আমদানির টাকা থাকত না দাম না বাড়ালে

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ–এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মহিউদ্দিন

নসরুল হামিদ

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: আপনারা সহনীয় পর্যায়ে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, কিন্তু এক লাফে বেড়ে গেল ৪২ থেকে ৫১ শতাংশ; এতটা কেন বাড়াতে হলো?

নসরুল হামিদ: যে সময়ে এটা বলেছিলাম, তখন বিশ্ববাজারে প্রতি ব্যারেল ডিজেলের দাম ছিল ১৭০ মার্কিন ডলার। ওই সময় সমন্বয় করা হলে তেলের দাম অনেক বেড়ে যেত। সেটা না করে অপেক্ষা করা হয়েছে। এতে বিপিসির ঘাটতি বেড়েছে। গত কয়েক মাসে বিপিসি আট হাজার কোটি টাকার বেশি লোকসান দিয়েছে। এতে জ্বালানি তেলের মজুতও বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল। বিপিসি বারবার বলছিল, এভাবে চলতে থাকলে তেল আমদানির টাকা থাকবে না।

যতক্ষণ পারা যায়, অপেক্ষা করা হয়েছে। এখন দাম না বাড়িয়ে আর কোনো উপায় ছিল না। বিশ্ববাজারে ডিজেলের দাম কমে ১৩৯ ডলারে নেমে এসেছে। এতে প্রতি লিটার ডিজেলে বিপিসির খরচ পড়ছে ১২২ টাকা। এ অবস্থায় দাম সমন্বয় করে লিটার ১১৪ টাকা করা হলো। এখন ৩৪ টাকা না বাড়িয়ে আরও অপেক্ষা করলে বিপিসির তেল আমদানির টাকা থাকত না। দাম কমার প্রবণতা আছে বিশ্ববাজারে। সবাই মিলে একটু সাশ্রয়ী হলে দ্রুত পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসা যাবে।

প্রশ্ন :

ডিজেল আমদানিতে মোট করভার ৩২ শতাংশ। সরকার কর মওকুফ করে বা কমিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারত কি না।

নসরুল হামিদ: সরকার থেকে ভর্তুকি নেওয়া হচ্ছে না, বরং রাজস্ব দেওয়া হচ্ছে। এটি কমানোর বিষয়ে এনবিআরের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। তারা সম্মত হয়নি। যদি কিছুটা কমানো যেত আর বাকিটা দামের সঙ্গে সমন্বয় করা হতো; তাহলে এত পরিমাণে দাম বাড়ানো হতো না।

আরও পড়ুন

প্রশ্ন :

ভারত স্বয়ংক্রিয়ভাবে জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণ করে, দামের পার্থক্য সব সময় ছিল; তাহলে এখন তেল পাচারের প্রশ্ন আসছে কেন?

নসরুল হামিদ: এটা সব সময় প্রাসঙ্গিক ছিল। গত নভেম্বরে ভারতের সঙ্গে মিলিয়ে দাম সমন্বয় করা হয়েছিল। ডিজেলের দাম ৭৯ ডলারে না নামলে বিপিসির লোকসান করতে হয়। এর কাছাকাছি এলে দাম বাড়িয়ে সমন্বয় করা হতো না। বিপিসির টাকা ফুরিয়ে আসছে, তাই বাধ্য হয়ে দাম বাড়াতে হয়েছে।

আরও পড়ুন

প্রশ্ন :

আগে থেকেই মানুষ কষ্টে আছে। এখন শুধু পরিবহন ভাড়া নয়, বাজারে জিনিসপত্রের দাম অনেক বেড়ে যাবে; প্রভাব মূল্যায়ন করা হয়েছে কি?

নসরুল হামিদ: গত মাসে পরিবহনমালিকদের সঙ্গে, এরপর বিআরটিএর সঙ্গেও পরিবহন ভাড়ার ফর্মুলা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। লঞ্চমালিকদের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। এতে দেখা যায়, ডিজেলে লিটারে ১০ টাকা বাড়ানো হলে যাত্রীপ্রতি খুব একটা খরচ বাড়ে না।

দুই মাস ধরে হোমওয়ার্ক করেছি। শহরের মধ্যে মানুষের বাসের খরচ হিসাব করে দেখা হয়েছে। পরিবহন ব্যবহৃত হয় এমন জিনিসপত্রের ক্ষেত্রে অবশ্যই একটা প্রভাব পড়বে। দাম কিছুটা বাড়তে পারে, তবে তা অতিসামান্য।

প্রশ্ন :

২০১৪-১৫ থেকে ২০২০-২১ অর্থবছরে বিপিসি মুনাফা করেছে ৪৩ হাজার ১৩৭ কোটি টাকার বেশি। তাহলে গত এক বছরের মধ্যে বিপিসি এতটা চাপে পড়ল কেন?

নসরুল হামিদ: বিপিসির অনেকগুলো বড় প্রকল্প আছে। গভীর সমুদ্রে পাইপলাইন, ভারত থেকে জ্বালানি তেল আনার পাইপলাইন এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম পাইপলাইন হচ্ছে। নতুন করে একটি তেল পরিশোধনাগার বসানোর প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এসব প্রকল্পের জন্য অর্থ বরাদ্দ রাখা ছিল। এতে বিপিসির জমানো টাকা খরচ হয়ে গেছে। প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সরকারকে রাজস্ব দিতে হয়, সেখানেও বকেয়া আছে। এনবিআর পাওনা চেয়ে চিঠি দিয়েছে। বিপিসি বড় ধরনের চাপে পড়ে গেছে।

প্রশ্ন :

অনেকেই বলছেন, আইএমএফের ঋণ পেতে শর্ত মেনে ভর্তুকি প্রত্যাহার করতে গিয়ে এক লাফে এত বেশি দাম বাড়ানো হয়েছে, আপনি কী বলবেন?

নসরুল হামিদ: মোটেই না। আইএমএফের ঋণের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। বিপিসির আয়-ব্যয় পরিস্থিতি হিসাব করেই এটা করা হয়েছে।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে; গ্যাসের দামও আবার বাড়ানোর আলোচনা আছে। মানুষ এত চাপ নিতে পারবে কি না?

নসরুল হামিদ: বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমার প্রবণতা আছে। দাম কমলে খুব শিগগির দেশে সমন্বয় করা হবে। ডিজেলের দামের প্রভাব সাধারণ মানুষের মধ্যে পড়ে। যাতায়াত খরচ ও পণ্য পরিবহনে খরচ বেড়ে যাওয়ার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের ওপর চাপ তৈরি হয়। এ ছাড়া ধীরে ধীরে লোডশেডিং থেকে বেরিয়ে আসার চিন্তা আছে।