‘বিদ্যুতের কথা বলে লাভ নেই, এই আসে এই যায়’

লোডশেডিংয়ের কারণে ব্যবসা কমে গেছে আতিকুর রহমানের। চট্টগ্রাম, ২৩ আগস্ট
ছবি: প্রথম আলো

‘কারেন্টের (বিদ্যুতের) কথা বলে আর লাভ নেই। দিনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৮ ঘণ্টাই থাকে না। এই আসে, এই যায়। কাজই তো করতে পারি না। কারেন্ট না থাকলে ব্যবসাও বন্ধ। তারপরও দোকান খুলে বসে আছি। কী করব আর।’

ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে এভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেন আতিকুর রহমান। চট্টগ্রাম নগরের শহীদ সাইফুদ্দিন খালেদ সড়কের আসকার দিঘির পাড়ে তাঁর স্টেশনারি দোকান। ফটোকপি থেকে তাঁর বেশি আয় হয়। কিন্তু লোডশেডিংয়ের কারণে ফটোকপি বলতে গেলে বন্ধ হয়ে গেছে। আজ বুধবার বেলা দেড়টার দিকে কথা হয় আতিকুরের সঙ্গে।

এ সময় বিদ্যুতের ভোগান্তি নিয়ে আতিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বেশ কয়েক দিন ধরে লোডশেডিং চলছে। মাঝখানে যখন ভারী বৃষ্টি হয়েছিল, তখনো বিদ্যুৎ থাকত না। এরপর তো গরম পড়া শুরু হয়। আর গরম পড়লে যা হয়, এখন তা হচ্ছে। মানে, বিদ্যুৎ আসছে আর যাচ্ছে। তাঁরা ভাষ্য, ‘দিনের বেলায় চার থেকে পাঁচবার যায়। আগে প্রতিদিন ৫০০ কপি ফটোকপি করা যেত, অথচ এখন পারি না। আবার ভোল্টেজ ওঠানামার কারণে ফটোকপি মেশিনেও ত্রুটি দেখা দেয়।’

বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এক সপ্তাহ ধরে চট্টগ্রামে লোডশেডিং বেড়েছে। এলাকাভেদে দিনে ছয় থেকে আটবার পর্যন্ত লোডশেডিং হচ্ছে। দিনে তিন থেকে চার ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকছে না।

চলতি মাসের প্রথম দুই সপ্তাহ ঝড়-বৃষ্টির কারণে বিদ্যুৎ নিয়ে তুলনামূলকভাবে ভোগান্তি কম ছিল বলে জানান নগরবাসী। কিন্তু ঝড়-বৃষ্টির দাপট কমতেই লোডশেডিংয়ের ভোগান্তি ফিরে এসেছে।

বিদ্যুৎ উৎপাদনের সুফল মিলছে না
সম্প্রতি টানা ভারী বৃষ্টির কারণে কাপ্তাই হ্রদে পানি বেড়েছে। এতে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎকেন্দ্রে এখন সর্বোচ্চ মাত্রায় বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। আড়াই শ মেগাওয়াট সক্ষমতার এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে এখন দিনে ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রেও। সর্বনিম্ন দেড় শ থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে চার শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে এই কেন্দ্র থেকে।

বর্তমানে চট্টগ্রাম অঞ্চলের জন্য দিনের বেলায় ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা থাকে। সন্ধ্যার পর চাহিদা বেড়ে দেড় হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত পৌঁছায়।

চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) আওতাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে এখন দেড় হাজার থেকে ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে, যা সরবরাহ করা হচ্ছে জাতীয় গ্রিডে। আর জাতীয় গ্রিড থেকে চট্টগ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট।

গতকাল মঙ্গলবার পিডিবির চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে জাতীয় গ্রিডে ১ হাজার ৬৪১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে। ওই দিন এ অঞ্চলে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১ হাজার ৩২৬ মেগাওয়াট। চাহিদার বিপরীতে দিনের বেলায় ১ হাজার ১৮৬ মেগাওয়াট পাওয়া গেছে; অর্থাৎ ঘাটতি ছিল ১৪০ মেগাওয়াট।

নগরের চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার বাসিন্দা স্বপন ইসলাম নামের এক চাকরিজীবী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বৃষ্টির সময়ও বিদ্যুৎ থাকে না। গরমের সময়ও থাকে না। কখন যে থাকে, সেটাই ভাবনার বিষয়। দিনের বেলায় বাইরে থাকেন। কিন্তু রাতে বাসায় এলে লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণায় ভুগতে হয়। রাতে একবার বিদ্যুৎ গেলে এক-দেড় ঘণ্টায়ও আসে না। এর মধ্যে মশার উৎপাত তো আছে। ডেঙ্গুর ভয়ে মশারির বাইরেও যেতে ইচ্ছা করে না।

কাজীর দেউড়ি এলাকার একটি বহুতল ভবনের তত্ত্বাবধায়ক নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যুৎ নিয়ে খুব যন্ত্রণায় আছেন। কখন যায়, কখন আসে, তার কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই। গতকাল তো সাত থেকে আটবার গেছে। বিকল্প হিসেবে জেনারেটর চালু রাখতে হয়। তা-ও মাঝেমধ্যে টানা জেনারেটর চালু রেখে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।

লোডশেডিংয়ে ভোগান্তির কথা জানিয়ে নগরের বাকলিয়ার আফগান মসজিদ এলাকার বাসিন্দা আসিফ আহমেদ বলেন, ‘সারা দিন অফিসের কাজকর্মে বাইরে ব্যস্ত থাকি। রাতে অফিস শেষে বাসায় গিয়ে বিশ্রাম নেওয়ার টাইমে লোডশেডিং হয়। কয়েক দিন ধরে রাত ১২টা, ১টা, ২টার সময়ও লোডশেডিং হচ্ছে। ঘুমাতে কষ্ট হচ্ছে।’  

জানতে চাইলে পিডিবি চট্টগ্রাম অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী অশোক কুমার চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, জ্বালানিসংকটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতি রয়েছে। এ জন্য জাতীয় গ্রিড থেকে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। দিনে এক থেকে দেড় মেগাওয়াট ঘাটতি থাকছে। তবে কয়েক দিনের মধ্যে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ কমতে পারে।

আরও পড়ুন