৬১ শতাংশ মৃত্যু হয়েছে এসব হাসপাতালে। যদিও এবার ঢাকার হাসপাতালগুলোয় ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন মোট আক্রান্তের মাত্র ২৫ ভাগ। এবার ঢাকার বাইরে সংক্রমণ যেমন বেশি, আবার মৃত্যুও গত বছরের চেয়ে বেশি।

চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৫৫ জন। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় (গত রোববার সকাল আটটা থেকে গতকাল সোমবার সকাল আটটা পর্যন্ত) মারা গেছেন ৫ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকার হাসপাতালে ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া বেশির ভাগ রোগীই ঢাকার বাইরের।

অধ্যাপক বে-নজির আহমদ
ফাইল ছবি

দেরিতে হাসপাতালে নেওয়া দ্রুত মৃত্যুর কারণ

চলতি বছর ঢাকার বাইরে যেভাবে ডেঙ্গু ছড়িয়েছে, তা আগে কখনো হয়নি। কিন্তু সে তুলনায় ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলো ততটুকু প্রস্তুত ছিল না বলেই মনে করেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বে–নজীর আহমদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা জটিল। একটা উপজেলা হাসপাতালে রোগীর প্রয়োজনীয় চিকিৎসার সুযোগ সীমিত। তাই রোগীর অবস্থা যখন জটিল হচ্ছে, তখনই তাঁকে জেলা বা সেখানে না হলে ঢাকার দিকে পাঠানো হচ্ছে।

ডেঙ্গু রোগ ও রোগীর অবস্থা নিয়ে সচেতনতার অভাব এত মৃত্যু বেড়ে যাওয়ার কারণ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। কয়েকজন চিকিৎসক প্রথম আলোকে বলেছেন, কোনো রোগীকে ঢাকায় আনতে গেলে অনেক পরিবারকেই নানা বিবেচনা করতে হয়। যেমন অ্যাম্বুলেন্স ঠিক করা বা তা নির্দিষ্ট সময়ে পাওয়া, অর্থের সংস্থান কিংবা রোগীর সঙ্গে কে থাকবে, তা ঠিক করা ইত্যাদি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সময় চলে যায়। এমন অবস্থায় জটিল রোগীর অবস্থা আরও জটিল হয়ে পড়ে।

আরও পড়ুন
এবারের ডেঙ্গুতে মৃত্যু নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর একটি বিশ্লেষণ করেছে। মোট ৭৬টি মৃত্যু নিয়ে এই বিশ্লেষণ করা হয়। এর মধ্যে ৩৬ জনেরই মৃত্যু হয় হাসপাতালে আসার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে।
অধ্যাপক টিটো মিঞা
ছবি: সংগৃহীত

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীকে দেরিতে হাসপাতালে নেওয়া দ্রুত মৃত্যুর কারণ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এর পাশাপাশি আরও কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেন দেশের বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক টিটো মিঞা। তিনি বলেন, এবার ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়াসহ আসলে মিশ্র ভাইরাল জ্বরের প্রকোপ দেখা গেছে। জ্বর হলে অবশ্যই ডেঙ্গুর ভাবনাটা আগে করতে হবে।

চলতি বছর আক্রান্ত ব্যক্তিদের অনেকেই দ্বিতীয়বারের মতো ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। অধ্যাপক টিটো মিঞা মনে করেন, ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া রোগীদের অনেকেই দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হতে পারেন। তিনি বলেন, ‘আমি বিষয়টি নিশ্চিত করে বলতে পারব না। তবে এটা হওয়ার শঙ্কা আছে।’

আরও পড়ুন

ডেঙ্গুর চারটি ধরন আছে। এর মধ্যে গত বছর পর্যন্ত টাইপ বা ধরন–২ এর প্রাধান্য ছিল। কিন্তু চলতি বছর সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) বরগুনা অঞ্চলের জরিপে দেখা গেছে, সেখানে টাইপ–৩–এ আক্রান্ত রোগীও পাওয়া গেছে। হঠাৎ করে এই নতুন ধরনে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বেশি হতে পারে, এমন ধারণা চিকিৎসকদের।

ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা জটিল। একটা উপজেলা হাসপাতালে রোগীর প্রয়োজনীয় চিকিৎসার সুযোগ সীমিত। তাই রোগীর অবস্থা যখন জটিল হচ্ছে, তখনই তাঁকে জেলা বা সেখানে না হলে ঢাকার দিকে পাঠানো হচ্ছে।
বে–নজীর আহমদ, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ

ডেঙ্গু রোগীর পরিস্থিতি জটিল হলে ‘শক সিনড্রোম’ হয়। তখন ‘এক্সপান্ডেড ডেঙ্গু’ হয়ে যায়। এর ফলে কিডনি, লিভার এবং কখনো কখনো মস্তিষ্কও আক্রান্ত হয় বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। এমন জটিল পরিস্থিতি হলে ঢাকার বাইরে অনেক ক্ষেত্রেই রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয় না। পুরো জটিলতার পেছনে দেরি করে হাসপাতালে আসা বা এর সম্পর্কে সচেতনতা না থাকাকে বড় কারণ বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্যবিদ বে–নজীর আহমদ। 

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন