মেয়েকে নিয়ে জাপানি মায়ের দেশত্যাগ, আদালত অবমাননার অভিযোগে বাবার আবেদন

হাইকোর্ট ভবনফাইল ছবি

বড় মেয়েকে নিয়ে মা জাপানি নাগরিক এরিকো নাকানোর বাংলাদেশ ছেড়ে জাপানে চলে যাওয়ার ঘটনায় আদালত অবমাননার অভিযোগে আবেদন করা হয়েছে। ওই শিশুর বাবা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক ইমরান শরীফ আদালতে এই আবেদন করেছেন। আবেদনটি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য ২১ এপ্রিল দিন ধার্য করা হয়েছে। আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম আজ সোমবার এই দিন ধার্য করেন।

এই দম্পতির দুই শিশুর হেফাজত নিয়ে বিচারিক আদালতের দেওয়া সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে শিশুদের বাবার করা এক আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রায় দেন। রায়ে বলা হয়, ব্যতিক্রমী পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত মেজ মেয়েটি তাঁর বাবা ইমরান শরীফের হেফাজতে থাকবে। আর বড় মেয়ে তাঁর মা এরিকো নাকানোর হেফাজতে থাকবে।

মেজ সন্তান বাবার কাছে থাকবে, এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেন এরিকো, যা চেম্বার আদালত হয়ে গত ১১ মার্চ আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে। সেদিন আদালত আবেদনটির শুনানি ২১ এপ্রিল পর্যন্ত মুলতবি করেন। এই সময়ের মধ্যে তাঁকে নিয়মিত লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করতে বলা হয়। এরিকো ইতিমধ্যে নিয়মিত লিভ টু আপিল করেছেন বলে জানিয়েছেন তাঁর আইনজীবী।

এদিকে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে শিশুদের বাবা ইমরান শরীফ একটি আবেদন (লিভ টু আপিল) করেন, যা ৯ এপ্রিল আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে শুনানির জন্য ওঠে। সেদিন চেম্বার আদালত ১৫ এপ্রিল শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন। এই সময় পর্যন্ত মামলার বিষয়ে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে পক্ষগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়। সেদিন দুপুরে বড় মেয়েকে নিয়ে জাপানের উদ্দেশে বাংলাদেশ ছাড়েন এরিকো।  

এই অবস্থায় এরিকোর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে ইমরান আবেদনটি করেন, যা আজ আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে শুনানির জন্য ওঠে। আদালতে ইমরানের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আখতার ইমাম ও আইনজীবী রাশনা ইমাম। এরিকোর পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।  

ইমরানের আইনজীবী রাশনা ইমাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আদালতের স্থিতাবস্থা সত্ত্বেও বড় মেয়েকে নিয়ে দেশত্যাগের কারণে এরিকোর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন করেন ইমরান। এই আবেদনে বড় মেয়েকে দেশে নিয়ে এসে যাতে অবিলম্বে এরিকো ব্যক্তিগতভাবে আদালতে উপস্থিত হন, সে বিষয়ে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। এরিকো ফ্লাইটে ওঠার আগে আদালতের আদেশ অভিবাসন পুলিশকে দেখানো হয়। আদালতের আদেশ সত্ত্বেও (স্থিতাবস্থা) অভিবাসন পুলিশ কীভাবে এরিকোকে যেতে দিল, সে বিষয়ে অনুসন্ধানের নির্দেশনাও চাওয়া হয়েছে আবেদনে। চেম্বার আদালত আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য ২১ এপ্রিল দিন রেখেছেন।’

আরও পড়ুন

এরিকোর আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির প্রথম আলোকে বলেন, ‘১৯ এপ্রিল বাংলাদেশে ফেরার কথা জানিয়েছেন এরিকো। তাঁর করা আবেদন (লিভ টু আপিল) শুনানির জন্য ২১ এপ্রিল দিন ধার্য রয়েছে। এই লিভ টু আপিলের সঙ্গে ইমরানের করা লিভ টু আপিল ও আদালত অবমাননার আবেদন একসঙ্গে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য ২১ এপ্রিল দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। স্থিতাবস্থার আদেশ অকার্যকর বলে উল্লেখ করেছেন আদালত।’  

দুই শিশুর হেফাজত নিয়ে বিচারিক আদালতের দেওয়া সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে শিশুদের বাবার করা পারিবারিক আপিল নামঞ্জুর করে গত বছরের ১২ জুলাই রায় দেন ঢাকার জেলা জজ আদালত। এই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট আবেদন (সিভিল রিভিশন) করেন তাদের বাবা। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত বছরের ২৩ জুলাই হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। রুল আংশিক চূড়ান্ত ঘোষণা করে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি রায় দেন হাইকোর্ট।  

হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়, উভয় পক্ষেরই (শিশুদের বাবা ও মা) সন্তানদের দেখার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। দুই সন্তানের সঙ্গে মা-বাবা দেখা করতে পারবেন। আর এটি করতে ইমরান শরীফ এবং এরিকো নাকানোর একে অপরকে অনুমতি দেওয়া দায়িত্ব।

আরও পড়ুন