চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি লবণাক্ত, ক্ষুব্ধ গ্রাহকদের মানববন্ধন

পানি লবণমুক্ত করা ও নগরের সব জায়গায় পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার দাবিতে মানববন্ধন করেন বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা। বুধবার দুপুর ১২টায় ওয়াসা ভবনের সামনেছবি: প্রথম আলো

চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাটের পশ্চিম ফরিদারপাড়া এলাকায় একটি ভাড়াবাসায় থাকেন নাসিমা আক্তার। প্রায় এক মাস তিনি ওয়াসার পানি নিয়ে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। নিয়মিত পানি আসছে না। যতটুকু আসছে, তা–ও লবণাক্ত। আগে পানি ফুটিয়ে পান করতেন। কিন্তু ঈদের পর থেকে পানিতে লবণের পরিমাণ বেড়ে গেছে।

সংকট নিরসনের দাবিতে আজ বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম ওয়াসা কার্যালয়ের পাশে মানববন্ধন করেছেন বিভিন্ন এলাকার অর্ধশতাধিক বাসিন্দা। মানববন্ধনে ছিলেন নাসিমা আক্তারও। সেখানেই কাপড় বিক্রেতা চল্লিশোর্ধ্ব নাসিমার সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের।

নাসিমা বললেন, ‘ফোটালেও পানির লবণক্ততা কমছে না। তাই বাধ্য হয়ে পানি কিনে পান করতে হচ্ছে। এখন প্রতিদিনই প্রায় আড়াই শ টাকার পানি কিনে ব্যবহার করতে হচ্ছে। কিন্তু প্রতিদিন পানি কেনার মতো সামর্থ্য নেই।’

ওয়াসার পানির সরবরাহ সংকট নিরসন ও পানিকে লবণমুক্ত করার দাবিতে এ মানববন্ধনের আয়োজন করে চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরাম নামের একটি সংগঠন।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি পান করার মতো অবস্থা নেই। পানিতে লবণের মাত্রা এত বেশি যে তা পান করে মানুষ অসুস্থ হচ্ছেন। প্রতিবছর নদীর পানিতে লবণের মাত্রা বেড়ে যায়। কিন্তু ওয়াসা কর্তৃপক্ষ সংকট মোকাবিলায় পূর্বপ্রস্তুতি নেয়নি। এ গাফিলতির দায় ওয়াসাকে নিতে হবে।

চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসাইন বলেন, ‘হাজার কোটি টাকা খরচ করে বিভিন্ন প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। বিনিময়ে আমরা কী পাচ্ছি? ওয়াসাকে এ সমস্যার সমাধান করতে হবে।’

মানববন্ধন শেষে ওয়াসা কর্তৃপক্ষের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। তাতে বলা হয়, নগরে বেশ কিছু এলাকায় ওয়াসার পানি সরবরাহ কম। এদিকে তিন মাস আগে থেকে পানিতে অতিরিক্ত লবণাক্ততার বিষয় নজরে আসার পরও কর্তৃপক্ষ সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হয়েছে। লবণাক্ত এ পানি পান করে ডায়াবেটিস, কিডনি রোগ, ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

চট্টগ্রাম নগরে ওয়াসার পানি লবণাক্ত। তাই বাসাবাড়ির লোকজন বোতলজাত পানি কিনে পান করছেন। ২০ লিটার বোতলজাত পানি বিক্রি হয় ৫০ টাকায়। বুধবার বিকেলে নগরের আগ্রাবাদ এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

সংকটের বিষয়ে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, সমুদ্রের পানি নদীতে ঢুকছে। তাই ছয় ঘণ্টা পানি উত্তোলন করা হচ্ছে না। পানির উৎপাদনও অর্ধেকে নেমেছে। এ ছাড়া কর্ণফুলী নদীতে শেওলা ঢুকছে। তিনি বলেন, রাসায়নিকের মাধ্যমে এ সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে মুষলধারে বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত এ সমস্যার পুরোপুরি সমাধান সম্ভব নয়।

মাকসুদ আলমের দাবি, অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে পানি পুরোপুরি পরিশোধন করলে খরচ বেশি পড়বে। এতে করে পানির দাম বেড়ে যাবে। আগে বছরে তিন–চার দিন লবণের সমস্যা হতো। কিন্তু এ বছর পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাবে একটু সমস্যা হয়েছে।

মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার সদস্য জহুর আহমদ চৌধুরীর ছেলে জসিম উদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের মহাসচিব কামাল উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মনসুর, জেলা সদস্য মাসুদ খান প্রমুখ।

আরও পড়ুন