৭২ বছর বয়সে সেফ এক্সিট! উপদেষ্টা ফাওজুলের কাছে কথাটি ‘দুঃখজনক’

সিলেট মহাসড়ক পরিদর্শনে গিয়ে গতকাল যানজটে আটকা পড়ে গাড়ি ছেড়ে মোটরসাইকেলে উঠেছিলেন উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান। হেলমেটবিহীন চালক নিয়ে সমালোচনার জবাবে ফেসবুকে আত্মপক্ষ সমর্থনে লেখেন তিনি; সেখানে ‘সেফ এক্সিটের’ আলোচনা নিয়েও কথা বলেনছবি: আনোয়ার হোসেন

সাবেক উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের এক বক্তব্যের পর আলোচনায় এখন সেফ এক্সিট। তা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়ছেন বিভিন্ন উপদেষ্টা। যোগাযোগ উপদেষ্টা মোহাম্মদ ফাওজুল কবির খানও পড়েছিলেন এই প্রশ্নের সামনে। জবাবে ব্যথিত মন নিয়ে তিনি বললেন, এমন কোনো চিন্তাই তাঁর নেই।

গতকাল বুধবার ভৈরব, আশুগঞ্জসহ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন স্থান পরিদর্শনকালে নিজের রোজনামচা আজ ফেসবুকে তুলে ধরেন উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান। সেখানে তিনি নাহিদ ইসলামের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ‘সেফ এক্সিট’ নিয়ে নিজের অবস্থান প্রকাশ করেন।

ফাওজুল কবির খান লিখেছেন, ‘উপদেষ্টা হিসেবে যোগদানের পর থেকে আমার রোজনামচা এমনই। গতকালও রাত আটটায় বাসায় ফিরেছি। নিজে পদে থেকে অন্যায় সুবিধা গ্রহণ করিনি। আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব কাউকে ব্যবসা বা চাকরি দিই নাই। নিজের সীমিত সামর্থ্যের সবটুকু ব্যবহার করে জনগণের প্রতি দায়িত্ব পালন করেছি। শিক্ষকতার সূত্রে, ইতিপূর্বে যুক্তরাষ্ট্র ও সিঙ্গাপুরের স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার নিশ্চিত সুযোগ গ্রহণ করিনি। তাই আজ ৭২ প্লাস বছর বয়সে আমাকে যদি সেফ এক্সিটের কথা ভাবতে হয়, তা হবে গভীর দুঃখের বিষয়!’

উপদেষ্টার পদ ছেড়ে রাজনীতিতে নেমে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়কের দায়িত্ব নেওয়া নাহিদ ইসলাম গত ৫ অক্টোবর এক টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘উপদেষ্টাদের অনেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে ফেলেছে, তারা নিজেদের সেফ এক্সিটের (নিরাপদ প্রস্থান) কথা ভাবতেছে।’এরপর তাঁর রাজনৈতিক সহকর্মী, এনসিপির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমও একই কথা বলেন।

নাহিদের বক্তব্যের পর গতকাল পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছিলেন সাংবাদিকেরা। জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি একদম কোনো এক্সিট খুঁজছি না। দেশেই ছিলাম, এর আগেও বহু ঝড়ঝঞ্ঝা এসেছে। সেসব ঝড়ঝঞ্ঝা প্রতিহত করে দেশেই থেকেছি। বাকিটা জীবনও বাংলাদেশেই কাটিয়ে যাব।’

একই দিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ফেরার পথে সেফ এক্সিট নিয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের মুখে পড়ার কথা জানান উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান। ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘এ বিষয়টি উত্থাপনকারী, সাবেক উপদেষ্টা ও বর্তমান এনসিপি নেতা নাহিদ ইসলাম আমার অত্যন্ত স্নেহভাজন ও জুলাই আন্দোলনের অগ্রসেনা হিসেবে শ্রদ্ধার পাত্র। তাই তার বক্তব্যের ওপর আমার মন্তব্য করা শোভন নয়। তা ছাড়া আমি রাজনৈতিক বিষয়ে কোনো মন্তব্য করি না।’

আরও পড়ুন

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে যানজটে আটকে পড়ার পর হেলমেটবিহীন চালকের মোটরসাইকেলে সওয়ার হওয়ার ব্যাখ্যাও ফেসবুক পোস্টে দেন উপদেষ্টা ফাওজুল। তিনি লেখেন, ‘সেখান (আশুগঞ্জ) থেকে সরাইলের পথে রওনা হই। সাত থেকে আট কিলোমিটার পথে এক ঘণ্টা অবস্থানের পরেও অগ্রগতি না হওয়ায় প্রথমে পায়ে হেঁটে ও পরে মোটরসাইকেলযোগে রওনা দিই। মোটরসাইকেল খুঁজতে গিয়ে দেখা যায়, চালক কিংবা যাত্রী কারোরই হেলমেট নাই। আট–দশটা মোটরবাইক খুঁজে একটিমাত্র হেলমেট পাওয়া যায়। অনেক খোঁজাখুঁজির ও অপেক্ষার পরও চালকের জন্য হেলমেট না পেয়ে সবার পরামর্শে একমাত্র হেলমেটটি নিজে পরে রওনা দিই।’

এরপর হেলমেটবিহীন বাইকচালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে পরামর্শ এবং বিআরটিএ, জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়ে আসেন বলে জানান উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান।

আরও পড়ুন