এবার চবির মূল ক্যাম্পাসে অবস্থান চারুকলার শিক্ষার্থীদের

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে অবস্থান নিয়েছেন চারুকলার শিক্ষার্থীরা। আজ রোববার বেলা ১১টায়
ছবি: মোশাররফ শাহ

এবার মূল ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

আজ রোববার সকাল ১০টার দিকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে অবস্থান নেন। চারুকলাকে মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের দাবি তাঁদের। এই দাবিতে তাঁরা তিন মাসের বেশি সময় ধরে আন্দোলন করছেন।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে চারুকলায় সশরীরে শ্রেণি কার্যক্রম এক মাসের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের চারুকলা ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। ভবন সংস্কারের কথা বলে কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত নেয়।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলছেন, নিষেধাজ্ঞার কারণে তাঁরা মূল ক্যাম্পাসে অবস্থান নিতে বাধ্য হয়েছেন। দাবি না মানা পর্যন্ত তাঁরা মূল ক্যাম্পাসেই বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবেন।

আরও পড়ুন

আজ সকাল সাড়ে ১০টায় সরেজমিনে শহীদ মিনারের সামনে গিয়ে দেখা যায়, চারুকলার অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী সেখানে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। তাঁদের হাতে বিভিন্ন স্লোগানসংবলিত প্ল্যাকার্ড। প্ল্যাকার্ডগুলোতে লেখা ‘দাবি মোদের একটাই, চারুকলা ক্যাম্পাসে চাই’, ‘আমাদের দাবি মানতে হবে, প্রশাসনের টালবাহানা মানি না মানব না’, ‘আমরা ক্যাম্পাসে ফিরতে চাই, চারুকলা ক্যাম্পাসে চাই’ ইত্যাদি স্লোগান।

জানতে চাইলে চারুকলার দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তাওহীদ এলাহী প্রথম আলোকে বলেন, ১ ফেব্রুয়ারি রাতে পুলিশ দিয়ে চারুকলায় তল্লাশি চালানো হয়। এই তল্লাশির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের একধরনের ভয় দেখিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ কারণে তাঁরা আর চারুকলায় অবস্থান করছেন না। তাই বাধ্য হয়ে এখন তাঁরা মূল ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়েছেন। পাশাপাশি মূল ক্যাম্পাসে চারুকলা থাকাটা কতটা জরুরি, তা অন্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের বোঝাতে এসেছেন তাঁরা।

স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী জহির রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, আন্দোলন বানচাল করতে কর্তৃপক্ষ এক মাসের জন্য চারুকলা বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তে তাঁদের আন্দোলন আরও বেগবান হয়েছে। তাঁরা এখন থেকে মূল ক্যাম্পাসে কর্মসূচি পালন করবেন।

আরও পড়ুন

১ ফেব্রুয়ারি আন্দোলনের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন চারুকলার শিক্ষার্থীরা। সেদিন তাঁরা বলেছিলেন, ২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে চারুকলার শিক্ষকেরা যদি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা না বসেন, তাহলে তাঁরা ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে আমরণ অনশনে যাবেন।

অনশনের বিষয়ে জানতে চাইলে জহির রায়হান বলেন, চারুকলা হঠাৎ করে বন্ধ করে দেওয়ায় শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েছেন। অনেকে থাকার জন্য জায়গা পাচ্ছেন না। এ ছাড়া চারুকলায় অবস্থান করার বিষয়ে কর্তৃপক্ষ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এখন তাঁরা অনশন করলে কোথায় করবেন, এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছে। কিছুটা সময় নিয়ে পরে তাঁরা অনশনের কর্মসূচি দেবেন।

শ্রেণিকক্ষে পলেস্তারা খসে পড়ার জেরে ২২ দফা দাবিতে চারুকলার শিক্ষার্থীরা গত ২ নভেম্বর ক্লাস বর্জনসহ অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছিলেন। একপর্যায়ে চারুকলাকে নগর থেকে মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নিতে এক দফা দাবি দেন তাঁরা।

আরও পড়ুন

প্রশাসন দাবি না মানায় ১৬ নভেম্বর চারুকলার মূল ফটকে শিক্ষার্থীরা তালা ঝুলিয়ে দেন। সেদিন থেকে অচল হয়ে হয়ে পড়ে চারুকলার কার্যক্রম।

কর্তৃপক্ষকে সাত দিনের সময় বেঁধে দিয়ে শর্ত সাপেক্ষে ২৩ জানুয়ারি থেকে ক্লাসে ফিরেছিলেন শিক্ষার্থীরা। গত মঙ্গলবার থেকে তাঁরা আবার অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেন। ৩১ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের আরেকটি পক্ষ ক্লাসে ফেরার দাবি জানায়। গত বুধবার দিবাগত রাতে চারুকলায় তল্লাশি চালায় পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডি।

চবিতে চারুকলা বিভাগের যাত্রা শুরু হয় ১৯৭০ সালে। ২০১০ সালে নগরের সরকারি চারুকলা কলেজের সঙ্গে এক হয়ে গঠিত হয় চারুকলা ইনস্টিটিউট। চারুকলার অবস্থান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে নগরের মেহেদীবাগের বাদশা মিয়া সড়কে। বর্তমানে ইনস্টিটিউটে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৫৩ জন।